উত্তরবঙ্গের একটি কম আলোচিত জেলা ঠাকুরগাঁও। কৃষিনির্ভর এই জেলাটি থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ টন গম উৎপাদন হয়। দেশের গমের চাহিদার বিশাল একটি অংশ ঠাকুরগাঁও জেলা নিজেই পূরণ করে থাকে। এছাড়া ঠাকুরগাঁও জেলাতেই কয়েকটি জনপ্রিয় জাতের আম উৎপাদন হয়। ঠাকুরগাঁও জেলা কেন বিখ্যাত জানতে চাইলে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ুন।
ঠাকুরগাঁও জেলার ১০টি দর্শনীয় স্থান:
- বাংলা গড়
- ঢোলহাট মন্দির
- হরিপুর রাজবাড়ী
- কূপ ও শিলালিপি
- অপরাজেয় ৭১ ভাস্কর্য
- পীর শাহ নেকমরদের মাজার
- শালবাড়ি মসজিদ ও ইমামবাড়া
- প্রাচীন রাজধানীর চিহ্ন নেকমরদ
- জগদল বিরেন্দ্রনাথ চৌধুরীর রাজবাড়ী
►► সিলেট কিসের জন্য বিখ্যাত?
►► রাজশাহী কিসের জন্য বিখ্যাত?
ঠাকুরগাঁও জেলা
ঠাকুরগাঁও জেলা স্বাধীনতার পূর্বে বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার একটি মহাকুমা হিসেবে অন্তর্গত ছিল। কিন্তু ১৯৮৪ সালে যখন বাংলাদেশের সকল মহাকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হলে প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ জেলা হওয়ার স্বাদ পায় ঠাকুরগাঁও জেলা। বর্তমানে এটি রংপুর বিভাগের একটি প্রশাসনিক জেলা হিসেবে স্বীকৃত। ঠাকুরগাঁও জেলায় উপজেলার সংখ্যা পাঁচটি এবং থানা সংখ্যাও পাঁচটি। কিন্তু ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলায় থানা সংখ্যাই কিনা তিনটি!
এটি একটি জেলা একটি সীমান্ত জেলা। জেলাটির পশ্চিম দিকে ভারতের বিশাল সীমান্ত রয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলার উত্তরে পঞ্চগড় জেলা, পূর্ব দিকে নীলফামারী জেলা এবং দক্ষিণে দিনাজপুর জেলা অবস্থিত। এই ছেলেটির আয়তন ১,৮০০ বর্গ কিলোমিটার এবং এখানে ১৪ লক্ষ মানুষ বসবাস করে। কয়েক বছর আগেই ঠাকুরগাঁও জেলা অন্যান্য জেলার তুলনায় পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে এটি আধুনিক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা কেন বিখ্যাত?
বিখ্যাত ঠাকুরগাঁও উত্তরবঙ্গের একটি প্রসিদ্ধ জেলা। উত্তরবঙ্গ আম, লিচু, কাঠাল সহ অন্যান্য নানা জাতের ফল উৎপাদন করার উপযুক্ত স্থান। ঠাকুরগাঁও কিন্তু ব্যতিক্রম নয়। ঠাকুরগাঁও জেলাতে বিভিন্ন প্রজাতির আম উৎপাদন হয়। কিন্তু ঠাকুরগাঁও জেলা মূলত পরিচিত সূর্যপুরী আমের জন্য। বাংলাদেশে একমাত্র ঠাকুরগাঁও জেলাতেই বাণিজ্যিকভাবে সূর্যপুরী আম উৎপাদন করা হয়। সূর্যপুরী আম আকারে মোটেও বড় নয়, তবে কিছুটা লম্বাটে। এই আম খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং আমের ভেতরে বিজের আকার তুলনামূলকভাবে ছোট।
ঠাকুরগাঁও জেলা কেন বিখ্যাত প্রশ্নটির উত্তর হচ্ছে: ঠাকুরগাঁও জেলা সূর্যপুরী আমের জন্য বিখ্যাত। অনেকেই সূর্যপুরী আমের জন্যই ঠাকুরগাঁও জেলাকে চিনে থাকেন। তাই সূর্যপুরী আমকে ঠাকুরগাঁও জেলার ব্র্যান্ডিং নাম হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। এমনকি ঠাকুরগাঁও জেলার জেলা প্রশাসকের বাসভবনের নামও কিন্তু সূর্যপুরী। আপনি কি জানতেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আম গাছ আর কোথাও নয়, বরং ঠাকুরগাঁও জেলাতেই অবস্থিত। দুইশ বছর পুরনো এই গাছটি ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী নামক উপজেলায় অবস্থিত। ৩ বিঘা জমির উপর বিশাল এলাকা নিয়ে এই গাছটি গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এই গাছটি দেখতে আসেন। বর্তমানে এটি একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে।
বিখ্যাত ঠাকুরগাঁও জেলার অর্থনীতি সম্পূর্ণ কৃষি নির্ভর। এই জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষি কাজ করে থাকে। এই জেলায় বড় বড় কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান না থাকলেও বর্তমানে কিছু শিল্পপতির উদ্যোগে কলকারখানাও নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে ঠাকুরগাঁও জেলাবাসী কৃষিকাজের উপরেই নির্ভর থাকতে চায়। ঠাকুরগাঁও জেলায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি গম উৎপাদন করা হয়। যার কারণে ঠাকুরগাঁও জেলাকে বাংলাদেশের রুটির ঝুড়ি বলা হয়। ঠাকুরগাঁও জেলা কেন বিখ্যাত প্রশ্নটির একটি বিকল্প উত্তর হচ্ছে গমের জন্য ঠাকুরগা জেলা বিখ্যাত।
ঠাকুরগাঁও জেলার দর্শনীয় স্থান
অনেক সময় চাকরি পরীক্ষায় প্রশ্ন আসতে পারে: বাংলাদেশের কোন জেলাকে রুটির ঝুড়ি বলা হয়? এক্ষেত্রে অনেকেই উত্তর ভুল করে নওগাঁ দাগিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রশ্নটির সঠিক উত্তর হবে ঠাকুরগাঁও জেলা। কেননা পূর্বের নওগাঁ জেলাতে গম উৎপাদন সর্বাধিক হলেও বর্তমান হিসাব অনুযায়ী ঠাকুরগাঁও জেলাতে সবচেয়ে বেশি গম উৎপাদন করা হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও জেলা দেশে গমের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশে গম রপ্তানি করেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ঠাকুরগাঁও জেলায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের জন্য জাতীয় সংসদে দিল পাশ করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের অদূরে ঠাকুরগাঁও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি নির্মাণ হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টি চালুর পর উত্তরবঙ্গ শিক্ষাক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই সাথে এই জেলায় সৃষ্টি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থান।
ঠাকুরগাঁও জেলাতেই রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম একটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দরটি ১৯৫০ সালে প্রায় ৬০০ একর জমির উপর স্থাপন করা হয়। কিন্তু স্বাধীনতার পর আশির দশকে ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি চালু হলে যাত্রীর অভাব ও অর্থ সংকটের কারণে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশ সরকার সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করার পর ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু করার আশা ব্যক্ত করেছে।
►► পঞ্চগড় জেলা কেন বিখ্যাত?
►► পটুয়াখালী জেলা কেন বিখ্যাত?
ঠাকুরগাঁও জেলা নিয়ে প্রশ্ন উত্তর
১. প্রশ্ন: ঠাকুরগাঁও জেলা কেন বিখ্যাত?
উত্তর’ সূর্যপুরী আমের জন্য
২. প্রশ্ন: কোন জেলাকে বাংলাদেশের রুটির ঝুড়ি বলা হয়?
উত্তর: ঠাকুরগাঁও জেলাকে
৩. প্রশ্ন: ঠাকুরগাঁও কোন জেলাতে সবচেয়ে বেশি গম উৎপাদন করা হয়?
উত্তর: ঠাকুরগাঁও জেলায়
৪. প্রশ্ন: বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আম গাছটি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায়