পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় কী?

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় : মেয়েদের পিরিয়ডের সময় এলেই সবচেয়ে বেশি ভয় থাকে ব্যাথা নিয়ে। অধিকাংশ নারীই পিরিয়ডের সময় অসহ্য যন্ত্রনার অভিজ্ঞতা আছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পিরিয়ডের ব্যাথা অতিরিক্ত তীব্র বা জটিল রুপ ধারন করেনা। তাই এর চিকিৎসা বাড়িতে বসেই করা যায়।

  • এই ব্যাথা বা যন্ত্রনা শুরু হয় তলপেট থেকে, পরবর্তীতে সেটা কোমর, ঊরু ও পা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
  • স্তনেও ব্যাথা হয় অনেকের।
  • অনেকের তো সমস্ত শরীর ব্যথা করে কিংবা বমিও হয়ে থাকে।
  • অনেকেই ভোগেন ডিসমেনোরিয়ায়। রক্তক্ষরণের চেয়ে এই ব্যাথা কাবু দেয় মহিলাদের। ১২-৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয় এই ব্যথা।

ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে প্রাইমারি ডিসমেনোরিয়ার কষ্টগুলো অনেকাংশে কমানো সম্ভব হয়। এই যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে আপনি মেনে চলতে পারেন কিছু ঘরোয়া উপায়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পিরিয়ডের ব্যথা তেমন তীব্র বা জটিল রূপ ধারণ করে না। একারণে বাড়িতেই চিকিৎসা করা যায়।

পিরিয়ডের ব্যথার স্থায়ীকাল

  • মাসিক শুরু হওয়ার সময়েই পিরিয়ডের ব্যথা শুরু হয়।
  • তবে অনেকের ক্ষেত্রে মাসিক শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে থেকেই ব্যথা শুরু হয়।
  • পিরিয়ডের ব্যথা ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে এরচেয়ে বেশি সময় ধরেও ব্যথা থাকতে পারে।
  • সাধারণত মাসিকের যেই সময়ে সবচেয়ে বেশি রক্তক্ষরণ হয় সেই সময়ে ব্যথার পরিমাণও বেশি হয়।
  • কিশোরীদের ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো পিরিয়ড শুরু হওয়ার সময়ে প্রায়ই ব্যথা হয়ে থাকে।
  • তবে পিরিয়ডের ব্যথার পেছনে কোনো অন্তর্নিহিত রোগ না থাকলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ব্যথা কমতে থাকে।
  • বিশেষকরে সন্তান জন্মদানের পরে অনেকের পিরিয়ডের ব্যথা কমে যায়।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়

হালকা ব্যায়াম : পিরিয়ড চলাকালীন বিভিন্ন ধরনের যোগাসন, বিশেষ করে প্রাণায়াম এবং শবাসন করতে পারেন। এ ধরনের ব্যায়াম পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর পাশাপাশি শরীরকে অনেকটাই শিথিল করে।

আদা : পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য আদার কথা আয়ুর্বেদে উল্লেখ রয়েছে। আদা পিরিয়ডের ব্যথা  অনেকাংশে কমাতে পারে। আদা অনিয়মিত পিরিয়ডকে নিয়মিত করে এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।

ক্যামোমাইল চা : ক্যামোমাইল চা ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। ক্যামোমাইল চা জরায়ুকে শিথিল করতে অত্যন্ত কার্যকরী। তবে যারা ক্যামোমাইল চা পান করতে চান না, তারা এর পরিবর্তে গ্রিন টি লেবু মিশিয়ে পান করতে পারেন।

হিটিং প্যাড : পিরিয়ডসের সময় হিটিং প্যাড গর্ভাশয়ের মাংসপেশির মোচড় থেকে স্বস্তি দেয়। এ সময় পিঠের ব্যথা কম করার জন্য পিঠের নিচের অংশে হিটিং প্যাড রাখা যেতে পারে।

নারকেল বা তিলের তেলের মালিশ : নারকেল বা তিলের তেলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ ও লিনোলিক অ্যাসিড থাকে। তাই পিরিয়ডের সময় তলপেটে নারকেল বা তিলের তেলে ম্যাসাজ করলে মাংসপেশিতে ব্যথা অনেকটাই কমে যায়।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়

