হুমায়ুন কবির এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
কবি হুমায়ুন কবির (২৫ ডিসেম্বর, ১৯৪৮ থেকে ৬ জুন, ১৯৭২) বিশ শতকের বাংলা ভাষার একজন প্রগতিশীল কবি।
তিনি বামপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ব-বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন এবং ১৯৭২ সালে পূর্ব বাংলার সর্ব-হারা পার্টির অন্তর্দ্বন্দ্বে নিহত হন।
(হুমায়ুন কবীর থেকে পুন-র্নির্দেশিত) এই নিবন্ধটি একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও কবি সম্পর্কে।
একই নামের অন্য ব্যক্তির জন্য হুমায়ুন কবির ( দ্ব্যর্থতা নিরসন ) দেখুন।
হুমায়ুন কবির এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
কবি: হুমায়ুন কবির,
জন্ম ২৫ ডিসেম্বর, ১৯৪৮,ব্রিটিশ ভারত।
মৃত্যু: ৬ জুন, ১৯৭২,
প্রতিষ্ঠান: পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি,
আন্দোলন: বাঙালি কবি,
বাংলাদেশে সাম্যবাদ
সিরিজের অংশ,
আড়ো পড়ুন: হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় সংক্ষিপ্ত জীবনী
আড়ো পড়ুন: আবদুল হাই শিকদার জীবনী
ব্যক্তি:
উপনিবেশ বাদী সময় এবং দেশভাগ স্নায়ুযুদ্ধ কালীন বছর গুলোয় সমকালীন আন্দোলন।
অন্যান্য নিবন্ধ প্রবেশদ্বার আইকন সাম্যবাদ প্রবেশদ্বার।
দেস,
পরিচ্ছেদ সমূহ:
- জন্ম ও শিক্ষাজীবন,
- কর্মজীবন,
- মৃত্যু এবং পার্টির মূল্যায়ন,
- লেখক জীবন,
- পরিবার,
জন্ম ও শিক্ষাজীবন:
ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৬৫ সালে একই কলেজ থেকে আই. এ. পাস করেন।
১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স এবং ১৯৬৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম. এ. পাস করেন।
১৯৭০ এর বাংলা একাডেমী গবেষণা বৃত্তি লাভ করেন। বাংলা একাডেমীতে তার গবেষণার বিষয় ছিলো সাম্প্রতিক জীবন চৈতন্য ও জীবনানন্দ দাশের কবিতা।
কবি হুমায়ুন কবির এর সংক্ষিপ্ত জীবনী কর্মজীবন:
১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পত্র-পত্রিকায় তার অসংখ্য প্রবন্ধ ছড়িয়ে আছে।
১৯৭২ সালের ১ম দিকে গোপন বিপ্লবী রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশ গ্রহণ করেন এবং বাম প্রগতিশীল সংগঠনের সাঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠে।
একই বছর গোপন রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য সরকারের রোষানলে পড়েন এবং গ্রেফতার বরণ করেন।
পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে লেখক সংগ্রাম শিবির প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭২ সালে লেখক সংগ্রাম শিবিরের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ লেখক শিবির নাম রাখা হয়।
পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির প্রধান নেতা সিরাজ সিকদারের সংগে পার্টির কর্ম-সূচির প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে তার বিরোধ দেখা দেয়।
মৃত্যু এবং পার্টির মূল্যায়ন:
১৯৭২ সালের ৬ জুন তিনি আততায়ীর গুলিতে ঢাকায় মৃত বরন করেন। তাকে তৎকালীন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি সেলিম শাহনেওয়াজ ফজলু ও সুলতান চক্রের সক্রিয়, ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বিশ্বাস ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করে। ৬ জুন রাত ৯টায় ঢাকার ইন্দিরা রোডের বাড়ি থেকে তাকে ডেকে এনে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এই খতমে অংশ গ্রহণকারী গেরিলাদের পরবর্তী কালে অভিনন্দন জানিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি।
হুমায়ুন কবিরের বোনকে বিয়ে করে ছিলেন সেলিম শাহনেওয়াজ ফজলু। এই আত্মীয়তার সম্পর্ক ছাড়া ও হুমায়ুন কবিরের ব্যাপারে পার্টিতে অভিযোগ ওঠে তার ভাই ফিরোজ কবিরের বহিষ্কারকে মেনে না নেয়া।
ফিরোজ কবিরকে ইতিপূর্বে একজন “কমরেড” হত্যার অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
হুমায়ুন কবির হত্যার কারণ হিসেবে পার্টির বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘সাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা অর্জন করার পুরো-পুরি বুর্জোয়া দৃষ্টিকোণ সম্পন্ন হওয়ায় স্বভাবতই হুমায়ুন কবিরের মধ্যে ব্যক্তি স্বার্থের প্রাধান্য ছিল’।
হুমায়ুন কবিরের হতযাকে পরবর্তীতে পার্টি ‘খতম করাটা ভুল হয়েছে’ বলে মূল্যায়ন করে।
লেখক জীবন:
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অব্যবহিত আগ-মুহূর্তে বাংলার আবাল বৃদ্ধ বনিতার পাশা-পাশি বাংলার প্রগতি-শীল লেখক সমাজও কলম ছেড়ে সরাসরি রাস্তায় নেমে আসেন।
এই সংগ্রামী তরুণ লেখক গোষ্ঠির উদ্যোগে এ সময়ে সংগঠিত হয় ‘লেখক সংগ্রাম শিবির’।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জিত হওয়ার পর পরই এই তরুণ লেখক গোষ্ঠির উদ্যোগে গঠিত হয় ‘বাংলাদেশ লেখক শিবির’।
শুরুতেই একটি ‘আন্দোলন’ হিসেবে লেখক শিবিরের আত্ম-প্রকাশ ঘটে।
এ পর্যায়ে হুমায়ুন কবির ও কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ‘বাংলাদেশ লেখক শিবির’ এর আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
বাংলাদেশ লেখক শিবিরের তৎকালীন তরুণ কর্মীদের মধ্যে সর্ব জনাব আহম্মদ ছফা, রফিক কায়সার, মুনতাসীর মামুন, হেলাল হাফিজ, ফরহাদ মাজহার, রফিক নওশাদ প্রমুখের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ-যোগ্য।
‘বাংলাদেশ লেখক শিবিরের’ অন্যতম আহ্বায়ক থাকা-কালিন ১৯৭২ সালের ৬ই জুন অজ্ঞাত আততায়ীর গুলিতে হুমায়ুন কবির মারাযান।
এ সময়ে তিনি ইন্দিরা রোডে একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন।
জীবদ্দশায় জনাব হুমায়ুনের কোন গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। মৃত্যুর কয়েক মাস আগে তিনি গ্রন্থ প্রকাশের কথা সক্রিয় ভাবে ভাবতে শুরু করেন।
সৌভাগ্য-ক্রমে তার অন্যতম শুভানুধ্যায়ী ও বন্ধু জনাব আহমদ ছফার মাধ্যমে তিনি তার ১ম কাব্য গ্রন্থের জন্য একজন প্রকাশকও পেয়ে ছিলেন।
কাব্য-গ্রন্থের প্রকাশক পাওয়া কঠিন। তাই তিনি তার ১ম পাণ্ডুলিপিতে যথা সম্ভব বেশি কবিতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন। তৈরি করেন ৭৪টি কবিতা সংবলিত পাণ্ডুলিপি ‘কুসুমিত ইস্পাত’।
গ্রন্থটি যখন ছাপা খানায় পুরো-পুরি কম্পোজ হয়ে গেছে তখনই হুমায়ুন লোকান্তরিত হলেন। নিজের মুদ্রিত-গ্রন্থের ১ম কপিটি দেখার সৌভাগ্য তার হয়নি।
লেখক জীবন:
বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘হুমায়ুন কবির রচনাবলী’তে ‘রক্তের ঋণ’ নামে কবি হুমায়ুন কবিরের আরেকটি কাব্য-গ্রন্থ সংকলিত হয়েছে। এই পাণ্ডু-লিপিটি হুমায়ুন নিজ হাতে তৈরী করে যান নি।
তিনি তার মৃত্যুর পর ঢাকার একটি বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের অনুরোধে জনাব আলী মনোয়ার, মিসেস সুলতানা রেবু ও কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা এ গ্রন্থের পাণ্ডু-লিপি তৈরি করেন।
এই পাণ্ডু-লিপিতে হুমায়ুনের গণ-জাগরণ মূলক কবিতা গুলোর প্রাধান্য রয়েছে। ‘রক্তের ঋণে’র বাইরে প্রাপ্ত হুমায়ুনের অন্যান্য কবিতাবলী ‘অগ্রন্থিত কবিতা’ শিরোনামে উক্ত রচনাবলীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। হুমায়ুন কবিরের কবিতা প্রসঙ্গে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন যে কবিতার শরীর নির্মাণে, বিশেষতঃ উপমা, উৎপ্রেক্ষা ও শব্দনির্মাণে হুমায়ুন বরাবরই জীবনানন্দীয় পরিম-ণ্ডলের অধিবাসী। ‘হুমায়ুন কবির রচনাবলী’ শীর্ষক উক্ত সংকলনে যে সব কবিতা অন্তর্ভুক্ত তার বাইরেও হুমায়ুনের কিছু কবিতা রয়েছে।
কবিতা ছাড়াও হুমায়ুন কবির কিছু প্রবন্ধ ও কিছু গল্পও লিখে ছিলেন। জীবনানন্দ সম্পর্কিত প্রবন্ধাবলী ছাড়াও সাহিত্য, ও সমাজ, বিশেষতঃ ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে হুমায়ুন কবির বেশ কিছু তীক্ষ্ণধী প্রবন্ধ লিখে ছিলেন। ‘কণ্ঠস্বর’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে ষাটের দশকে যে কৃত্রিম গদ্য-চর্চার আবহ সৃষ্টি হয়ে ছিলো, হুমায়ুনের বাক্য-বিন্যাস সেই আবহেরই অনুবর্তী বলে অনুমিত হয়।
হুমায়ুন কবির গল্প লিখে ছিলেন অনেকটা খেয়ালের বশে। ৭০দশকের শুরুতে রফিক নওশাদ সম্পাদিত গল্প-পত্রিকা ‘সূচী-পত্র’-ই ছিলো তার গল্প-রচনার প্রধান প্রেরণা। তার গল্প গুলোও কাব্য-গন্ধী, সংক্ষিপ্ত ও প্রতীকী হিসেবে।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা লিখছেন যে জনাব হুমায়ুনের বন্ধু ভাগ্য ছিলো সু-প্রসন্ন। তার মৃত্যুর পর একথা বিশেষ ভাবে প্রমাণিত। অসংখ্য তরুণ কবি তার সম্পর্কে কবিতা লিখে ছিলো। ফরহাদ মাজহার লিখেছেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘আমি ডেকে বলতে পারতাম হুমায়ুন’। তাৎক্ষনিক ভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে মুহম্মদ নূরুল হুদা নিজেও রফিক নওশাদ সম্পাদিত কবিতা পত্রিকা ‘কাল-পুরুষ’ এ (আগস্ট, ১৯৭২) স্পন্দিত গদ্যে লিখলেনঃ ‘আরেক লোরকা তিনি, বঙ্গ দেশীয় লোরকা, রক্তাক্ত হয়ে ছিলেন জীবনে, মৃত্যুতে এবং কবিতায়।’
পরিবার:
জনাব হুমায়ুনের স্ত্রী ছিলো তারই সহপাঠিনী সুলতানা রেবু। মৃত্যু-কালে হুমায়ুন এক পুত্র ( আদিত্য কবির, ডাক নাম ‘সেতু’) ও এক কন্যার (অদিতি কবীর, ডাক নাম ‘খেয়া’) জনক ছিলো। মৃত্যুর কিছুদিন পর জন্মগ্রহণ করে তার ২য় পুত্র অনিন্দ্য কবির, ডাক নাম ‘অভীক’। ধন্যবাদ।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।