ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কেন বিখ্যাত?

সারা বছরই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নানা কারণে আলোচিত সমালোচিত। চট্টগ্রাম বিভাগের (কুমিল্লা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে) এই জেলাটি সম্পর্কে কেউ জানে না, এমন লোক হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে অনেকে সংক্ষেপে বি-বাড়িয়া নামেও ডেকে থাকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কেন বিখ্যাত চলুন প্রশ্নটির উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ১০টি বিখ্যাত স্থান

  • লোকনাথ দীঘি
  • বাসুদেব মূর্তি
  • সৌধ হিরন্ময়
  • তিতাস গ্যাসক্ষেত্র
  • শহীদ স্মৃতিসৌধ
  • হরিপুরের জমিদার বাড়ি
  • আখাউড়া স্থলবন্দর
  • তোফায়েল আজম মনুমেন্ট
  • কাইতলা জমিদার বাড়ি
  • আরিফাইল মসজিদ (সরাইল)

►► চট্টগ্রাম জেলা কেন বিখ্যাত?
►► নীলফামারী জেলা কেন বিখ্যাত?

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা

বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক জেলা হলেও যখন কুমিল্লা বিভাগকে উন্নীত করা হবে তখন এটি কুমিল্লা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হবে। প্রখ্যাত এই জেলাটি একসময় কুমিল্লা জেলার মহাকুমা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু ১৯৮৪ সালে এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ জেলার মর্যাদা দেওয়া হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা একটি সীমান্ত জেলা। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সীমান্ত সংযোগ শেয়ার করে। এই জেলার পশ্চিমে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ জেলা, উত্তরে কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জ এবং দক্ষিণে কুমিল্লা জেলা অবস্থিত।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় উপজেলা ও থানার সংখ্যা সর্বমোট নয়টি। জেলার বিখ্যাত দুটি উপজেলার নাম কসবা ও আখাউড়া উপজেলা। আখাউড়া একটি সীমান্ত উপজেলা, এখান দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে আমদানি রপ্তানি করা হয়। ১,৯৮০ বর্গ কিলোমিটার বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ২৪ লক্ষ মানুষ বসবাস করে থাকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মোট সংসদীয় আসন ছয়টি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কেন বিখ্যাত?

ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী মিষ্টি জাতীয় খাদ্য অত্যন্ত পছন্দ করে। তাইতো তাদের পছন্দের মিষ্টান্নের তালিকায় রয়েছে ছানামুখী, রসগোল্লায় এবং তালের বড়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কেন বিখ্যাত প্রশ্নটির উত্তর হচ্ছে তালের বড়া, ছানামুখী, রসমালাইয়ের জন্য। এই জেলায় প্রচুর তাল গাছ রয়েছে। এত তাল গাছ থেকে সংগ্রহ করা তালের রস দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তালের বড়া প্রস্তুত করা হয়। সুস্বাদু এই বড়া গরম গরম খেতে ভারী মজা। এছাড়া গরুর দুধের ছানা দিয়ে তৈরি ইউনিক একটি মিঠান্নের নাম ছানামুখী, যা শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাতেই পাওয়া যায়।

আমরা জানি, বাংলাদেশের সাথে ভারতের এক বিশাল সীমান্ত রয়েছে। ভারত বাংলাদেশের চারদিকের মধ্যে তিনদিকেই অবস্থিত। ভারতের পাঁচটি রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত রয়েছে। এই পাঁচটি সীমান্তের মধ্যে একটি ত্রিপুরা রাজ্য। এই রাজ্যটি বাংলাদেশের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। তারা আমদানি ও রপ্তানি করার জন্য বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া স্থলবন্দের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। আখাউড়া স্থলবন্দর বাংলাদেশের ব্যস্ততম স্থলবন্দরগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে ধরা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিখ্যাত স্থান

এই স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি টাকার পণ্য আমদানি রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া আখাউড়া বিখ্যাত হওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে এখানে থাকা রেলওয়ে জংশনটি। এই রেলওয়ে জংশনটিতে তিনটি লাইন রয়েছে, যার মধ্যে একটি চট্টগ্রামে, আরেকটি ঢাকায় এবং অন্যটি সিলেটে গিয়ে ঠেকেছে। যার কারণে শুধু চট্টগ্রাম বা কুমিল্লাবাসীই নয়, সিলেটবাসীর জন্যেও এই রেলওয়ে জংশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কেন বিখ্যাত প্রশ্নটির আরেকটি বিকল্প উত্তর হতে পারে তিতাস গ্যাস ক্ষেত্র। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বসতবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ করা হয় তিতাস গ্যাসের মাধ্যমে। মজার ব্যাপার হলো, এই তিতাস গ্যাসের সম্পূর্ণ মজুদ কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার তিতাস গ্যাস ক্ষেত্র থেকেই আসে। বাংলাদেশের বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্রটি পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ সালে আবিষ্কার করা হয়। তখন থেকে এই গ্যাসটি নিয়মিতভাবে ঢাকা জেলা গ্যাসের চাহিদা পূরণ করে আসছে। বর্তমানে তিতাস গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। তিতাস গ্যাসক্ষেত্রকে বাংলাদেশের প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষেত্র বলা হয়।

বাংলাদেশের প্রথম কুরআন ভাস্কর্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার সদরে নির্মাণ করা হয়েছে। এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একজন শিক্ষক। ভাস্কর্য দেখতে অনেকটা সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীর প্রবেশদ্বারের মতোই। ভাস্কর্যটি নির্মাণ করার পর এটি বাংলাদেশের প্রথম কুরআন ভাস্কর্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর আগে বাংলাদেশে কখনো এমন কোন ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়নি। এখনো দেশে নানা প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলিমেরা এই ভাস্কর্যটি দেখতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় ছুটে আসেন।

►► পটুয়াখালী জেলা কেন বিখ্যাত?
►► পঞ্চগড় জেলা কেন বিখ্যাত?

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নিয়ে প্রশ্ন উত্তর

১. প্রশ্ন: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কেন বিখ্যাত?

উত্তর: তালের বড়া, ছানামুখী, রসমালাই

২. প্রশ্ন: আখাউড়া সীমান্ত স্থানটি কোন জেলায় অবস্থিত?

উত্তর: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়

৩. প্রশ্ন: তিতাস গ্যাসক্ষেত্র কোথায় অবস্থিত?

উত্তর: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় অবস্থিত

৪. প্রশ্ন: বাংলাদেশের প্রথম কুরআন ভাস্কর্য কোন জেলায় অবস্থিত?

উত্তর: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায়

৫. প্রশ্ন: ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের কোন কোন জেলার সীমান্ত রয়েছে?

উত্তর: ফেনী, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা

৬. প্রশ্ন: আখাউড়া রেলওয়ে জংশনটি কোথায় অবস্থিত?

উত্তর: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলায় অবস্থিত

৭. প্রশ্ন: তিতাস গ্যাসক্ষেত্র কত সালে আবিষ্কার করা হয়?

উত্তর: ১৯৬২ সালে

অনুগ্রহ করে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন। আমাদের ফেসবুক পেইজ এ লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন

1 thought on “ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কেন বিখ্যাত?”

Leave a Comment