  • পিরিয়ডের ব্যথা থেকে স্বস্তি পেতে ডায়েট লিস্টে অধিক তেল ও মসলাযুক্ত খাবার, মদ, ক্যাফিনযুক্ত পানীয় পরিহার করুন।
  • দৈনিক কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করতে হবে।
  • বিভিন্ন ধরনের শরবত, ফলের রস, আদা-লেবু-পুদিনা পাতাযুক্ত চা পান করতে হবে।
  • মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
  • অতিরিক্ত চিনি ও লবণযুক্ত খাবার, ক্যাফেইন, অ্যালকোহল, তামাক ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
  • সকালের রোদ শরীরে লাগাতে হবে।
  • এছাড়া পিরিয়ডের ব্যথার সময় তলপেটে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল মালিশ করুন। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে এটি আপনার ব্যথা কমিয়ে দেবে অনেকখানি।
  • পেটে ব্যথার সময় গরম জলের সেঁক দিতে পারেন।
  • হট ওয়াটার ব্যাগও ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার ব্যথা অনেকটা কমিয়ে দেবে। গরম জলে স্নানও করতে পারেন।
  • আদা চা পান করলে এই সময় বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়।
  • এছাড়া কয়েক টুকরো আদা গরম জলে সেদ্ধ করে মধু-চিনি সহযোগে দিনে তিন-চারবার পান করতে পারেন।
  •  পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য পেঁপে খাওয়া বেশ কার্যকর।
  • পিরিয়ডের সময় নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খেতে পারেন। কাঁচা পেঁপে পিরিয়ডের ব্যথা কমিয়ে দেয়।
  • গরম পানিতে ২০ থেকে ২৪ মিনিট কোমর ডুবিয়ে বসে থাকলে উপকার পাবেন।
  • পর্যাপ্ত পরিমানে ফল ও সবুজ শাকসবজি খেতে হবে।
  • এক কাপ গরম পানিতে দুই থেকে তিন চামচ তুলসীর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • অ্যালোভেরা রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে একটি জুস তৈরি করে ফেলুন। পিরিয়ডের ব্যথার সময় এটি পান করুন। দিনে কয়েকবার এটি পান করুন। ব্যথা অনেকখানি কমিয়ে দেবে এই পানীয়। গরম দুধ খেলেও উপকার পাবেন।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় (শরীর চর্চা)

  • শরীর চর্চায় কমবে ব্যাথা।
  • মেঝেতে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কোমর থেকে শরীরের ওপরের অংশ এমনভাবে ভাঁজ করুন, যাতে হাতসহ শরীরের ওপরের অংশ মেঝের সমান্তরালে থাকে। হাঁটু যাতে ভাঁজ না হয়। এ অবস্থায় পাঁচ সেকেন্ড থাকুন।
  • পায়ের আঙুলের ওপর ভর করে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এবার হাত দুটো সামনে টান টান করে প্রসারিত করুন। এ অবস্থায় ৫ সেকেন্ড থাকুন।
  • হাফ স্কোয়াটিং পজিশনে বসে হাত দুটো সামনে টান টান করে প্রসারিত করুন। এ অবস্থায় পাঁচ সেকেন্ড থাকুন। মেঝেতে ২ পা ফাঁক করে দাঁড়ান। এবার ডান হাত দিয়ে বাঁ পায়ের গোড়ালি ধরার চেষ্টা করুন। এই সময় বাঁ হাত উঁচু করে বাঁ দিকে তাকানোর চেষ্টা করুন। এ অবস্থায় পাঁচ সেকেন্ড থাকুন। একইভাবে অপর হাত দিয়েও ব্যায়াম করুন।
  • যদি ব্যথা এবং রক্তক্ষরণ বেশি হয়, তবে ডাক্তারের সঙ্গে আলাপ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে হবে।

আরো দেখুন-

অনুগ্রহ করে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন।  আমাদের ফেসবুক পেইজ এ লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন

Leave a Comment

//abmismagiusom.com/4/6176583