কমবেশি সবাই চিনাবাদাম খেতে পছন্দ করেন। বাদাম খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি ভালো। তবে অনেকেই বিশ্বাস করেন যে গাছের বাদাম খেলে ওজন বাড়ে। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। অন্যদিকে আখরোট খাওয়ার নিয়ম মেনে চললে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। ডায়েটারদের জন্য বাদাম একটি আদর্শ খাবার। আজকে আমরা কাঠ বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
কাঠ বাদামের উপকারিতা
এই বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, কপার, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রন রয়েছে। বলা যায় এই বাদাম পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমাদের আজকের পোস্টটি গাছের বাদামের উপকারিতা এবং খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে যা আপনাকে সত্যিই অবাক করবে।
বাদাম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
চিনাবাদাম প্রায় নিখুঁতভাবে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। আমাদের মধ্যে যাদের ইতিমধ্যেই ডায়াবেটিস আছে তারা প্রায়ই দেখতে পান যে খাবারের পরে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। তবে আপনি যদি খাবারের পরে আখরোট খেতে পারেন তবে এটি আপনার ইনসুলিনের মাত্রা দ্রুত কমাতে সাহায্য করবে।
বাদাম হার্টকে সুস্থ রাখে
নিয়মিত রাতে বাদাম ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেলে আপনার হার্ট অনেক সুস্থ থাকবে। চিনাবাদামে উপস্থিত অতিরিক্ত প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম আপনার হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন ই রয়েছে যা আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। আখরোটে থাকা ম্যাগনেসিয়াম হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করে। তাই গবেষকদের মতে, নিয়মিত আখরোট খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৫০% কমে যায়।
►► ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা
►► ডায়াবেটিস কমানোর উপায় কি?
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
চিনাবাদাম ফসফরাস সমৃদ্ধ। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ফসফরাসের অনেক ভূমিকা রয়েছে। আখরোটে সোডিয়ামও থাকে, যা আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
আপনি যদি আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বাদাম অন্তর্ভুক্ত করেন তবে আপনার শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। চিনাবাদামে এমন উপাদান রয়েছে যা আপনার ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়, যার ফলে আপনার খারাপ কোলেস্টেরল কম হয়। এটিতে উচ্চ মাত্রার মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ওমেগা -৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা আপনার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আখরোটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হল এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যা বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের সবার প্রয়োজন। বাদাম একটি সমৃদ্ধ ক্ষারীয় খাবার। এটি আপনার ইমিউন সিস্টেমকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। বাদামে থাকা ভিটামিন-ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ান
পুষ্টিগুণে ভরপুর এই বাদাম আপনার মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে পারে। আখরোটে থাকা বোফ্লাভিন এবং এল-কার্নিটাইন আপনার মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই দুটি উপাদান আপনাকে সবসময় ডিমেনশিয়া থেকে রক্ষা করবে। বাড়ন্ত শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য চিনাবাদাম একটি আদর্শ খাবার।
কাজু বাদামের উপাদান সমুহ:
- ক্যালরি – ১৫৭ গ্রাম;
- প্রোটিন – ৫ গ্রাম;
- ফ্যাট – ১২ গ্রাম;
- কপার – ৫৭% (প্রতিদিনের চাহিদার);
- আয়রন – ১১% ( প্রতিদিনের চাহিদার);
- ফাইবার – ১ গ্রাম;
- কার্বোহাইড্রেটস – ৯ গ্রাম।
- এছাড়া ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সেলেনিয়াম ইত্যাদিও আছে।
কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়
আমরা যখন কাঠ বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে কথা বলি, তখন অসুবিধাটি মাথায় আসে। চিনাবাদামের ফাইবার শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এই ফাইবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর খুব স্বাভাবিকভাবেই নিয়মিত ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ফলে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে তারা দ্রুত এর থেকে মুক্তি পাবেন।
হাড় ও দাঁত সুস্থ রাখে
