স্মার্টফোন দীর্ঘদিন ভালো রাখার উপায় আমরা অনেকেই জানিনা যার জন্য আমাদের শখের মোবাইলটি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ড্যামেজ হয়ে যায়।
যদি কেউ নিজের স্মার্টফোনকে দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে চান তাহলে তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি।
দীর্ঘদিন বলতে হতে পারে ১ বছর অথবা তারও অনেক বেশি। তাহলে বলব আজকে আপনার জন্য বেশকিছু কার্যকারী টিপস রয়েছে।
স্মার্টফোনের ব্যাটারি এবং পার্টস
এমনটা অনেকের সাথেই হতে পারে যে ছয় মাস হলো একটি ফোন কিনলেন কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ফোনটির চার্জের ব্যাকআপ কমে যাচ্ছে। আর এই সমস্যাটি কয়েকটি কারণে হতে পারে।
স্মার্টফোন দীর্ঘদিন ভালো রাখার উপায় এর মধ্যে ৩টি পার্টস-
১. চার্জার এর জন্য।
২. মোবাইলে অতিরিক্ত হিট হলে।
৩. ব্যাটারি জনিত সমস্যা হলে।
বর্তমানে অধিকাংশ মোবাইলে লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারিগুলো ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
আরে ব্যাটারি গুলোতে যদি অনেক বেশি চাপ পড়ে অর্থাৎ এক ভাবে অতিরিক্ত সময় ব্যবহার হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে ডাউন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
করণীয়:
আপনি যেহেতু জানতে চান স্মার্টফোন দীর্ঘদিন ভালো রাখার উপায় সেহেতু আপনাকে মোবাইলের সাথে থাকা অর্জিনাল চার্জার এবং অরিজিনাল ক্যাবল দিয়ে ফোন চার্জ করতে হবে।
(কোন কারণে ক্যাবল হারিয়ে গেলে ভালো মানের একটি কেবল কিনে নিন)
চার্জ করার নিয়ম:
আমাদের মধ্যে এমন একটি বদঅভ্যাস হয়েছে যা হচ্ছে- মোবাইল ফোনের চার্জ একদম শেষ পর্যায়ে যখন চলে যায়-
অর্থাৎ ১% চার্জ যখন থাকে অথবা যখন অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায় তখন আমরা ফোনে চার্জ দিতে থাকি।
আপনার উচিত, ১৫%-২০% চার্জ যখন আপনার ফোনে অবশিষ্ট থাকবে ওই সময় আপনি পুনরায় আবার চার্জ করুন।
অতঃপর ৮৫%-৯০% সম্পূর্ণ হলে আপনি চার্জ থেকে খুলে ফেলুন। ১০০% চার্জ করতেই হবে এমন কোন বিষয় নেই।
প্রপার মাধ্যম এবং অরিজিনাল পার্টস দিয়ে যদি আপনি চার্জ দিয়ে থাকেন তাহলে ব্যাটারি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই থাকে না।
তবে হ্যাঁ পোর্টস অবশ্যই কয়েকটি কারণে নষ্ট হতে পারে-
১. কেয়ারফুলি চার্জার সেট না করার অলসতা। USB Type C পোর্টের ক্ষেত্রে এতটা সমস্যা না হলেও Micro USB এর ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি বেশি হয়।
সুতরাং চার্জ দেয়ার সময় অবশ্যই সর্তকতা অবলম্বন করুন।
২. অতিরিক্ত পরিমাণে ময়লা জমে যাওয়ার কারণে আপনার পর্টস নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
হতে পারে আপনি ময়লার মধ্যে মোবাইলটি রেখেছেন অথবা হালকা বৃষ্টির পানি অবস্থান করেছে।
হতে পারে ওখানে একটু ঘাম ঢুকেছে এবং আস্তে ধীরে ওখানে একটা ময়লা সৃষ্টি করবে এবং একটার সময় এখানে ফাঙ্গাস সৃষ্টি করার ফলে মোবাইলের পার্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ফিজিক্যাল প্রটেকশন
হতে পারে এমনটি আপনার হাত থেকে মোবাইল কি পড়ে যেতে পারে।
আর এজন্যেই স্মার্টফোন দীর্ঘদিন ভালো রাখার উপায় আপনার সাথে শেয়ার করা হচ্ছে।
মোবাইলটি হাত থেকে পড়ে যাওয়ার ফলে দুই ধরনের ড্যামেজ হতে পারে।
স্মার্টফোন দীর্ঘদিন ভালো রাখার উপায় জনার সাথে এটিও লক্ষ রাখতে হবে।
১. ইন্টার্নাল ড্যামেজ।
২. এক্সটার্নাল ড্যামেজ।
ইন্টার্নাল ড্যামেজ কি?
