চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। অর্থনীতির সংস্কৃতি এবং প্রকৃতি– এই তিনটি দিক দিয়ে চট্টগ্রাম জেলা অনন্য। ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে চট্টগ্রাম জেলা যেন ফার্স্ট চয়েজ। চট্টগ্রাম জেলা কেন বিখ্যাত মূলত চট্টগ্রাম জেলা মেজবান ও শুঁটকি এর জন্য বিখ্যাত।
চট্টগ্রাম জেলার বিখ্যাত ১০টি স্থান:
- জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর
- ফয়েজ লেক
- আগ্রাবাদ
- সীতাকুন্ড
- চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা
- চন্দ্রনাথ পহাড় ও মন্দির
- কদম মোবারক মসজিদ
- ওলি খাঁর মসজিদ
- কোর্ট বিল্ডিং
- নন্দনকানন
►► সিলেট কিসের জন্য বিখ্যাত?
►► রাজশাহী কিসের জন্য বিখ্যাত?
চট্টগ্রাম জেলা
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হচ্ছে চট্টগ্রাম, যা চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত এই জেলাটি যেমন পাহাড়, সমুদ্র ও অরন্যের মিশেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ঠিক তেমনি এই জেলার ঐতিহ্য ও ইতিহাস ও সমানভাবে সম্মৃদ্ধশীল।
৫,২৮২ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এই জেলাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৬৬৬ সালে। এই জেলার বেশকিছু আদি ও আঞ্চলিক নাম খুঁজে পাওয়া যায়। শোনা যায়, যেমন: চাটিগাঁ, চাঁতগাও। এই নামগুলো উক্ত এলাকার জন্য পূর্বে বেশ প্রচলিত ছিল। চট্টগ্রাম জেলার পূর্বনাম ছিল ইসলামাবাদ অথবা পোর্ট গ্রান্ড। মোট ১৫ টি উপজেলায় নিয়ে এই জেলাটি গঠিত হয়েছে।
বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে বিখ্যাত চট্টগ্রাম জেলা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। রপ্তানির প্রায় অধিকাংশ অবদান এই চট্টগ্রাম বন্দরের। চট্টগ্রাম বন্দরকে বিশ্বের একমাত্র প্রাকৃতিক সমুদ্র বন্দর বলা হয়। এটি দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের মধ্যে তৃতীয় ব্যস্ততম বন্দর হিসেবে বিবেচিত।
চট্টগ্রাম জেলা কেন বিখ্যাত?
চট্টগ্রাম জেলার একটি অন্যতম আকর্ষণ হলো সন্দীপ। বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা সুন্দরী এই জলকন্যা বাংলাদেশের প্রাচীন একটি দ্বীপ যা পূর্বে জনমানব শূন্য থাকলেও বর্তমানে প্রায় দুই লাখের মতো মানুষের বসবাস রয়েছে। কর্ণফুলী নদীর মোহনায়, চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত।
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনমুগ্ধকর দৃশ্যের সাক্ষী হতে প্রায় সময়ই এই সৈকতে ভিড় দেখা অসংখ্য মানুষের। পতেঙ্গা সৈকতের বিখ্যাত সব খাবার যেমন, মসলাযুক্ত কাঁকড়া ভাজা সহ আরো অনেক সামুদ্রিক মুখরোচক খাবারের স্বাদ পাওয়া যাবে এই সৈকতে আসলে। চট্টগ্রাম জেলা কেন বিখ্যাত প্রশ্নের উত্তরে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে সঠিক উত্তর হিসেবে বিবেচনায় রাখা যায়।
শিশু ও দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেল স্টেশন থেকে একটু দূরে খুলশী নামক এলাকায় তৈরি করা হয়েছে একটি কৃত্রিম হ্রদ, যা ফয়েজ লেক নামে বিখ্যাত। এই ফয়েজ লেকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো অভ্যন্তরীণ পরিবেশ। সাধারণের চিত্তবিনোদনের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রকমের রাইডের ব্যবস্থা।
সেই সাথে রয়েছে একটি ছোট চিড়িয়াখানা, যেখানে সহজেই চোখে পড়বে হরিণের সার্বক্ষণিক বিতরণ। চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের নাম বাটালি পাহাড়। বাটালি হিল বা বাটালি পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ২৮০ ফুটের কাছাকাছি। এই পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়াকে বলা হয় শতায়ু অঙ্গন। উচ্চতা একটু বেশি হলেও এই পাহাড়ের আহরণের অভিজ্ঞতা বেশ চমকপ্রদক।
চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলায় অবস্থিত ৬৫৫ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট চন্দ্রনাথ পাহাড়। এই পাহাড়টিকে কেন্দ্র করে এর কাছে তৈরি করা হয়েছে সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক। সহস্ত্রধারা ও সুপ্ত ধারা নামক দুটি জলপ্রপাত চন্দ্রনাথ পাহাড়ের গা ঘেঁষে বয়ে চলেছে। এই পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির। এই মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে পৌরাণিক ইতিহাস।
চট্টগ্রাম জেলার বিখ্যাত স্থান
হিন্দু শাস্ত্র মতে তাদের সতী মাতা দেহত্যাগ করলে এই স্থানে দেবীর দক্ষিণ হস্তার্ধ পতিত হয়। এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর শিবর্তুদশী তিথির পূজা উপলক্ষে ফাল্গুন মাসে বেশ ঘটা করে শিবর্তুদশী মেলা আয়োজন করা হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পরিপূর্ণ এই স্থানটি যেমন সনাতন ধর্মালম্বীদের জন্য পবিত্র তীর্থস্থান, ঠিক তেমনি ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য একটি বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান।
বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলার সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে কর্ণফুলী টানেল। বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক কাঠামো উন্নয়নের জন্য যে সকল মেগা প্রজেক্ট গ্রহণ করেছে তার মধ্যে কর্ণফুলী টানেল অন্যতম। বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী গুলোর মধ্যে একটি হলো কর্ণফুলী নদী। এই নদীর তলদেশে নির্মিত টানেলটির নাম “বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান টানেল” দেওয়া হয়েছে।
এই টানেলের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৯ কিলোমিটার। নির্মিত এই টানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য সেবা ও জ্বালানি বাজারের প্রবেশগম্যতা যেমন বৃদ্ধি হবে, সেই সাথে কমিয়ে আনা যাবে অসংখ্য অশুল্ক বাধা সমূহ। বাণিজ্যিক শহর খ্যাত চট্টগ্রামের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সুদৃঢ় হবে কর্ণফুলী টানেলের কল্যাণে। চট্টগ্রামের মানুষ বেশ খাদ্যপ্রেমীও বটে। অতিথি আপ্যায়নে চট্টগ্রামবাসীরা বরাবরই এক ধাপ এগিয়ে। মেজবানের ভাত নামক খাবারটি চট্টগ্রাম জেলার জন্য বেশ বিখ্যাত। এছাড়া রয়েছে নোনা ইলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের শুঁটকি।
চট্টগ্রাম জেলা কেন বিখ্যাত প্রশ্নের একটি বিকল্প উত্তর হচ্ছে বিভিন্ন রকম সুস্বাদু সামুদ্রিক খাবার। শিক্ষার দিক থেকেও চট্টগ্রাম নগরী এগিয়ে আছে। চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া রয়েছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এর মতো সনামধন্য সেরা বিদ্যাপীঠ।
►► যশোর কিসের জন্য বিখ্যাত
►► বগুড়া কিসের জন্য বিখ্যাত জেলা?
চট্টগ্রাম জেলা নিয়ে প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন: বাংলাদেশের বৃহত্তম বিভাগ কোনটি?
উত্তর: চট্টগ্রাম বিভাগ
প্রশ্ন: চট্টগ্রাম জেলা কেন বিখ্যাত?
উত্তর: সমুদ্র বন্দর, পাহাড় এবং বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের জন্য
প্রশ্ন: চট্টগ্রাম জেলা কোন নদীর তীরে অবস্থিত?
উত্তর: কর্ণফুলী নদীর তীরে
প্রশ্ন: চট্টগ্রাম জেলা কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: ১৬৬৬ সালে
প্রশ্ন: বাংলাদেশের কোন জেলাটি সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: চট্টগ্রাম জেলা
প্রশ্ন: নিচের কোন জেলাটিকে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হয়?
উত্তর: চট্টগ্রাম জেলাকে
প্রশ্ন: বাংলাদেশের সর্বপ্রথম সমুদ্র বন্দর কোনটি?
উত্তর: চট্টগ্রাম বন্দর
প্রশ্ন: বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম সমুদ্র বন্দর কোনটি?
উত্তর: চট্টগ্রাম বন্দর
প্রশ্ন: ফয়েজ লেক কোন জেলায় অবস্থিত?
উত্তর: চট্টগ্রাম জেলায়
প্রশ্ন: সন্দীপ দ্বীপটি কোন জেলার অন্তর্গত?
উত্তর: চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত