ডায়েরির রহস্য – আমার নাম আবির আহমেদ। এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী।আমাদের বাসা উত্তরা এলাকায়। আমাদের এই বাসায় আমি, আমার বাবা-মা আর একটা কাকা থাকি।
আমার বাবা একটা সরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন, মা গৃহীনি, আর আমার কাকা তিনি পেশায় একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ। ছোটবেলা থেকেই কাকার সাথে বিভিন্ন জায়গায় যেতাম। বিভিন্ন কেসের ইনভেস্টিকেশনও করেছি।
►► আরো দেখো: Paragraph: An Ideal Teacher (বাংলা অর্থসহ)
►► আরো দেখো: Paragraph: A Street Hawker (বাংলা অর্থসহ)
সেদিন আমি আমার ঘরে বিকালে বসে আছিলাম। হঠাৎ আমাদের বাসার কলিং বেলে শব্দ হলো।
আমাদের বাসার কাজে খালা রকেয়া দরজাটা খুললো। আমি গিয়ে দেখলাম একজন মধ্য বয়সী লোক দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।
খালাকে জিজ্ঞাস করলো মিস্টার মিশাল আহমেদ আছেন? আমি সামনে এগিয়ে বললাম আছে। আপনি কে?
আমার কাকাও চলে এসেছে।
কাকা- আরে মিস্টার হাসান প্লিজ আসুন। কাকা মিস্টার হাসানকে নিয়ে ডায়িং রুমে বসলো। আমাকে ও আসতে বলল আর খালাকে চা দিতে বলল।
কাকা- মিস্টার হাসান! বলুন আপনার আমার সাথে এত জরুরি ভাবে কেন দেখা করতে চাইলেন? আর এমন কি ব্যাপার যে সেই বরিশাল থেকে আপনি আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন।
মিস্টার হাসান- আপনি তো জানেনই আমার দেশে এবং দেশের বাহিরে অনেক ব্যবসা আছে।
কাকা- হ্যাঁ। আপনি অনেক অল্প বয়স কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। এটা আমিসহ দেশে সব মানুষরাই জানে।
মিস্টার হাসান- হ্যাঁ! (চেহারায় হতাশ ভাব নিয়ে) এই টাকা-পসায় আমার ছেলের প্রাণ নিতে বসেছে।
কাকা- কি? আপনার কথার মানি বুঝলাম না। কথার মাঝেই খালা আমাদের চা নিয়ে এসেছে।
খালা- সাহেব আপনার ইচ্ছা মত চায়ে চিনি দিয়ে নিয়েন। আমরা সবাই আমাদের মত চা নিয়ে নিলাম। মিস্টার হাসানও চা নিলেন।
মিস্টার হাসান- মিস্টার মিশাল আসলে আমার একমাত্র ছেলে রাফিন। তাকে আজ দশ দিন ধরে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ওর সব বন্ধুর সাথে আমার কথা হয়েছে। কেউ ওর কোনো খোজ দিতে পারে নি। তাই আমি, আমি বাধ্য হয়ে আপনার কাছে এসেছি। আপনিই আমার ছেলে খুজে বাড় করতে পারবেন।
প্লিজ আপনি আমাকে সাহায্য করুণ।
ডায়েরির রহস্য
কাকা- আপনি পুলিশের কাছে যাননি?
মিস্টার হাসান- জি। গিয়ে ছিলাম ওরা বলেছে আমার ছেলেকে খুজে পেলে জানানো হবে। আজ দশ দিন হয়ে গেলো ওরা আমার ছেলের কোনো সন্ধান দিতে পারেনি।
কাকা- আপনার ছেলের সাথে শেষ কার এবং কোথায় কথা হয়ে ছিলো?
মিস্টার হাসান- সেদিন আমিই ওকে স্কুলে দিয়ে আসি। আমার গাড়ির ড্রাইভার ওকে স্কুল থেকে নিতে গিয়ে দেখে ও স্কুলে নাই।
কাকা- আমাকে একটা কথা বলুন তো আপনার কাছে কি কোনো মুক্তিপনের জন্য ফোন কল এসে ছিলো?
মিস্টার হাসান- না। এখন পযর্ন্ত এমন কোনো কল আমার কাছে আসেনি।
কাকা- আপনার ছেলের বসয় কত হবে?
মিস্টার হাসান- এই ধরুণ ১২ বছর। ও এই বছর ক্লাস সেভেনে পড়ে।
কাকা- আপনি কেউকে সন্দেহ করেন? যে আপনার ছেলেকে অপহরণ করতে পারে না।
মিস্টার হাসান- তেমন তো কেউকে করি না।
কাকা- আপনার সাথে কারো শত্রুতা আছে?
মিস্টার হাসান- আসলে ব্যবসায়ী ত্রেক্ষে তো অনেকের সাথেই ঝামেলা হয়। সে ক্ষেত্রে চিহ্নত করাটা একটু মুশকিল।
কাকা- হুম। বুঝলাম। এখন আমাকে কি করতে হবে?
মিস্টার হাসান- আপনি যদি আমার জেলায় একটু যেতেন। ওখানে গিয়ে আপনি যদি আমার ছেলেকে খুজে বাড় করতে পারেন।
প্লিজ না বলবেন না। এই কাজের জন্য আপনি আমার কাছ থেকে যত টাকা চান আমি দিবো।
কাকা- ঠিক আছে।
ডায়েরির রহস্য
মিস্টার হাসান- শুনে আমি অনেক খুশি হলাম। আমি আপনাকে অগ্রীম পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলাম এবং আপনার জন্য আমার একটি গাড়ি রেখে যাচ্ছি। ওটা করেই আপনি বরিশালে যাবেন।
কাকা- সে তো ঠিক আছে। কিন্তু এই কাজের জন্য আমার কিছু শর্ত আছে।
মিস্টার হাসান- নিশ্চয়ই। বলুন আপনার কি কি লাগবে?
কাকা- আমার সাথে আমার ভাইয়ের ছেলে আবির থাকবে। আর বাকিগুলো ওখানে গিয়ে বলবো।
মিস্টার হাসান- ও হ্যাঁ! এই কি আপনার ভাইয়ের ছেলে এসে একটুও পরিচয় হওয়া হয়নি। আমি তাকে সালাম দিলাম তিনিও হাসি মুখে সালামের উত্তর দিলেন।
মিস্টার হাসান- তাহলে আজ আমি আসি। আপনারা কবে যাবেন?
কাকা- ঠিক আছে। আমরা কাল সকালে বরিশালের উদ্দেশ্যে বের হবো।
লোকটি সেদিন বিকালে আমাদের বাসা থেকে বিদায় নেয়। কাকাও আমাকে বলে যা তুই গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নে। আজ রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়িস। কাল সকাল হলেই বরিশালের উদ্দেশ্যে বের হবো।
ডায়েরির রহস্য
সকাল আটটা আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।আমি তারাহুরা করে তৈরি হয়ে গেলাম। সকালের নাস্তা শেষ হতে না হতেই আমাদের বাসার নিচে গাড়ির আওয়াজ হলো। কাকার ফোন বেজে উঠলো।
কাকা আমাকে বলো আমাদের গাড়ি এসে গেছে। আমাদের বের হতে হবে। আমি মা-বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কাকার সাথে বের হলাম।
নিজে নেমেই দেখি আমাদের জন্য গাড়ি নিয়ে এক বৃদ্ধ অপেক্ষা করছে। লোকটি আমাদের দেখে বলো আপনারাই কি আমার সাহেবের বিশেষ অতিথি। কাকা উত্তরে মাতা নাড়িয়ে ‘হ্যাঁ’ বললেন।
আমরা কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে পড়লাম। গাড়িতে বসে বৃদ্ধ লোকটি সাথে আমাদের পরিচয় হয়ে গেলো।
আমি- আপনার নাম কি?
লোকটি- আমার নাম নুরুল ইসলাম।
কাকা- আচ্ছা আপনার সাহেবের ছেলে কেমন ছিলো?
নুরুল ইসলাম- ছোট সাহেবে অনেক ভালো ছেলে ছিলো। তাকে তো আমিই সবসময় স্কুল থেকে নিয়ে আসতাম। সত্যি কথা বলতে কি জানেন সাহেব!
মা-বাবা ভালোবাসা না পেলে অনেক ছেলেই নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের ছোট সাহেব অমন ছেলে হয়নি। ছোট সাহেব একদম মাটির মানুষ।
কাকা- আচ্ছা তোমাকে ছোট সাহেব নিখোজ হওয়ার আগে কি কোনো অস্বাভাবিক অভাচরণ লক্ষ্য করেছো?
নুরুল ইসলাম- হ্যাঁ বেশ কিছু দিন ধরে ছোট সাহেব একা একা থাকতো কারো সাথে বেশি কথা বলতো না।
ছোট সাহেব সবসময়ই হাসি-খুশি থাকতেন। কিন্তু নিখোজ হওয়ার চার দিন আগ থেকেই একলা তার নিজের ঘরে থাকতো।
খেলতেও যেত না।
ডায়েরির রহস্য
কাকা- তোমার ছোট সাহেব কোথায় খেলতে যেত?
নুরুল ইসলাম- আমাদের ফ্ল্যাটের সামনেই একটা খেলার মাঠ আছে। ওখানেই ছোট সাহেব তাকে বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করতো।
কাকা- ওওওওও। তুমি কখনো এ ব্যাপারে কিছু তোমার সাহেবকে কিছু বলো নি?
নুরুল ইসলাম- না। কারণ সাহেব তার কাজ নিয়েই সবসময় ব্যস্ত থাকতেন।
আমরা মাওয়া ফেরি ঘাট নামলাম। ফেরি ঘাটে আমি আর কাকা মেনে কিছু খাবার কিনলাম। প্রায় এক’শ গাড়ির পিছনে আমাদের গাড়ি।
প্রায় আড়াই ঘন্টা পর আমাদের গাড়ি ফেরিতে উঠলো। ফেরিতে বসে আমরা দুপুরের খাবার খেলাম। সাথে নুরুল মিয়াও।
আমরা পৌঁছালাম মিস্টার হাসানের ফ্ল্যাটে। মিস্টার হাসানের ফ্ল্যাটটি বরিশালের কাশিপুর বাজারের পাশেই।
আমরা আমাদের ঘরে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিলাম। সন্ধ্যায় কাকা আমাকে দিয়ে মিস্টার হাসানকে ডেকে পাঠালেন।
মিস্টার হাসান- আমাকে ডেকে পাঠিয়ে ছিলেন।
কাকা- হ্যাঁ হাসান সাহেব। আপনি কি জানতেন আপনার ছেলে নিখোজ হওয়ার চার দিন আগ থেকেই অন্যমনষ্ক থাকতো।
মিস্টার হাসান- কই না তো! আমি তো এমন কিছু খেয়াল করিনি। আর আমার বাসার কাজের মেয়েটিও তো কিছু বলে নি।
কাকা- ওহ। আপনার সেই কাজের মেয়েটিকে দেখতে পাচ্ছি না। কোথায় সে?
মিস্টার হাসান- ও রাফিন নিখোজ হওয়ার দুই দিন আগে আমার কাছ থেকে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি গেছে। কয়েকদিনের মধ্যেই চলে আসবে।
কাকা- আপনার কাজের মেয়ে আর আসবে না।
মিস্টার হাসান- কি? কেন আসবে না?
