এটি অবশ্যই জানতে হবে যে গর্ভাবস্থায় সহবাস সীমাবদ্ধ করার কোনো কারণ নেই এবং এটি আপনার বা শিশুর স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি করবে না।
আপনার দেহের পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিন এবং আপনার সঙ্গীর সাথে যৌ’ন সম্পর্ক তৈরি করুন, কারণ এটি অত্যন্ত উপকারী এবং এটি আপনার ও আপনার শিশুর কোনো ক্ষতি করবে না।
গর্ভাবস্থায় যৌ’ন’তায় লিপ্ত হওয়া একেবারেই নিরাপদ এবং এর সাথে যুক্ত বেশ কয়েকটি উপকারিতাও রয়েছে।
চলুন আমরা গর্ভাবস্থায় সহবাস করার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই-
গর্ভাবস্থায় সহবাস করার উপকারিতা
- দেহে রক্ত সংবহনে সাহায্য
- আরও ভালো তৃপ্তি এবং আরও ভাল অর্গাজম
- পেলভিক ফ্লোর পেশীকে শক্তিশালী করে
- অনাক্রম্যতা উন্নতি করে এবং রোগপ্রতিরোধ বাড়ায়
- দম্পতির মধ্যে থাকা বন্ধনকে উন্নত করে
- রক্তচাপ কমায়
- আত্মমর্যাদা উন্নতি করে
- মূত্রের লিকেজ কমানো এবং মূত্রথলিতে ভালো নিয়ন্ত্রণ
- প্রসবোত্তর আরোগ্যলাভ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে
- প্রসব শ্রম এবং সহজ প্রসবে সহায়তা
গর্ভাবস্থায় সহবাস কি জায়েজ?
কোরআনের আলোকে বিশ্লেষণঃ তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র। সুতরাং তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে বিচরণ করো। (সুরা বাকারা – ২২৩)
এই আয়াত থেকে বুঝা যায় মুসলিম দম্পতিরা যখন ইচ্ছে তখন যে ভাবে ইচ্ছে সেভাবে যৌ’নসম্ভোগ করতে পারবে। কাজেই যদি গর্ভাবস্থায় তারা সহবাস করতে চায় তাহলে সেটাও জায়েজ।
কোনো অসুবিধে নেই।সহবাসের ক্ষেত্রে কেবল দুটি বিষয় লক্ষ্য রাখা আবশ্যক।
- একটি হলো – স্ত্রীর সাথে পায়ুকাম বা অ্যানাল সে’ক্স করা যাবে না।
- অন্যটি হলো – স্ত্রীর মাসিক ঋতুস্রাব চলাকালে সহবাস করা যাবে না।
‘যে ব্যক্তি ঋতুস্রাবগ্রস্ত স্ত্রীর সাথে বা স্ত্রীর পায়ুপথে সহবাস করলো বা গণকের কাছে এসে তার কথা বিশ্বাস করে নিলো, সে প্রকৃত পক্ষে মুহাম্মাদের উপর অবর্তীণ সবকিছু অস্বীকার করলো।’ (তিরিমিযি – ১৩৫ )
একইভাবে ইহরাম ও রোজা অবস্থায় সহবাস নিষিদ্ধ। তাছাড়া অন্য সকল সময় সকল পন্থায় সহবাস বৈধ রয়েছে।
তাই গর্ভাবস্থায় সবহবাস করতে কোনো আপত্তি নেই। এটা জায়েজ হিসাবে পরিগণিত। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি বাধা রয়েছে যেগুলো নিচে আলোচনা করা হয়েছে।
এ বাধা গুলো কেবলমাত্র আপনার শরীরের জন্য লিমিটেশন করা হয়েছে।
গর্ভাবস্থায় সহবাস কি নিরাপদ?
