চুল পড়া বন্ধ করার খাবার ও নতুন চুল গজানোর উপায়

দিন দিন চুল পড়ে যাচ্ছে এমত অবস্থায় করণীয় কি জানতে চেয়ে অনেকেই আমাদের বিভিন্ন আর্টিকেলের কমেন্ট বক্সে প্রশ্ন করে থাকেন।

আজকের এই আর্টিকেলে চুল ঘন, চুল কালো এবং চুল মজবুত সহ চুল পড়া বন্ধ করার খাবার কিমতা নিয়ে লিখব।

এরপরে বলব কোন তেল ও ভিটামিন ট্যাবলেট নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এবং শেষে থাকছে চুলের যত্ন নেয়ার সঠিক উপায় এবং আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে পরামর্শ।

[ads1]

চুল ঘন, কালো, মজবুত এবং চুল পড়া বন্ধ করার খাবার

চুল পড়া বন্ধ করার খাবার বাদাম: যেমন চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, বলনাথ এগুলোতে আছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাক্ট।

বিশেষ করে ওমেগা সিক্স প্যাক। যা চুলের গোড়া সতেজ রাখতে এবং চুল লম্বা করতে সাহায্য করে।

এই ওমেগা সিক্স প্যাক আমাদের শরীর নিজে থেকে তৈরি করতে পারে না। এগুলো খাবার থেকে নিতে হয়।

এটার অভাবে মাথার চুল পড়ে যায়, চুলের রঙ হালকা হয়ে যায়। তাই প্রত্যেক দিনের নাস্তায় কিছু বাদাম রাখতে পারেন। তবে অনেক পরিমাণে খাবেন না তাহলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।

হলুদ সবজি ও ফলমূল: যেমন মিষ্টি আলু, গাজর, আম, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া এগুলো ভিটামিন এ দিয়ে ভরপুর থাকে।

চুলের জন্মস্থান অর্থাৎ চুলের গোড়া ঠিকঠাক মত কাজ করার জন্য দরকার ভিটামিন এ।

আর সেটার বিশেষ উৎস হলো এই হলুদ আর কমলা রঙ্গের ফলগুলো এবং সবজি। দিনে যতখানি ভিটামিন এ দরকার তা আধাকাপ গাজরে অর্ধেকের বেশি হয়ে যায়।

তাই দিনে কিছু হলুদ ফল বা সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

তৈলাক্ত মাছ: প্রচলিত একটা ধারণা আছে যে, ওমেগা থ্রি প্যাডের জন্য সামগ্রিক মাস’ই খেতে হবে।

তবে আমাদের দেশী মাছ- ইলিশ, কৌ, মলা, চাপিলা এগুলোতে ও ওমেগা-থ্রি প্যাড আছে।

আপনার যেই মাছ ইচ্ছে সেগুলোই খাবেন এগুলো চুল ঘন কালো করতে সাহায্য করে। সাথে প্রোটিনের ও ভালো উৎস।

ডিম: সুন্দর চুল তৈরি করতে ডিম আপনার খুব ভালো বন্ধু। আমাদের চুল শর্করা বা ফ্যাটের তৈরি না।

চুল প্রায় সবটুকুই প্রোটিনের তৈরি। আর আমরা গবেষণা থেকে নিশ্চিত জানি যে খাবারে প্রোটিন এর অভাব হলে চুল ঝরে পড়ে যায়।

কিন্তু আমাদের অনেকের খাবারেই যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন থাকে না।

কারণ আমরা সাধারণত ভাব বেশি খেয়ে থাকি তাই সুন্দর চুলের জন্য খাবারের তালিকায় ডিম রাখবেন আরো কিছু বোনাস রয়েছে- বায়োটিন, সেলেনিয়াম ইত্যাদি।

এগুলো চুল ঘন কালো এবং সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।

চুল পড়া বন্ধ করার খাবার

পালং শাক: চুলের উপকারের পালংশাক একটি চমৎকার খাবার। এতে চারটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আছে যা চুলের ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায়।

ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এই সবগুলোই ঘন কালো এবং সুন্দর চুলের জন্য প্রয়োজন।

[ads1]

আরো পড়ুন: মাসিক নিয়মিত না হলে যা করণীয়
আরো পড়ুন: পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়

ডাল: সুন্দর চুলের জন্য ডাল খুবই উপকারী। ডালে রয়েছে প্রোটিন, ভালো পরিমাণে রয়েছে আয়রন, আয়রন আমাদের মাথার তালুতে রক্ত সরবরাহ করে চুলের গোড়ায় অক্সিজেন পৌঁছাতে সাহায্য করে।

আমরা গবেষণা থেকে নিশ্চিত জানি যে আয়রনের অভাবে চুল পড়ে। সুন্দর চুলের জন্য ডালে আরো কিছু বলাস পয়েন্ট রয়েছে- জিংক, ফোলেট।

খুব পাতলা ডাল না খেয়ে ঘন ডাল খেলে এই পুষ্টি উপাদানগুলো বেশি করে পাবেন।

[ads1]

বিভিন্ন ধরনের বিজ: মিষ্টি কুমড়ার বিচি, সূর্যমুখী ফুলের বিচি, পিসির বিজ এগুলোতে সুন্দর চুলের জন্য অনেকগুলো চমৎকার উপাদান রয়েছে।

মিষ্টি কুমড়ার বিচি তে আছে জিং, সূর্যমুখীর বিচিতে আছে বায়োটিং, পিসির বিচিতে আসে সেলেনিয়াম।

গবেষণায় চুল পড়ার সাথে এগুলোর অভাবের সম্পর্ক রয়েছে।

ছোলা: ছোলাই চুলের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। আয়রন, জিংক এবং প্রোটিন।

এই তিনটির যেকোনো তার অভাবে চুল পড়তে পারে। তাই চুল সুন্দর করতে মাঝে মাঝেই খাবারে ছোলা রাখতে পারেন।

টক দই: এটি প্রোটিনের আরেকটি উৎসব, সাথে চুলের জন্য উপকারী আরো কিছু উপাদান রয়েছে। জিং প্রোটিন এর জন্য মুরগির মাংস ভালো খাবার।

টক ফল: কমলা 🍊, মালটা, লেবু 🍋 এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে।

সুন্দর এবং মজবুত চুলের জন্য ভিটামিন সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি এর অভাবে চুল বিভিন্ন সময় বেঁকিয়ে পেচিয়ে যায়।

আবার ভিটামিন সি এর অভাব হলে শরীরে আয়রন শোষণ করতে পারে না ফলে চুল পড়ে যায়।

শরীর নিজে থেকে ভিটামিন-সি বানাতে পারে না তবে টকজাতীয় ফল খেলে সহজেই সেখান থেকে ভিটামিন-সি নিয়ে নিতে পারে।

যেমন একটা কমলা থেকেই দিনের প্রায় ৮০ শতাংশ চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।

যারা টক একটু কম খেতে পারেন তাদের জন্য টমেটো পেয়ারা ফল গুলো ভিটামিন সি-এর ভালো উৎসাহ যোগাতে সহযোগিতা করবে।

[ads1]

বাহির থেকে চুলের পুষ্টি জোগাতে যা করবেন!

কদুর তেল, চুল পড়ে যাচ্ছে এমন রোগীদের ওপর একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে কদুর তেল তিন মাস ব্যবহার করার পরে তাদের নতুন করে চুল গজিয়েছে, এবং চুল আগের থেকে তুলনামূলকভাবে মোটা হয়েছে। তাই কদুর তেল ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

চাইলে আপনি “PUMPKIN Hair Oil” তৈল টি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। চাইলে আপনি যে কোন ব্রান্ডের কদুর তৈরি ব্যবহার করতে পারেন এতে করে আপনার চুল পড়া ঠেকাতে সাহায্য করবে।

[ads1]

চুল পড়া বন্ধ করতে ভিটামিন!

চুল পড়া বন্ধ করতে বাজারে অনেক ধরনের ভিটামিন ট্যাবলেট বিক্রি হয়ে থাকে।

সেখানে অনেক চমকপ্রদক কথাবার্তা লেখা থাকে, তবে সেগুলোতে বেশিরভাগেই বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

অযথা টাকার অপচয়। চুলের জন্য বেশিরভাগ পুষ্টি উপাদান আলাদা ট্যাবলেট এর চেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার থেকে আসলেই ভাল হয়।

তবে এক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম রয়েছে, সেটি হল ভিটামিন ডি। খাবার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া খুবই কঠিন।

ভিটামিন ডি পাওয়ার সহজ উপায় হল রোদে সময় কাটানো। কিন্তু যাদের পক্ষে রোদ্রের মধ্যে সময় কাটানো সম্ভব না তারা আলাদা করে ভিটামিন ডি ট্যাবলেট খেতে পারেন।

ভিটামিন ট্যাবলেট এর প্রতি একটু সতর্ক থাকবেন, কারণ ও অতিরিক্ত ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়ার ফলে আপনার চুল পড়ে যেতে পারে।

যেমন অতিরিক্ত ভিটামিন ই ট্যাবলেট এর ফলে চুল পড়ে যায়, কিন্তু আপনি হলুদ রঙের ফল এবং সবুজ সবজি খেয়ে যত ভিটামিন এ শরীরের ঢোকান না কেন এতে শরীরের কোন ক্ষতি নেই।

[ads1]

আরো পড়ুন: জীবনসঙ্গীর মধ্যে যেসব গুণ দেখে বিয়ে করবেন
আরো পড়ুন: মাসিকের সময় যে ৬টি কাজ করা উচিত নয়

যে ভুলের কারণে আপনার চুল পড়ে যাচ্ছে!

১! অনেকেই শ্যাম্পু ব্যবহারের পরে কন্ডিশনার ব্যবহার করেন না। এটা চুলের জন্য ক্ষতিকর।

কারণ- আমাদের চুল ভালো থাকার জন্য এবং ভালো রাখার জন্য কিছু তৈল প্রয়োজন। যা মাথার তালু থেকে এমনিতেই চলে আসে।

কিন্তু আমরা যখন শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল ধুয়ে থাকি তখন সেই তৈল ধুয়ে চলে যায়। কন্ডিশনারের কাজ হচ্ছে আবার চুলের তেল গুলো পুনরায় ফেরত দেয়া।

তাই প্রতিবাদ শ্যাম্পু করার পর চুলে কন্ডিশনার লাগাবেন।

২! ভেজা চুল ঘষে ঘষে মুছবেন না। আমরা অনেকেই গোসল করে তোয়ালে দিয়ে ঘষে ঘষে চুল মুছে থাকি, এটি মূলত চুল নষ্ট হয়ে যায়।

এমন না করে তোয়ালে দিয়ে আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে পানি বের করবেন।

৩! ভেজা চুল আঁচড়াবেন না। ভেজা চুল আঁচড়ালে এতে চুল নষ্ট হয়ে যায়।

চুল খুব কোঁকড়া না হলে একটু শুকিয়ে যাওয়ার পর চওড়া দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াবেন।

৪! মেশিনের মাধ্যমে চুল শুকাবে না। চুল বাতাসে শুকিয়ে নেয়া সবচাইতে ভালো,

তবে এটা যদি মেশিনের মাধ্যমে করেন তাহলে সবচাইতে কম হিসেবে ব্যবহার করুন এবং যত অল্প সময়ে করা যায় যেমন সপ্তাহে একবারের বেশি ব্যবহার না করাই উত্তম।

৫! খুব টাইট করে চুল বাঁধবেন না। যারা খুব টাইট করে চুল বাধে সেই টানের কারণে চুল পড়তে পারে।

[ads1]

আরো পড়ুন: মাসিকের সময় যে ৬টি কাজ করা উচিত নয়
আরো পড়ুন: 
যৌন মিলন করার পূর্বে কি করবেন

চুল পড়া বন্ধ করার ওষুধ ও চিকিৎসা!

কিছু রোগের কারণে চুল পড়তে পারে, যেমন- থাইরয়েডের রোগ, রক্তশূন্যতা।

আপনার যদি খাবার দাবার ঠিক থাকে এবং চুলের যত্ন সব ঠিকঠাক ভাবে নিচ্ছেন এর পরও চুল পড়ে তাহলে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।

তিনি খতিয়ে দেখতে পারবেন কোন রোগের কারণে এমন হচ্ছে কিনা, রোগ ধরা পড়লে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করাবেন।

চুল পড়ে থাকার একটা অন্যতম কারণ হচ্ছে, ‘Androgenetic Alopecia’ নামের একটা রোগ।

এই রোগে সাধারণত ছেলেদের মাথায় টাক পড়া শুরু করে, কপালের দুই পাশ থেকে চুল টাক হয়ে যেতে পারে, মেয়েদের সাধারণত টাক হয় না কিন্তু চুল পাতলা হয়ে যায়।

মাথায় সিঁথি বড় হয়ে যায়। এই দুই ক্ষেত্রেই চিকিৎসা রয়েছে দুইটা ওষুদ খুব ভালো কাজ করে।

[ads1]

ডা. তাসনিম জারা (চিকিৎসক, ইংল্যান্ড)

Leave a Comment