কাকা- আমার মন বলছে আপনার ছেলে নিখোজ হওয়ার পিছনে ওর হাত আছে। আপনি ওর গ্রামের বাড়ি একটু খোজ নিন। আর আমাদের রাফিনের ঘরটা দেখান।
মিস্টার হাসান- আচ্ছা আমি ওর গ্রামের বাড়ি খোজ নিচ্ছি। আসুন আমার সাথে।
ডায়েরির রহস্য
আমরা রাফিনের ঘরে গিলাম। ঘরটা বেশ সুন্দর। বিদেশি দামি দামি সব জিনিসপত্রে ঘরটা ভরা। কাকা আমাকে রাফিনের পড়ার টেবিলটা খুব সুন্দরভাবে খোজাখুজি করতে বলল।
কোনো সন্দেহজনক কিছু আছে কিনা? আমি পড়ার টেবিলটা খোজা শুরু করে দিয়েছি। আর কাকা ঘরের অন্যান্য জায়গাগুলো নিখুঁতভাবে খুজছিলো। আমি অনেক খোজাখুজির পর একটা ডায়েরি পেলাম।
কাকাকে ডেকে দেখালাম। কাকা বলল এটা সাবধানে রাখ আর কি কি পাওয়া যায় দেখ। আমরা দু’জনেই অনেক খোজাখুজি করলাম আর কিছুই পেলাম না। শুধু ঐ ডায়েরিটা বাদে।
আমরা মিস্টার হাসান সাহেবকে ডায়েরি ব্যাপারে জানতে চাইলাম। তিনি এই ডায়েরিটা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ডায়েরি আমাদের রাখলাম। ডায়েরিতে কি লেখা আছে তা জানার জন্য।
আমরা রাফিনের ঘরে আর কিছু না পেয়ে নিজেদের ঘরে চলে আসলাম। কাকা ডায়েরিটা তার কাছে দিতে বললেন। আমি তাকে ডায়েরিটা এনে দিলাম। ডায়েরিটা দিয়ে আমি কাকাকে বললাম!
আমি- কাকা আমি একটু বাহির থেকে ঘুরে আসি। এখানে আর ভালো লাগছে না।
কাকা- এখন রাত ৮ টা বাজে। কোথাও যেতে হবে না।
ডায়েরির রহস্য
আমি প্রচুর জেত করায় আমাকে যেতে দিলো। বাসা থেকে বের হয়েই আমি প্রধান সড়কে আসিলাম। প্রধান সড়কের পাশ দিয়ে হাটা শুরু করলাম? একটু সামনে গিয়ে দেখলাম বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সেখানে দাড়িয়ে আমার ফোন দিয়ে কিছু ছবি তুলছিলাম। এর মধ্যেই একজন লোক আমার সামনে এসে দাড়ালো। লোকটার মুখে একটা মাস্ক পড়া ছিলো, তাই তার মুখ দেখা যাচ্ছিলো না। আমার কাছে এসে লোকটা প্রশ্ন করলো।
লোক- এই ছেলে তুমি আর তোমার কাকা এখানে এসেছো কেন? তোমরা যে কাজের জন্য এসেছো তাতে তোমাদের বিপদ হতে পারে। এখান থেকে চলে যাও।
আমি- আপনি কে? আপনার নাম কি? আর আমরা এখানে কেন এসেছি তা আপনি কিভাবে জানেন?
লোক- আমি তোমার মত পিচ্চিকে এত উত্তর দিতে পারবো না। এখান থেকে চলে যাও। না হলে অনেক বিপদ তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।লোকটা আমার মুখে ধুলো ছিটিয়ে পালিয়ে গেলো।
আমি অনেক কষ্ট করে একটি দোকানে গিয়ে আমার চোখে-মুখে পানি দিয়ে। হাসান সাহেবের বাসায় গেলাম। আমি বাসায় গিয়ে কাকার কাছে সবকিছু খুলে বললাম।
কাকা- আমি বিষয় এটা আগেই বুঝতে পেরে ছিলাম। হাসান সাহেবের ছেলে নিখোজ হওয়ার পিছনে তার কাছের মানুষগুলোর মধ্যেই কারো না কারো হাত আছে। যাই হোক তুই কোথাও একা একা বের হোস না।
আমি- ঠিক আছে। আচ্ছা কাকা ডায়েরি পড়ে কিছু জানতে পারলে?
কাকা- হুম। অনেক কিছুই। তুই জানলেও অবাক হবি।
আমি- কি লেখা আছে কাকা?
কাকা- এই এলাকায় মাদক বিক্রি হয়। ও একটি সেটা দেখে ফেলেছিলো। আর তারা ওকে অনেক দেখায় যাতে ও কেউকে এ কথা না বলে।
আমি- কি মাদক!
ডায়েরির রহস্য
কাকা- হুম। বিষয়টা আমাকেও ভাবাচ্ছে। ওরাই হয়তো ওকে অপহরণ করেছে।
মিস্টার হাসান- আসুন আমরা রাতের খাবার খাই।
আমরা রাতের খাবার খেতে ডায়িং রুমে গেলাম।
মিস্টার হাসান- আমার ছেলের ডায়েরিতে কি ছুটি পেলেন?
কাকা- হুম! আপনার ছেলের সঙ্গে এলাকার কিছু মাদক ব্যবসায়ীদের ঝামেলা চলছিলো।
মিস্টার হাসান সাহেবকে ডায়েরি কথা আর আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা সবই বলা হলো।
মিস্টার হাসান- তাহলে আপনারা এখন কি করবেন?
কাকা- আপনার কাজের মেয়েটির কোনো খোজ পেয়েছেন?
মিস্টার হাসান- ওর ফোনটা বন্ধ পাচ্ছি।
কাকা- ওর নাম কি? আর কোথায় থাকে?
মিস্টার হাসান- ওর নাম আখি আর ওর গ্রামের বাড়ি চরমোনাইতে। কিন্তু ও এমন কাজ করবে বলে আমার মনে হয় না। আমাদের এখানে কয়েক বছর ধরেই কাজ করছে।
কাকা- বর্তমানে টাকার কাছেই সবকিছু ব্যর্থ। আমি রাফিনের সব বন্ধুদের সাথে কাল দেখা করতে চাই।
আর ওর স্কুলেও যেতে চাই।
মিস্টার হাসান- ঠিক আছে। আমার কাছে সবার বাসার নাম্বার ও ঠিকানা আছে আপনাকে আমি এখনি দিচ্ছি।
কাকা- আর হ্যাঁ আখির বাড়িতেও আমি কাল একবার যেতে চাই।
মিস্টার হাসান- ঠিক আছে। আমি ড্রাইভারকে বলে রাখছি। আপনার যেখানে যেতে হবে, যাবেন কোনো সমস্যা নেই।
কিন্তু দয়া করে আমার ছেলেকে খুজে দিন।
কাকা- আমি পুরোপুরি চেষ্টা করছি।
ডায়েরির রহস্য
রাতের খাবার শেষ করে আমরা আমাদের ঘরে আসলাম। পরের দিন সকাল!
আমরা ঘর থেকে বের হওয়ার আগে কাকা তার ব্যাগ থেকে পিস্তালটা বের করে তার কোমরে গুজে নিলো। গাড়িতে চড়েই কাকা ড্রাইভারকে রাফিনের স্কুলে যেতে বলো।
বাসা থেকে রাফিনের স্কুলটা বেশি দূরে না। আমরা স্কুলে গিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে দেখা করতে চাইলাম।
কাকা- স্যার আসতে পারি?
প্রধান শিক্ষক- জি আসুন। আপনার পরিচয়?
কাকা- আমার নাম মিশাল আহমেদ। পেশায় একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ।
প্রধান শিক্ষক- আমার স্কুলে এমন তো কিছুই হয়নি যে প্রাইভেট ডিটেকটিভ আসবে।
কাকা- আসলে আমি স্কুলের জন্য আসিনি।
আমি এসেছি আপনারই স্কুলের এক ছাত্রকে আজ দশদিন ধরে নিখোজ। তাই আমি এখানে এসেছি।
প্রধান শিক্ষক- ওহ! আপনি কি রাফিনের কথা বলছেন?
ডায়েরির রহস্য
কাকা- জি।
প্রধান শিক্ষক- আমাদের স্কুলেও পুলিশ এসেছি। এখনো নাকি ওর কোনো খোজ পাইনি?
কাকা- জি আমিও সে ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি।
প্রধান শিক্ষক- ও যেদিন নিখোজ হয়, সেদিন আমাদের স্কুল একটু তাড়াতাড়িই ছুটি হয়।
কাকা- কেন? সেদিন এমন কি ছিলো যা কারণে আপনারা স্কুল সময়ের আগেই ছুটি দিয়ে ছিলেন?
প্রধান শিক্ষক- সেদিন আমাদের স্কুলে শিক্ষার্থীদের নির্বাচন ছিলো। তাই তাড়াতাড়িই ছুটি হয় যায়।
কাকা- ওহ আচ্ছা। আমি রাফিনের বন্ধুদের সাথে কি কথা বরতে পাারি?
প্রধান শিক্ষক- ঠিক আছে। ওদের ডেকে পাঠাচ্ছি।…… এই আল-আমিন, আল-আমিন।
আল-আমিন- জি স্যার আমাকে ডেকে ছিলেন?
প্রধান শিক্ষক- হ্যাঁ। ক্লাস সেভেনের রাফিনের সব বন্ধদের একটু ডেকে আনো তো।
আল-আমিন- জি স্যার!
কিছুক্ষণ পর…………………….
আল-আমিন- স্যার সবাইকে ডেকে এনেছি।
প্রধান শিক্ষক- ওদের সকলকে ভিতরে আসতে বলো।
আল-আমিন- জি।
ডায়েরির রহস্য
প্রধান শিক্ষক- বাচ্চারা এই স্যার তোমাদের যা জিজ্ঞাস করবে তোমরা তার ঠিক ঠিক উত্তর দিবে।
কাকা- তোমরা সবাই তো রাফিনের বন্ধু তাই না?
বাচ্চারা- জিইইইইইইই স্যার।
কাকা- রাফিন কার কার সাথে মেলামেশা করতো তোমরা কি কউে জানো?
বাচ্চারা- না।
কাকা- ও কি কোনো বিষয় নিয়ে কোনো কিছু তোমাদের সাথে বলে ছিলো?
বাচ্চারা- না স্যার।
কাকা- তোমরা এখন যেতে পারো।
সব বাচ্চারাই চলে যাচ্ছিলো, কিন্তু একটি বাচ্চা দাড়িয়ে ছিলো। আমি ওকে জিজ্ঞাস করলাম তুমি এখানে দাড়িয়ে আছো কেন? তুমি কি কিছু বলবে? তোমার বন্ধু নিখোজ হওয়ার পিছনে কি তুমি কেউ দায়ী করো? বা কেউ তোমার বন্ধুকে লুকিয়ে রাখতে পারে?
বাচ্চাটি- জি আমি ঐ লোকটাকে সন্দেহ করি।
ডায়েরির রহস্য
আমি- কোন লোকটি? তার নাম কি? তুমি কি তাকে চেনো?
বাচ্চাটি- আমি তার নাম জানি না। তবে দেখলে চিনতে পারবো। রাফিনের কাছে মাঝে মাঝেই আসতো। আমাকে আর ওকে চকলেট কিনে দিতো।
কাকা- তুমি কি ঐ লোকটা চেহারার বিবরণ দিতে পারবে।
বাচ্চাটি- জি স্যার পারবো।
কাকা- ঠিক আছে আমরা কাল আসবো। তুমি কাল স্কুলে এসে। তুমি এখন যেতে পারো।
বাচ্চাটি- আচ্ছা।
কাকা- স্যার তাহলে আজ আমরাও আসি। কাল আপনাকে আরেকবার বিরক্ত করবো।
প্রধান শিক্ষক- আরে না। কি যে আপনারা বলেন? রাফিনের জন্য আমাদেরও খারাপ লাগে। আপনাদের যখন প্রয়োজন হবে চলে আসবেন।
আমরা স্কুল থেকে বের হয়েই হাসান সাহেবের কাজের মেয়ে আখি গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা হলাম। আমাদের গাড়িটা বেশ গতিতেই চলছিলো। আমাদের গাড়িটা কর্ণকাঠি ব্রিজের টোল পয়েন্টে দাড়ালো। টোল বক্সের একজন লোক এসে নির্ধারিত টোল নিলো। আমাদের গাড়িটা আবার চলতে শুরু করলো। দশ মিনিটের মধ্যেই আখির রাড়িতে আমরা পৌঁছে গেলাম।
আখিদের বাড়ির মধ্যে চারটি ঘর। আমরা প্রথম ঘরের সামনে আকজন বৃদ্ধা বসে ছিলো। তাকে আমি জিজ্ঞাস করলাম এখানে আখির ঘর কোনটা? উনি আমাকে ইসারা দিয়ে তার পাশের ঘরটা দেখিয়ে দিলো। ঘরে সামনে গিয়ে কাকা আখির নাম ধরে তিনবার ডাকলো। ঘরের মধ্যে থেকে একজন বৃদ্ধা মহিলা বের হয়ে এলো।
বৃদ্ধা- কারে খোজেন আমনেরা?