আখরোটে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ফসফরাস এবং মিনারেল আপনার হাড় ও দাঁতকে সুস্থ রাখে। ফসফরাস শুধু দাঁত ও হাড়কে শক্তিশালী করে না, অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করে। বার্ধক্যজনিত কারণে হাড়ের ক্ষয় রোধেও ফসফরাস খুবই কার্যকরী।
নিয়মিত বাদাম খেলে শরীরে যা ঘটে-
- উপকারী কোলেস্টেরল পাওয়া যায় বাদামে।
- এতে থাকে সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন ও ইন্টারলিউকিন। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- ফাইবার থাকায় বাদাম খেলে হজমের সমস্যায়ও দূর হয়।
- বাদাম খেলে হৃদপিণ্ড সক্রিয় থাকে।
- নিয়মিত বাদাম খেলে রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে। এমনকি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে বাদাম।
- বাদাম খেলে হাড় ও মাংসপেশি মজবুত হয়।
- বাদামে থাকা প্রাকৃতিক তেল ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
- বাদাম খেলে দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ হয়।
- স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বাদামের উপকারিতা প্রচুর।
- অতিরিক্ত ওজন কমাতেও সাহায্য করে বাদাম।
(সূত্র: জাগো নিউজ২৪)
ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
চিনাবাদাম ভাল চর্বি সমৃদ্ধ। বাদাম খাওয়ার পর দেখবেন আপনার ক্ষুধা কমে গেছে। এ কারণে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। ফলে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্যালরি জমা হয়ে ওজন বাড়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। চিনাবাদাম মেটাবলিক রেট বাড়িয়ে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। আরো লাইফস্টাইল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
বাদাম খাওয়ার নিয়ম
- ১. হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে ভেজানো আমন্ড। প্রয়োজনীয় এনজ়াইম নিঃসরণে সাহায্য করে।
- ২. ওজন কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আমন্ডে উপস্থিত মোনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট খিদে কমায় ও পেট ভরিয়ে রাখে।
- ৩. হৃদয় ভালো রাখে আমন্ড। ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল (লো ডেন্সিটি লিপোপ্রোটিন) নিয়ন্ত্রণ করে।
- ৪. ভেজানো আমন্ডে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস্ শরীরের ফোলাভাব কমায় ও অকালপক্কতা নিয়ন্ত্রণ করে।
- ৫. ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে ভোজানো আমন্ডে উপস্থিত ভিটামিন B17।
- ৬. এই বাদামে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েড শরীরে টিউমার হতে দেয় না।
- ৭. রোজ সকালে খালি পেটে ভেজানো আমন্ড খেলে শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে।
- ৮. সন্তানসম্ভবাদের নিয়ম করে ভেজানো আমন্ড খেতে পরামর্শ দেন স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞরা। এতে উপস্থিত ফলিক অ্যাসিড জন্মের সময় শিশুর খুঁত দূর করে।
(সূত্র: আমার সংবাদ)
বাদাম অনেকভাবেই খাওয়া যায় তবে বেশীরভাগই দেখা যায় রান্নার মসলা হিসেবে খেতে। রান্না করে বা রান্নার মসলা হিসেবে যদি এটিকে খেতে হয় তবে রান্নার আগে ৩-৪ ঘন্টা পর্যন্ত বাদামকে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তাহলেই বাদামর ভাল গুনাগুন পাওয়া যাবে। একগ্লাস গরম পানিতে পরিমান মতো বাদাম ১০-১৫ ভিজিয়ে রেখে থিতিয়ে নিন। এরপর মধু ও লেবু মিশিয়ে উক্ত মিশ্রনটি খেতে পারেন। এতে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।
সবচেয়ে ভাল হয় এক গ্লাস পানিতে পরিমান মতো বাদামর গুড়া ভাল করে মিক্স করে রেখে দিন। তবে ভুলেও ফ্রীজে রাখবেন না। এরপর সকালে খালি পেটে ছাকুনি দিয়ে ছেকে তরলটুকু খেয়ে নিন। মনে রাখবেন বাদাম আপনি যেভাবেই খান তা কার্যকর হতে বা বাদাম উপকারিতা পেতে কিছুদিন সময় লাগতে পারে। অর্থাৎ এটি দৈনিক থেকে হবে। খুব ভাল হয় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যদি এটিকে লিপিবদ্ধ করে নেয়া যায়।
খালি পেটে চিনাবাদাম খাওয়ার উপকারিতা
বাড়তি ওজন কমাতে চিনাবাদাম খুবই সহায়ক। প্রতিদিন ১০-১২ টুকরো বাদাম রাতে এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন বাদামের আশ্চর্যজনক উপকারিতা। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ১৫ মিনিট স্ট্রেচ বা ওয়ার্ম আপ করে বাদাম খান।
আপনি চাইলে যে জলে বাদাম ভিজিয়ে রেখেছিলেন তাও খেতে পারেন। প্রতিদিন এভাবে খেলে আপনার হজম শক্তি বাড়বে, ক্ষুধা কমবে, ওজন কমাতে সাহায্য করবে, হার্ট সুস্থ থাকবে, ত্বক ও চুল সুস্থ থাকবে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে, খারাপ কোলেস্টেরল কমবে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে, শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ খুব সুন্দরভাবে বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আরও আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন।