পৃথিবীর মুক্তির জন্য লড়াই করা মুক্তিযোদ্ধা রিচি

ঢাকার হলিক্রস কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সায়লা শবনম রিচি। বেড়ে উঠেছেন বরিশাল শহরে।

একজন তুখোর বির্তাকিক হিসেবে রয়েছে নামডাক।

বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর পুরষ্কারও রয়েছে তার ঝুলিতে।

২০১৯ সালে পরিবেশবাদী সংগঠন আরণ্যকের সাথে যুক্ত হয়ে জলবায়ু বিষয়ক কর্মকান্ডে হাতেখড়ি।

নিজেকে জড়িয়েছেন তরুণদের ফ্রাইডেস ফর ফিউচার আন্দোলনেও।

বর্তমানে তিনি ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস নেটওর্য়াকের প্রশিক্ষণ নিয়ে জলবায়ু সুবিচার আদায়ে সক্রিয়ভাবে নানা ধরনের প্রচারণা ও মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

সায়লা শবনম রিচি, ঢাকার হলিক্রস কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী, ২০১৯ সালে অরণ্যক এর সাথে কাজ করার মাধ্যমে শুরু হয় জলবায়ু নিয়ে কাজ।

বর্তমানে তিনি ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস বরিশাল টিমের সাথে কাজ করছেন।

পৃথিবীর মুক্তির জন্য লড়াই করা মুক্তিযোদ্ধা রিচি

রিচি বলেন, “জীবনযুদ্ধে প্রকৃতির নির্মমতার কাছে হেরে যাওয়া মানুষগুলোর সেই আত্মচিৎকার-ই আমার কাছে জলবায়ু সংকট।

ইট পাথরে ঘেরা এ শহরে আবদ্ধ হয়ে থাকলে কখনো জানতে পারতাম না জলবায়ু সংকট,

কিভাবে গ্রাস করছে আমার বাংলার মানুষদের, কিভাবে নাশ করছে শত শত জীবন।

বরিশাল বিভাগের সদর এলাকায় থাকলেও জলবায়ু সুবিচার নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি আমার বরিশালের মানুষদের ভাগ্যের নির্মম পরিহাস।

এখানকার উপকূলীয় বা প্রান্তিক এলাকাগুলোয় বসবাসরত মানুষগুলো এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে,

না আছে তাদের স্থায়ী বসবাসের এক জায়গা, না আছে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা।

নদী ভাঙ্গনের কবলে কেউ হারিয়েছে তার বাড়ি,

কেউ হারিয়েছে তার ভিটে আর কেউ বা হারিয়েছে রক্তে মাংসে গড়া কোনো এক কাছের মানুষকে।

কেউ কেউ নিঃস্ব হয়ে পাড়ি দিয়েছে অজানা পথে, যদি কোথাও ঠাঁই হয়।


আরো পড়ুন: এক বৃষ্টিময় প্রভাত – নুর আতিকুন নেছা
আরো পড়ুন: ব্যবসা শুরু করার প্রশিক্ষণ


পৃথিবীর মুক্তির জন্য লড়াই করা মুক্তিযোদ্ধা রিচি

আমি বরিশাল শহরে বেড়ে ওঠা এক মেয়ে, ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল স্বেচ্ছাসেবামুলক কাজ গুলো করবো।

আর এখন অনেক সংগঠনের সাথেই কাজ করছি।

হয়তো আজন্ম এক দায়িত্ববোধ আর ভালবাসা কাজ করত আমার এই পরিবেশ নিয়ে আর পৃথিবী নিয়ে।

যদিও তখন এতটা জানতাম না এই পরিসরে।

বরিশাল এবং বাংলাদেশে জলবায়ু নিয়ে কাজ করার মত অনেক সংগঠন থাকলেও সর্বোচ্চে উল্লেখনীয় এক সংগঠন হলো ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস।

আমি ২০১৮ সাল থেকেই এই সংগঠন বা এর সাথে সংযুক্ত মানুষজনদের চিনলেও কাজের ধরণ সম্পর্কে তেমনভাবে জানতাম না।

তবে ২০১৯ সালে দশম শ্রেনিতে অধ্যায়নকালীন সময়ে পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন এক সংগঠন আরণ্যক এর সাথে জড়িত হওয়ার সুবাদে ইয়ুথনেটের কাজ নিয়ে পরিষ্কার ধারনা পাওয়ার পর পৃথিবী ও আমার এ দেশ এর জন্য কিছু করা থেকে নিজেকে বিরত রাখার মত ভুল করলাম না।

উল্লেখ্য,এক্ষেত্রে কাজ করার আমার অন্যতম অনুপ্রেরণা ইয়ুথনেটের প্রধান সমন্বয়ক সোহানুর রহমান ভাই ,

তার জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেচনা আর এই দেশের প্রতি ভালবাসা বরাবরই আমাকে মুগ্ধ আর অনুপ্রাণিত করেছে।

জলবায়ু সুবিচার নিয়ে কাজ করতে করতে কবে যে নিজেকে জলবায়ু যোদ্ধা হিসেবে দাবি করে বসলাম তাও বুঝে উঠতে পারিনি।

তবে আপন ধরিত্রীকে ভালবাসাটা মুল যেটা যে কারো মাথায় থাকলে কখনো এই পরিবেশের ক্ষতি করতে পারতো না।

পৃথিবীর মুক্তির জন্য লড়াই করা মুক্তিযোদ্ধা রিচি

জলবায়ু যোদ্ধা হিসেবে ইয়ুথনেট বরিশাল টিমের হয়ে বেশ কয়েকবার জলবায়ু আন্দোলনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় আমার।

তারপর একদিন ইয়ুথনেটের মাধ্যমে ২৫ সেপ্টেম্বর,

২০২০ এ প্রকাশিত হয় জলবায়ু সুবিচার নিয়ে করা আমার এক ডকুমেন্টারি যা খুব অল্পসময়েই বিশ্বমঞ্চে সাড়া ফেলে আর আমি পেয়ে যাই নতুন আরেক অনুপ্রেরণা।

তারপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করে যেতে থাকি।

আর যেহেতু জলবায়ু সুবিচারের কথা আসলেই জেন্ডার জাস্টিসের কথা আসে তাই স্বভাবতই আমার আরেক লক্ষ্য পূরণে নেমে পড়ি।

জেন্ডার জাস্টিস নিয়ে কমবেশি কাজ করতে থাকি। তারপর হাতে আসে এক সুবর্ন সুযোগ।

আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন কপ২৬ এর ” দি হাংগার প্রজেক্ট বাংলাদেশ” এর একজন দেশসেরা চ্যাম্পিয়ন হন আমাদের ইয়ুথনেটের প্রধান সমন্বয়ক সোহানুর রহমান।

আর আমাকে এবং আমার একাগ্র সহপাঠী ও তিনজন সহকর্মীদের এ কাজের দায়িত্ব দেন।

আর আমরাও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সফলভাবে কাজটি সম্পন্ন করে নিজ দেশ সহ বিশ্ব দরবারে বরিশালের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সকল সমস্যা তুলে ধরে তার সম্ভাব্য সমাধানও দেয়ার চেষ্টা করি।

আমাদের দেশের জ্ঞানী -গুণী , গবেষক সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিরাও আমাদের প্রশংসা করেন।

এভাবে আমি একজন জলবায়ু যোদ্ধা হিসেবে গুটি গুটি পায়ে পথ চলছি।

পৃথিবীর মুক্তির জন্য লড়াই করা মুক্তিযোদ্ধা রিচি


আরো পড়ুন: দূরত্ব – পরিসমাপ্তি
আরো পড়ুন: বিখ্যাত আবিষ্কার ও আবিষ্কারকের নাম


একজন জলবায়ু যোদ্ধা হিসেবে সাধারন মানুষদের প্রতি আমার একটা দাবি হলো,একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে নিজ পরিবেশ,

দেশ ও পৃথিবীকে ভাল রাখার দায়িত্ববোধ আপনার মধ্যে সবসময় থাকা উচিত যার জন্য আপনাকে নামের সাথে জলবায়ু যোদ্ধা লাগাতে হবে না।

এই পৃথিবী আপনাকে যতটা আদরে লালন করে আপনি ঠিক ততটা দায়িত্ব পালন না করতে পারলেও কিছুটা করে নিজেকে মানসিকভাবে দায়মুক্ত করুন।

পৃথিবীর যেকোন কাজের মতো জলবায়ু সুবিচারের জন্য ও তরুনদের সম্পৃক্ততা বাঞ্ছনীয়।

তাহলে হয়তো আমরা ভবিষ্যতের পৃথিবীটাকে আরো একটু সুন্দর করে তুলতে পারবো আর আগামী প্রজন্মকে দিতে পারবো নির্মল বাতাস।

সবশেষে এটাই বলবো যে একজন জলবায়ুযোদ্ধা হিসেবে হয়তো আমার জীবনযুদ্ধ অনেকের থেকে অনেকটা কঠিন হতে পারে কিন্তু দিনশেষে আমি নিজেকে এই পৃথিবীর মুক্তির জন্য লড়াই করে বাঁচতে থাকা একজন যোদ্ধা বলতে পারবো।”

 

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

Leave a Comment