ডায়েরির রহস্য
কাকা- এটা কি আখির বাড়ি? আখি কি এইহানে থাহে?
বৃদ্ধা- হয়ে এইডাই আখিগো বাড়ি। কিন্তু আমনে কেডা? কানে চান?
কাকা- আমি একটু আখির সাথে দেখা করথে আইছি। ওরে একটু ডেকে দ্যান।
বৃদ্ধা- আখি তো বরিশাল। ওর সাহেবের বাসায়।
কাকা- কি? আখি বাড়ি আসে নি?
বৃদ্ধা- না তো। ক্যা ও কি বাড়ি আওয়ার কথা আছে?
কাকা- না না কিছু না। আচ্ছা আমরা আজ আসি।
বৃদ্ধা- আচ্ছা ঠিক আছে।
ডায়েরির রহস্য
আখির মায়ের কথা শুনে আমরা দু’জনেই বেশ অবাক হয়ে গেলাম। আখি বাড়ি আসেনি তো কোথায় গেছে? আমরা বরিশালের জন্য আবার রওনা হলাম।
আমি- কাকা সেই টোল থেকে লক্ষ্য করছি আমাদের একটা গাড়ি ফলো করছে। ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছে।
কাকা- হুম! আমিও দেখেছি। দেখি ব্যাটা কি করে। ড্রাইভার সাহেব আপনি একটু গাড়িটা গতি বাড়ান।
কাকার কথা মত ড্রাইভার তার গাড়ির বাড়ালো। আমরা সেদিন বাসার পেীঁছাতে পেীঁছাতে বিকেলে হয়ে গেছিলো। আমি ফ্রেশ হয়ে কাকার কাছে রাফিনের ডায়েরিটা একটু দেখতে চাইলাম।
আমি:- আমাকে একটু রাফিনের ডায়েরিটা দিবে??
কাকা:- কেন? ওটা দিয়ে তোর কি কাজ?
আমি:- আমার যেন কেন মনে হচ্ছে ঐ ডায়েরির মধ্যেই সব রহস্য রুকিয়ে আছে।
কাকা:- আচ্ছা দাড়া আমি দিচ্ছি। কিন্তু দেখিস নষ্ট যেন না হয়।
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে। এখন তো দাও।
কাকা:- এই নেয়।
ডায়েরির রহস্য
আমি ডায়েরিটা নিয়ে হাসান সাহেবের বাসার ছাদে গিয়ে উঠলাম। ছাদ উঠা কারন কেউ যেন ডায়েরিটা পড়ার সময় বিরক্ত না করে।
আমি:- এ কি? এইটা কি তাহলে কাকা চোখে পড়েনি। না না এ হতে পারে না। আমি কাকা এইটা একটু দেখাই। কাকা.. ও কাকা।
কাকা:- কি হয়েছে? এতো চিল্লাচ্ছিস কেন?
আমি:- কাকা এই দেখো।
কাকা:- তুই এটা কিভাবে বাড় করলি? আমার তো চোখেই পড়েনি।
আমি:- কাকা আমি এইটা ঠিক করতে পরবো। তুমি আমাকে একটু পেন্সিলে এনে দাও।
কাকা:- আচ্ছা দাড়া আমি দিচ্ছি।
৩০ মিনিট পর………..
আমি:- কাকা কি বুঝলে?
