অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলছি

অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলছি ইদানিং প্রায় প্রতিটি অবিভাবকের মুখে এই কথাগুলো শোনা যায় যে, আমার সন্তান নিয়মিত লেখাপড়া করছেনা, কিংবা সে মোবাইলের প্রতি খুব বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে অথবা সে দিন দিন মানসিক ডিপ্রেশনের মধ্যে চলে যাচ্ছে। আচ্ছা কখনো কি আমরা নিজেরা ভেবে দেখেছি এই সমস্যা গুলোর কারণ কি হতে পারে?

অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলছি

প্রতিটি শিশুর জন্য এমন একজনকে প্রয়োজন, যার সাথে শিশুটি তার মনের ভাবনা, সকল সমস্যা প্রকাশ করতে পারে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের উচিৎ তার শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া এবং শিশুর প্রতি কঠোর না হয়ে বন্ধুর মতো আচরন করা।

প্রথমেই আপনার-আমার ছোটবেলার কথা থেকেই ধরা যাক। মনে পরে, আপনার সেই ছোটবেলার দিনগুলোর কথা?

আপনার-আমার ছোটবেলা কাটতো সারাদিন দুষ্টুমি করে, বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করে। মনে পরে, সেই কানামাছি কিংবা গোল্লাছুট খেলার কথা, অথবা পুকুরে বা নদীতে গোসল করতে গিয়ে বাবার বকুনির কথা? আপনি-আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন মনে পরে স্কুলে বন্ধুদের সাথে সেই হাসি ঠাট্টার কথা? অথবা ক্লাস শেষে বাড়িতে না গিয়ে বন্ধুদের সাথে মাঠে খেলাধুলা করার কথা? ঠিক সন্ধ্যা হলেই পড়তে বসা,রাত দশটা বাজতে না বাজতেই ঘুমাতে যাওয়া আবার খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে মক্তবে যাওয়া?

কি আনন্দেই না কেটেছিলো আমাদের শৈশবের দিনগুলো।

আপনাকে শৈশবের ওই সুন্দর দিনগুলো মনে করিয়ে দেয়ার জন্য কথাগুলো বলছি না। বর্তমান সময়ের ছেলেমেয়েদের কিছু মূহুর্তের সাথে আমাদের সেই সময় গুলো চলেন মিলিয়ে দেখা যাক।

আমরা তখন মায়ের কাছে রূপকথার গল্প শুনে কিংবা গান শুনে খাবার খেতাম। আর একই বয়সে বর্তমানে ছেলেমেয়েরা কিভাবে খাবার খায় জানেনতো? তাদের খাবার খাওয়ানো অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে মোবাইল ফোন অথবা টেলিভিশন। মোবাইলফোন ছাড়া তারা খেতেই চায় না। একটু গভীর ভাবে চিন্তা করে দেখুন , যে বাচ্চাটা এখনো কথা বলতে শেখেনি তার সামনে মোবাইল ফোন না দিলে সে খাবার খেতে চায় না। কি অদ্ভুত তাই না? কিন্তু এই অদ্ভুত অভ্যাসগুলো ওদেরকে গড়ে দিয়েছে কে? আমরা অভিভাবকরাই তো এই অভ্যাস গড়ে দেয়ার জন্য দায়ী।

আরো : সন্তান হারানো মায়ের আর্তনাদ – নুর আতিকুন নেছা
আরো : মধুসখার আলাপন – নুর আতিকুন নেছা

অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলছি

আপনার-আমার শৈশবের সময়ে আপনি-আমি কি করেছি মনে আছে নিশ্চই?

বিকেল হলেই বন্ধুদের সাথে মাঠে খেলাধুলা করা কিংবা নতুন কোনো কিছু দেখলে কৌতূহলী হয়ে সে সম্পর্কে হাজারটা প্রশ্ন করে বড়দের মাথা খারাপ করে দেওয়া। কিন্তু এখনকার ছেলে-মেয়েরা ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে তাদের অবসর সময়গুলো মোবাইল কিংবা কম্পিউটার গেম এর মাধ্যমে কাটিয়ে দিচ্ছে। তাদের বাইরে খেলতে যেতে না দিয়ে তাদের হাতে এই ডিভাইসগুলো কে তুলে দিয়েছে? আপনি, আমি আমরাইতো। আমাদের সময় রাত দশটার বাজলেই ঘুমে চোখের পাতা বন্ধ হয়ে যেত, আবার ইচ্ছাকৃতভাবে খুব সকালে ঘুম ভেঙে যেত।

আর বর্তমানে আমাদের সন্তানেরা কি করছে আমরা সে বিষয়ে ঠিকমতো খেয়াল রাখছিতো? তারা রাত দুইটা-তিনটা পর্যন্ত মোবাইল বা টেলিভিশনে সময় দিচ্ছে। আবার উঠছে সকাল দশটা-এগারোটায়। দিনের বেশিরভাগ সময়ই তারা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছে।

আমাদের সময় এবং বর্তমান সময়ের সাথে একটু মিলিয়ে দেখুন,

দেখতে পাবেন যে তাদের শৈশব-কৈশোরের সময় আর আমাদের শৈশব-কৈশোরের সময় সম্পূর্ণ আলাদা।

আপনারা এত সময়ে নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, সত্যিকার অর্থে সমস্যাগুলো কোথায়।

আসুন এবার আমরা দেখে নেই সন্তানের মেধা বিকাশের সম্পর্কে ডাক্তার ফাতেমা জেহান কি বলেছেন :-

  • প্রতিটি সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ছোটবেলা থেকে তার প্রতিটি কাজ আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • মোবাইলের ক্ষতিকর রেডিয়েশন প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে বাচ্চাদের দুই থেকে তিনগুণ বেশি ক্ষতি করে, তাই বাচ্চাদের কাছে মোবাইল ফোন আনবেন না।
  • প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত আপনার সন্তানকে মোবাইল ব্যবহার করতে দিবেন না।
  •  এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে বা মেয়ে মোবাইলের ভালো দিকগুলোর চেয়ে ক্ষতিকর দিক গুলোই বেশি ব্যবহার করে থাকে।
  • মোবাইল বা কম্পিউটারে গেম খেলতে না দিয়ে তাকে বন্ধুদের সাথে মিশতে দিন।
  • আপনার সন্তানকে মাঠে খেলতে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিন, এতে করে তারা তাদের সৃজনশীল বিকাশ গুলো সঠিকভাবে ঘটাতে পারবে।
  • স্বাস্থ্য, মন ভালো রাখা সহ মস্তিষ্কের সুস্থ বিকাশের জন্য তাড়াতাড়ি ঘুমানো এবং খুব সকালে ঘুম থেকে উঠার কোনো বিকল্প নেই। তাই আপনিসহ আপনার সন্তান তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান এবং খুব সকালে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করুন ।
  • আপনার সন্তানের সাথে মিশুন, তাকে সময় দিন, তার সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করুন এবং তার সম্পর্কে জানুন। তারা কি চায় সেটা জানার চেষ্টা করুন।
  • আপনার সন্তানকে সমাজের ভাল এবং খারাপ উভয় দিক গুলো সম্পর্কে ধারণা দিন, যাতে করে আপনার সন্তান ভালকে গ্রহণ করতে পারে এবং খারাপগুলোকে পরিহার করতে পারে।
  • আপনার সন্তানকে বাইরের খাবার না দিয়ে বাসায় তৈরী করা স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার খেতে দিন।

আরো : একটা কবিতা ছাপা হবে – তাহেরা সুলতানা জেমি
আরো : নুর আতিকুন নেছা – তবুও ভালোবাসি

আপনি-আমি এই কাজগুলো ঠিকমতো করছিতো?

  • আমাদের মনে রাখা দরকার যে, কোন খারাপ অভ্যাস ২-১ দিনে তৈরি হয় না।
  • প্রতিটি অভ্যাস তৈরি হতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়।
  • ভিকটিমের সমস্যার জন্য শুধুমাত্র যে সে নিজে একা দায়ী তা কিন্তু নয়।
  • তার প্রতিটি সমস্যার জন্য আমরা সবাই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে দায়ী।

আসুন আমরা সকলে সচেতন হই। আমাদের ব্যক্তিগত সচেতনতাই করে দিতে পারে আমাদের সন্তানের সুস্থ-সুন্দর ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।

অনুগ্রহ করে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন।  আমাদের ফেসবুক পেইজ এ লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন

Leave a Comment

//madurird.com/4/6176583