বন্ধুরা আজকে আমরা জানবো জন্ম নিবন্ধন অনলাইন আবেদন সম্পর্কে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ অনুসারে কোন শিশু জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।
তবে কোন সমস্যার কারনে আপনি যদি আপনার শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করতে না পারেন তবে সেক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ থাকবে আপনার শিশুর বয়স ৫ বছর হওয়ার পূর্বেই জন্ম নিবন্ধন (Birth Certificate) করিয়ে নিবেন। অন্যথায় যদি ৫ বছর অতিবাহিত হলে অতিরিক্ত ডকুমেন্ট এবং ঝামেলা পোহাতে হবে।
০ থেকে ০৫ বছরের শিশুর জন্ম নিবন্ধন করতে যা লাগবে
১। হাসপাতাল বা ক্লিনিক এর ছাড়পত্র অথবা সার্টিফিকেট (যদি আপনার শিশু হাসপাতাল বা ক্লিনিকে জন্মগ্রহণ করে)
২। যদি আপনার শিশু হাসপাতাল বা ক্লিনিকে জন্মগ্রহন না করে থাকে সে ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহকারী হিসাবে নিবন্ধক কর্তক নির্দিষ্ট কোন এনজিও কর্মীর প্রত্যয়নপত্র।
৩। যদি সেটিও সম্ভব না হয় তবে আপনার শিশুর টিকা কার্ড
৪। শিশুর পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
০৫ বছর বা তার অধিক বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন করতে যা লাগবে
১। একজন MBBS ডাক্তার কর্তৃক প্রত্যয়ণ (শিশুর বয়স প্রমানের জন্য)
২। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড এর মেম্বার বা কাউন্সিল কর্তৃক প্রত্যয়ন (জন্মস্থান বা স্থায়ীভাবে বসবাসের স্থান প্রমানের জন্য)
৩। যদি উক্ত কাগজপত্র না থাকে তাহলে বয়স ও জন্মস্থান প্রমানের জন্য আপনার শিশুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক প্রত্যয়ন
৪। জন্ম তারিখ ও ঠিকান প্রমানের জন্য জন্ম সংক্রান্ত যেকোন দলিল
৫। এনজিও কর্মীর প্রত্যয়ন (তবে তথ্য সংগ্রহকারী হিসাবে নিবন্ধক কর্তৃক নির্দিষ্ট করা কোন এনজিও কর্মী হতে হবে)
৬। পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
নতুন জন্ম নিবন্ধন অনলাইন আবেদন থেকে শুরু করে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন, তথ্য যাচাই, জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি ডাউনলোড সবই আপনি ঘরে বসে অনলাইনে করতে পারবেন। আপনি চাইলে হাতে লিখে ফরম পূরণ করে সেই ফরমটি ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিয়েও জন্ম নিবন্ধন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে এখানে ক্লিক করে ফরমটি সংগ্রহ করতে হবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আপনি জন্ম নিবন্ধন অনলাইন আবেদন করবেন।
►► পুলিশ ক্লিয়ারেন্স কিভাবে করব
►► অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড বের করুন
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন আবেদন করবেন যেভাবে
প্রথমত আপনি যেকোন স্মার্ট ডিভাইজ অর্থাৎ মোবাইল/কম্পিউটার/ল্যাপটপ দিয়ে এখানে ক্লিক করবেন। এরপর নিচের ছবিটি লক্ষ করুন,
জন্ম নিবন্ধন সনদ আপনি আপনার কোন ঠিকানায় নিতে চান তার জন্য ছবিতে প্রদত্ত ০৩টি অপশন থেকে যেকোন একটি অপশন সিলেক্ট করুন এবং পরবর্তী বাটনটিতে ক্লিক করুন। এবার নিচে প্রদত্ত ছবিটির মত নতুন একটি ফরম আসবে
ফরমের সকল তথ্য সমূহ সঠিকভাবে পূরণ করুন এবং পরবর্তী বাটনটিতে ক্লিক করুন। এরপর নিচে দেওয়া ছবির মত নতুন একটি ফরম আসবে।
ফরমটি যথাযথভাবে সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করুন। এখানে আপনাকে নিবন্ধিত শিশুর পিতা-মাতার তথ্য দিতে হবে। সেক্ষেত্রে পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিতে হবে। ফরমটি সঠিকভাবে পূরন করে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
এরপর নতুন পেইজে দুইটি অপশন দেখবেন
- আপনি কি নিম্ন লিখিত কোন ঠিকানা স্থায়ী ঠিকানা হিসাবে ব্যবহার করতে চান?
- এখানে কোনোটিই নয়
আপনি কোনটিই নয় অপশনটিতে ক্লিক করবেন। এরপর পরবর্তী অপশনে আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা যদি একই হয় তবে (জন্মস্থান এর ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা একই) অপশনটিতে ক্লিক করুন এবং পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
এরপর আপনাকে আবারো নতুন একটি পেজে নিয়ে আসা হবে। এখানে আপনি যদি আবেদনকারী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার মোবাইল নাম্বার এবং ই-মেইল Address দিবেন। তবে আবেদনকারী যদি ১৮ বছরের নিচে কেউ হয়ে থাকে তাহলে আবেদনকারী হিসাবে তার জন্ম নিবন্ধন নাম্বার, মোবাইল নাম্বার দিতে হবে। এগুলো দেওয়ার পরে আপনি পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
পরবর্তী বাটনে ক্লিক করার পর আপনি প্রথকে এখন অবদি যত তথ্য দিয়েছেন সকল তথ্য দেখানো হবে। যদি সকল তথ্য সঠিক থাকে তাহলে সাবিমিট বাটনে ক্লিক করুন। সাবমিট বাটনে ক্লিক করার পর আপনি আবেদনকারী হিসাবে যার মোবাইল নাম্বার দিয়েছেন সেই নাম্বারে একটি SMS পাবেন এবং উক্ত SMS এ আপনার আবেদনপত্রের একটি নাম্বার দেখতে পাবেন।
প্রদত্ত নাম্বারটি সংগ্রহ করে রাখবেন। আপনার ফরমটি সঠিকভাবে সাবমিট হয়ে গেলে আপনি প্রিন্ট করার অপশন পাবেন। আপনি আবেদনটি প্রিন্ট করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা অথবা সিটি কর্পোরেশন অফিসে জমা দিবেন এবং আবেদনের সাথে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সংযুক্ত করে দিবেন।
জন্ম নিবন্ধন আবেদনটির বর্তমান অবস্থা জানার উপায়
এরপর আপনার জন্ম নিবন্ধনের আবেদনটি কি অবস্থায় রয়েছে তা অনলাইনে চেক করার জন্য আপনার নিকট থাকা যেকোন স্মার্ট ডিভাইজ (মোবাইল/ল্যাপটপ/কম্পিউটার) থেকে আপনার ইচ্ছেমত একটি ব্রাউজান OPEN করবেন এবং এখানে প্রবেশ করবেন। ছবিতে প্রদত্ত ফরমটি দেখতে পাবেন।
ফরমে চাহিত তথ্যগুলো যথাযথভাবে পূরণ করবেন এবং দেখুন বাটনে ক্লিক করবেন।
প্রথমে যে অপশনটি দেখবেন “আবেদন পত্রের ধরন” এখানে আরো অনেকগুলো অপশন থাকবে। আপনি এখান থেকে আপনার প্রয়োজনীয় অপশনটি সিলেক্ট করবেন।
দ্বিতীয়ত যে বক্সটি পাবেন “অ্যাপ্লিকেশন আইডি” এখানে আপনি আবেদন সাবমিট করার পর যে আইডি নাম্বারটি পেয়েছিলেন সেই আইডি নাম্বারটি দিয়ে দিবেন।
তৃতীয়ত এবং সর্বশেষ বক্সটিতে পাবেন “জন্ম তারিখ” এখানে আপনি যে জন্ম নিবন্ধনটির বর্তমান অবস্থা যাচাই করবেন সেই জন্ম নিবন্ধনের জন্ম তারিখটি দিয়ে দিবেন।
সর্বশেষ দেখুন বাটনে ক্লিক করবেন। দেখুন বাটনে ক্লিক করার পর আপনার আবেদনকৃত জন্ম নিবন্ধনটির বর্তমানে কি অবস্থায় আছে তা দেখতে পারবেন।
►► মিথ্যা মামলা থেকে বাচার উপায়
►► এসএসসি পরীক্ষার রুটিন ২০২২
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন আবেদন সংক্রন্ত প্রশ্ন ও উত্তর
১। প্রশ্ন: জন্ম নিবন্ধন কি একাধিকবার করা যাবে?
উত্তরঃ না, একাধিকবার জন্ম নিবন্ধন করা যাবে না।
২। প্রশ্ন: পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন ছাড়া কি জন্ম নিবন্ধন আবেদন করা যাবে?
উত্তরঃ আপনার জন্ম যদি ২০০২ সালের পূর্বে হয় তবে পারবেন, তবে ২০২২ সালের আপডেট অনুযায়ী ২০০১ বা তার পরে জন্মগ্রহনকারী সকলের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক
৩। প্রশ্ন: জন্ম নিবন্ধন আবেদন কোথায় করতে হয়?
উত্তরঃ ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন অফিসে।
৪। প্রশ্ন: জন্ম নিবন্ধন তৈরির পর কোন ভুল সংশোধন করা যাবে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ করা যাবে, আপনার কাঙ্খিত ভুল তথ্যটি পুনরায় সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
৫। প্রশ্ন: জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কি লাগবে?
উত্তরঃআপনি যে বিষয়টি সংশোধন করবেন সে বিষয়ের নির্ভরযোগ্য ডকুমেন্টস।
৬। প্রশ্ন: সবার জন্য জন্ম নিবন্ধন কি বাধ্যতামূলক?
উত্তরঃ হ্যাঁ সবার জন্য জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক।
৭। প্রশ্ন: জমজ সন্তানের জন্ম নিবন্ধন কীভাবে করা হবে?
উত্তরঃ জমজ সন্তানের জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রথমে একের পর এক আবেদন করে পরে নিবন্ধন করতে হবে।
৮। প্রশ্ন: বাংলা ও ইংরেজী সনদ একসাথে প্রদান করা যাবে কিনা?
উত্তরঃ বাংলা ও ইংরেজী সনদ একসাথে প্রদান করা যাবে। প্রয়োজনে কাগজের একপিঠে বাংলা ও অপরপিঠে ইংরেজী সনদ প্রদান করা যাবে।
৯। প্রশ্ন: বিবাহ বিচ্ছেদ বা পিতা-মাতার একজন অপ্রাপ্য/নিখোঁজ হলে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন কীভাবে হবে?
উত্তরঃ এইরূপ ক্ষেত্রে পিতা-মাতার একজনের তথ্য দিয়ে, অপরজনের শুধু নাম উল্লেখক্রমে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করা যাবে।
১০। প্রশ্ন: নিবন্ধনাধীন ব্যক্তিকে কি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় সনদ দিতে হবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ! বাধ্যতামূলকভাবে উভয় ভাষায় সনদ দিতে হবে।