কাকা:- হুমমমম! ওর অপহরণের ব্যাপারটা ও আহে থেকেই আন্দাজ করতে পেরে ছিলো।
আমি:- হ্যাঁ কাকা তাই তো ডায়েরিতে এমন ভাবে লিখে গেছে। “আমি যদি নিখোঁজ হই, তাহলে আমাকে খুজে পাবে কালিজিরা। বাজার থেকে একটু ভিতরে ইটের ভাটা যেথায়, তার মাটির নিচে।
কাকা:- চল কালিজিরা এই যাই।
আমি:- কিন্তু হাসান সাহেবকে একটু জানিয়ে গেলে ভালো হতো না?
কাকা:- ওনাকে সাথে করেই নিয়ে যাবো। ………………….. হাসান সাহেব আপনার ছেলের খোজ আমরা পেয়েছি। আমাদের সাথে চলুন। তবে এখন কোনো প্রশ্ন করবেন না।
আমরা তারাহুরা করে বেড়িয়ে পড়লাম। আমাদের গাড়িটাও বেশ জোড়েই চলছিলো। আমরা ঠিকানা অনুসারে সেই ইটের ভাটায় গেলাম। ইটের ভাটা থেকে একটু দূরে ছোচেএকটা ঘরে আলো জ্বলছিলো। হাসান সাহেবকে গাড়িতে রেখে আমরা ঐ ঘরের দিকে গেলাম। সেখানে থেকে একটু দূর থেকে দেখি কয়েকজন লোক দাড়িয়ে আছে। আর ভেরত থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে। কাকা তার পকেঠ থেকে পিস্তালটা বেড় করেই ওদের সামনে গেলো। কাকা সবাইকে হাত তুলতে বললো। সবাই ভয়ে কাকার কথা অনুযায়ী হাত তুললো। এর মধ্যেই দেখলাম ভিতর থেকে একটি মহিলা বের হয়ে এসেছে। মহিলাটিকেও হাত তুলতে বলা হলো। মহিলাটিও বয়ে হাত তুলে দাড়িয়ে পড়লো।
ডায়েরির রহস্য
কাকা:- আবির যা তো ভিতরে কে কে আছে দেখ? আর সাথে করে একটা বড় দরি নিয়ে আসিস।
আমি ভিতরে গিয়ে দেখলাম রাফিনের হাত-পা বেধে রাখা হয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি ওর হাত-পা খুলে দিলাম। আর ওকে বললাম ভয়ে নেই। আমর এসে গেছি। আমি একটা বড় এবং বেশ মোটা দরিও খুজে নিয়ে বাহিরে এরে কাকা দিলাম। আর বললাম কাকা রাফিনকে পাওয়া গেছে। ওদের হাত-পা বেধে রাফিনের বাবাকে ফোন দিলাম সাথে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পুলিশও আসতে বললাম। রাফিনের বাবা এসে আমাদেরকে জানায় যে ঐ মহিলাটি আর অন্য কেই না ঐ মহিলা তোদের বাড়ির কাজের মেয়ে আখি। একটু পর পুলিশও চলে আসে। সকলকে বেধে নিয়ে যায়। আমরা থানা হয়ে রাতে বাসায় ফিরি। খেতে বসে কাকা রাফিনের কাছে জানতে চায় সে কিভাবে বুঝলো যে রাফিনকে ওখানেই রাখা হবে।
রাফিন:- সেদিন আমাদের স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেলে আমি বাসার আসি। এসেই আখি চাচিকে আমি খাবার দিতে বলি। আমি যখন খাবার খেতে আসি তখন শুনতে পাই চাচি কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। আমি শুনি “হুম আজই সময় আমার সাহেবের ছেলেকে সরিয়ে দেওয়ার। তোমরা তাড়াতাড়ি চলো আসো। এখন বাসায় কেউই নেই। ওকে আমরা কালিজিরার ঐ ইটের ভাটা রাখবো্।” এই শুনে আমি আমার ঘরে গিয়ে ঐ কথাগুলো লেখি।
পরেরদিন সকালে আমরা বরিশাল থেকে ডাকার জন্য চলে আসি।
সমাপ্ত!