যদি আপনার গর্ভকালীন সময় স্বাভাবিক ভাবে থাকে তাহলে আপনি সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায়, প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত সহবাস করতে পারেন।
এ ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম অনুসরণ করলে কোনো প্রকার বিপত্তির সম্ভাবনা থাকে না।
সহবাসের সময়ের স্বাভাবিক নড়াচড়া গর্ভের শিশুর কোনো ক্ষতি করে না। গর্ভের শিশু তলপেট এবং জরায়ুর শক্ত পেশী দিয়ে সুরক্ষিত থাকে।
আপনার শিশু অ্যামিনিওটিক স্যাকের মধ্যে অবস্থান করে যা তাকে সুরক্ষিত রাখে।
জরায়ুর মুখ মিউকাস প্লাগ দ্বারা সিল করা থাকে, যা শিশুকে ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করে।
সহবাসের সময় পুরুষেরে গোপনাঙ্গ নারীর গোপনাঙ্গ পর্যন্তই প্রবেশ করে। তা গর্ভের শিশু পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনা। তাই গর্ভের শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা থাকেনা।
সহবাসের পর অর্গাজম হলে বাচ্চার নড়াচড়া বৃদ্ধি পেতে পারে। এটা হয় অর্গাজমের পর আপনার হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার কারণে, স’হ’বাসের ফলে বাচ্চার কোন অসুবিধার কারণে নয়।
অর্গাজমের কারণে জরায়ুর পেশীতে মৃদু সংকোচন (কন্ট্রাকশন) হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কখন সহবাস করবেন না
যদিও গর্ভবতী মহিলা এবং বাবা-মায়ের জন্য যৌ’নতার প্রচুর উপকার রয়েছে, এমন কিছু শর্ত রয়েছে যার কারণে যৌ’নতা এড়ানো সবচেয়ে ভাল। আপনার গর্ভাবস্থায় যৌ’নতা সম্পর্কে পুনর্বিবেচনা করা উচিত যদি:
- আপনি গর্ভপাতের ঝুঁকিতে রয়েছেন বা আগে গর্ভপাত হয়েছে
- অ্যামনিয়োটিক থলিতে একটি ফেটে যাওয়া ঝিল্লি রয়েছে
- আপনি অকাল প্রসবের ঝুঁকিতে আছেন
- কোনো অজানা কারণে ক্র্যাম্প হচ্ছে এবং রক্তপাত হচ্ছে
- জরায়ু খুব তাড়াতাড়ি প্রসারিত হয়েছে
- গর্ভে যমজ বা তারও বেশি শিশু রয়েছে
- প্লাসেন্টা জরায়ুতে খুব নিচে রয়েছে
- জরায়ু ছোট বা জরায়ুর অক্ষমতা রয়েছে।
কি কি কারনে গর্ভকালীন সময় সে’ক্স করা থেকে বিরত থাকতে হবে?
- কোন কারনে যৌ’না’ঙ্গ থেকে রক্তক্ষরন হলে
- গর্ভকালীন সময়ে অল্প কিংবা বেশি রক্তক্ষরন পরিলক্ষিত হলে শাররীক মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রাক প্রসব বেদনাঃ বীর্যের সংস্পর্শে প্রোস্টাগ্লেনডিনস্ সংকুচিত হবার সম্ভাবনা থাকে যা প্রাক-প্রসব-বেদনাকে ঝামেলাপূর্ণ করে তুলতে পারে।
আপনার কিংবা আপনার স্বামীর কোন প্রকার যৌ’ন-সংক্রামন ব্যাধি থাকলে গর্ভকালীন শাররীক মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে।
গর্ভবতী অবস্থায় নারীর জন্য আরামদায়ক যৌ’ন আসন ভঙ্গি সমুহঃ
গর্ভকালীন সময় অন্য সময়কালের মত আসনভঙ্গিতে সে’ক্স করা যায়না। এটি মা এবং সন্তান উভয়ের জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে। তাই এই সময়কালে সে’ক্স আসন সম্পর্কে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরী।
নারী উপরেঃ এ আসনে নারীর নিয়ন্ত্রন থাকে কত গভীরতায় লিঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হবে। এ পদ্ধতিতে বেশিরভাগ কার্যক্রম নারী নিজের ইচ্ছে/সুবিধা মত করতে পারেন। এই ভঙ্গিতে গর্ভের পুরো সময়কাল এমনকি শেষ সময়েও নারী অনেক কম ঝুকিতে থাকেন।
স্পুনিং/একপাশে কাত হয়ে শুয়ে মিলনঃ এ আসনে নারী হাটেু ভেঙ্গে পাশে কাত হয়ে শুবেন এবং স্বামী স্ত্রীর পিছেনে থেকে সে’ক্স করবেন। স্পুনিং ভাল ভাবে কাজ করে যদি পুরুষ নারীর ঊরূর মাঝে দিয়ে লি’ঙ্গ সঞ্চালন করেন। এ পদ্ধতিতে তলপেটে কোন চাপ পড়ে না এবং আস্তে আস্তে মিলন করার সুবিধা থাকে যা গর্ভবতীর জন্য জরুরী।
বিশেষ সতর্কতাঃ
এতক্ষণ আমরা জানলাম গর্ভাবস্থায় সহবাস করার নিয়ম, এবং ক্ষতি কিংবা উপকারিতা কি কি রয়েছে সমস্ত বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।
কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটার উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের অবশ্যই মেনটেইন করে চলতে হবে। যেগুলো সম্পর্কে আমাদের অবগত হতে হবে।
আপনার গর্ভে যদি যমজ সন্তান এসে থাকে সে ক্ষেত্রে গর্ভকালীন সহবাস সাবধানতার সাথে সম্পন্ন করতে হবে। অথবা এড়িয়ে চলতে পারলে আরো ভালো।
আপনি অকাল প্রসবের ঝুঁকিতে আছেন এসময় সহবাস মোটেও নিরাপদ নয় তাই এই আচরণ এবং যথাসম্ভব এটিকে ইগনোর করুন।
প্লাসেন্টা জরায়ুতে খুব নিচে রয়েছে এ সময়ে সহবাস মোটেও নিরাপদ নয় তাই এটি কেউ এড়িয়ে চলুন এবং বিরত থাকুন।
জরায়ু খুব তাড়াতাড়ি প্রসারিত হয়েছে এ সময় সহবাস মোটেও নিরাপদ নয় তাই এড়িয়ে চলুন এবং যতটা সম্ভব নিজেকে সহবাস থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করুন।