ইন্টার্নাল ড্যামেজ হলে সেটা সাথে সাথে আপনি দেখবেন না। এমনকি আপনি এটা বুঝবেন না যে আপনার ফোনে কোন একটা সমস্যা হয়েছে।
যেমন ধীরে ধীরে ডিসপ্লেটি খারাপ হতে পারে। ধীরে ধীরে ক্যামেরাটি খারাপ হতে পারে। এমনকি মাইক্রোম্যাক্সের দেখা দিতে পারে আপনার ফোনে।
এখন এই প্রোজেক্টের জন্য আপনাকে একটা সুন্দর কাভার ব্যবহার করতে হবে। সেইসাথে ভালো মানের একটি স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করতে হবে।
এক্সটার্নাল ড্যামেজ কি?
এক্সটার্নাল ড্যামেজ হচ্ছে আপনার সামনেই ঘটে যাওয়া সমস্যা গুলো। ধরুন আপনার হাত থেকে ফোনটি পড়ে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানেই ডেট হয়ে গেল।
অথবা হতে পারে আপনার কাছ থেকেই ফোনটি পানিতে পড়ে হারিয়ে গেল অথবা ফোনটি একেবারে নষ্ট হয়ে গেল।
অর্থাৎ যে সমস্যাগুলো আপনি বুঝতে পারেন অথবা আপনার সামনেই হয়ে থাকে সেগুলো কে এক্সটার্নাল ড্যামেজ বলা হয়ে থাকে।
ফোনের জন্য কি ধরনের কাভার ব্যবহার করবেন?
এমন কোন কাভার ব্যবহার করবেন না যেটা দিয়ে আপনার ফোনের তাপ বাইরে বের হতে পারে না।
যদি এমনটি হয় যে আপনার কাভারের কোন জায়গা থেকেই আপনার স্মার্টফোনের যে তাপ সেটি বের হতে পারছে না তখন কিন্তু আপনার স্মার্টফোনের জন্য এটি আরও ভয়াবহ।
ধরুন আপনি একটি কাভার ব্যবহার করছেন যেটার মাধ্যমে আপনার স্মার্ট ফোন যখন প্রচুর গরম হয় তখন সে তাপ গুলো বাইরে বের হতে পারে না।
অথবা আপনি গেমিং করছেন তখন মোবাইলের গরম তাপ গুলো বের হতে পারছে না।
এতে করে ফোনটি অতিরিক্ত গরম হয়ে গেল এবং ফোনের প্রসেসর এবং ব্যাটারির উপর এক্সট্রা প্রসার পড়ল।
আর এভাবেই মোবাইলের পার্স গুলো আস্তে আস্তে করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এমন একটি কাভার ব্যবহার করুন যেটার মধ্যে পর্যাপ্ত ফাঁকা রয়েছে অথবা খুবই লাইটওয়েট এবং ভালো একটি কাভার ব্যবহার করুন।
ময়লামুক্ত স্মার্টফোন
আমরা অনেকেই কেয়ারলেস এর মত স্মার্ট ফোন ব্যবহার করি। ফোনের ক্যামেরা মডিউল এর পাশে, চার্জ পোর্ট এর পাশে,
স্পিকারের কাছে এবং ভলিয়ম এবং পাওয়ার বাটন এর নিকট অনেক সময় ময়লা জমে থাকে।
আর এই মহিলার কারণে কয়েকটি প্রবলেম হতে পারে।
রিসেন্টলি লক্ষ করলে আপনারা দেখবেন শাওমির বেশ কয়েকটি ফোনের ক্যামেরার মধ্যে ধুলাবালি প্রবেশ করছে।
আর হতে পারে একই ফোন আপনি আমাকে আপনার বন্ধু ব্যবহার করছেন কিন্তু আপনার বন্ধুর ফোনটিতে সমস্যা হয়নি বরং আপনার ফোনটিতে সমস্যা হয়েছে এর কারণ হচ্ছে ‘কেয়ারলেস।’
ফোন ব্যবহার করার পরে হাতে সময় থাকলে অথবা সুযোগ থাকলে আপনার ফোনকে সুন্দরভাবে মোছা দিয়ে রাখুন এবং সপ্তাহে একবার হলেও আপনার ফোনকে ক্লিক করুন।
ছোট ব্রাশ দিয়ে ক্লিন কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারেন। মোবাইলের সাথে কোন ব্যাক কভার থাকলে সেটিকে খুলে সুন্দরভাবে পরিষ্কার করে নিন।
আবার অনেক সময় দেখা যায় ব্যাক কভার ব্যবহার করার পরেও মোবাইলের ব্যাক পার্ট এ পর্যাপ্ত দাগ পড়ে যায় অথবা ময়লার কালার জমা হয়ে যায়।
এর মেইন কারণ হচ্ছে আপনার কভার এর মধ্যে হয়তো কোনো বালু অথবা ময়লা প্রবেশ করেছে-
যেটা ওখানে অবস্থান করে দীর্ঘদিন যাবৎ আপনার হাতের ছাপের প্রয়োগে ওটা আপনার মোবাইলের ব্যাক কভার এর সাথে এডজাস্ট হয়ে যাচ্ছে।
সঠিক টেম্পারেচার
সঠিক টেম্পারেচারে আপনার স্মার্টফোনটি ব্যবহার করুন। অথবা যখন ব্যবহার করছেন না তখন ভালো জায়গায় রাখুন।
যারা বাইকের রয়েছে তারা নিজের মোবাইল থেকে সামনের দিকে রেখে দেয় ম্যাপ অথবা বিভিন্ন কাজের জন্য কিন্তু এতে করে মোবাইলটি ধীরে ধীরে ক্ষতির দিকে ঝুঁকে পড়ে।
সরাসরি সূর্যের তাপে মোবাইলের ডিসপ্লে টি ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে। এবং একটা সময় এসে ব্যাটারিটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে ডেড হয়ে যায়।
“কিছুদিন আগে বাংলাদেশী ইউটিউবার “SAM ZONE” এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য একটি স্মার্টফোন দীর্ঘসময় ফ্রিজের ডিপ বক্সের মধ্যে রেখেছিলেন। অতঃপর মোবাইলটি বের করার পরেও ঠিকঠাক ছিল সবকিছুই।
কিন্তু ফ্রিজ থেকে বের করার কিছুক্ষণ পর থেকে মোবাইলটির শরীর বেয়ে বেয়ে পানি বের হতে শুরু করলো অতঃপর মোবাইলটি নষ্ট হওয়ার দিকে ঝুঁকে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে আবার সেটিকে ঠিক করে ফেলে।”
গেমিং করার পরে অথবা মোবাইল অনেক বেশি হিট হয়ে যাওয়ার পরে ভুলেও কখনো নিজের মোবাইলকে ফ্রিজের মধ্যে রাখতে যাবেন না।
অনেকেই এমন ধারণা হয়ে থাকে যে অল্প একটু সময়ের জন্য ফ্রিজের মধ্যে রাখি এতে করে মোবাইলটি দূরত্ব ঠান্ডা হয়ে যাবে কিন্তু এটা আপনার মোবাইলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর একটি দিক।
মোবাইল পানিতে পড়লে করণীয় কি? বাসায় কিভাবে ঠিক করবেন জানতে এখানে ক্লিক করুন।
লাইট ওয়েট সফটওয়্যার ব্যবহার
যদি আপনার ফোনটা একটু কম দামি হয়ে থাকে অথবা বেশি পাওয়ারফুল না হয়ে থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই জানেন এটাতে ভালো প্রসেসর দেওয়া হয়নি। কম্পানি এটাতে আহামরি পারফরম্যান্স সেট করতে পারে না।
এই ধরনের ফোনগুলোর ক্ষেত্রে আপনি লাইট ভার্সন অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহার করুন।
যেমন ফেসবুকের লাইটার ভার্শন অ্যাপ রয়েছে, মেসেঞ্জার এর লাইটের ভার্শন অ্যাপ রয়েছে=এভাবে ব্যবহৃত অনেক অ্যাপ্লিকেশনের লাইট ভার্সন অ্যাপ থাকে সেগুলো ব্যবহার করা উচিত।
অর্থাৎ খুব ভারী যে অ্যাপ্লিকেশনগুলো রয়েছে সেগুলো ব্যবহার না করা কমদামি মোবাইল গুলোর জন্য অনেক বেশি উপকারী।
গুগোল অথবা প্লে স্টোরে সার্চ করলে ব্যবহারকৃত প্রায় সকল অ্যাপসের লাইট ভার্সন পেয়ে যাবেন।
যদি ফ্লাগশিপ ফোন হয় অথবা বেশি দাম দিয়ে কেনা অথবা খুব ভালো পারফর্মেন্স এর ফোন হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আপনি অফিশিয়াল সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে পারেন এতে করে সমস্যা হবে না।
রিস্টোর এবং ফ্যাক্টরি রিসেট
অনেকেরই এমন ধারণা নিজের ফোনটাকে নতুন করার জন্য ফ্যাক্টরি রিসেট করা ভালো। কিন্তু তাদের জন্য এটি দুঃসংবাদ।
তবে হ্যাঁ ধরুন প্রত্যেক মাসে ২-১ বারের জন্য আপনার স্মার্টফোনটিকে রিস্টোর করতে পারেন।
ধরুন স্মার্টফোনটি একটু স্লো হয়ে যাচ্ছে, সঠিকভাবে ইন্টারনেট কানেকশন পাচ্ছে না,
টাচ প্যানেল ঠিকঠাক ভাবে কাজ করছে না এ সময় আপনি ফোনটিকে রিয়েস্টার করে আবার ওপেন করতে পারেন।
তবে হ্যাঁ ফ্যাক্টরি রিসেট মাঝেমধ্যে করা উচিত তখন যখন আপনার ফোনটি ব্যবহারযোগ্য না অর্থাৎ প্যাটার্ন ঔ অথবা পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে আটকে গেছে।
অথবা এমন কোনো সমস্যা হয়েছে যখন ফ্যাক্টরি রিসেট করা খুব দরকার তখন আপনি এটি করতে পারেন।
এছাড়া আপনার ফোন যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তাহলে অহেতুক ফ্যাক্টরি রিসেট করার প্রশ্নই আসে না।
নিয়মিত আপডেট
সর্বশেষ টিপস হচ্ছে নিয়মিত ফোনটিকে আপডেট রাখতে পারেন।
তবে- শাওমি, ওয়ানপ্লাস এবং মি ওয়াই সহ আরো কিছু ডিভাইস রয়েছে এগুলোর ক্ষেত্রে আপডেট করার পূর্বে একটু আপডেট সম্পর্কে জেনে নেবেন। যে নতুন আপডেট এসেছে সেটা ব্যবহারযোগ্য কিনা।
কারণ অনেক সময় স্মার্টফোনের পারফরমেন্সকে খুবই দুর্বল করে ফেলে অথবা স্মার্টফোনে নতুন অপশন নিয়ে আসার ফলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন করতে পারে এজন্য পূর্বে জেনে নিবেন।
আইফোন স্যামসাং ফোন গুলোর ক্ষেত্রে যখনই আপডেট আসবে আপনি নিশ্চিন্তে আপডেট করতে পারবেন।
তাতে করে আপনার স্মার্টফোনটি ওই সময় দ্রুতগতির হয়ে যাবে।
কিছু কথা
আমরা যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম সেই সমস্ত বিষয় গুলোর কারণেই মূলত আমাদের স্মার্ট ফোন বেশি দিনের জন্য ব্যবহারযোগ্য হয় না।
স্মার্টফোন দীর্ঘদিন ভালো রাখার উপায় সমূহ আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
আমাদের আজকের আর্টিকেলটি ছিল স্মার্টফোন দীর্ঘদিন ভালো রাখার উপায় সমূহ নিয়ে।
আপনি যদি ব্যক্তিগতভাবে আমাদের এই ফর্মুলা গুলো কাজে লাগান তাহলে আপনার শখের স্মার্টফোনটি দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব।