উত্তরবঙ্গের পরিচিত একটি জেলার নাম নীলফামারী জেলা। পূর্বে জেলাটি বৃহত্তর রংপুর জেলার অংশ ছিল। শুধু রংপুর বিভাগেই নয়, নীলফামারী জেলা সারা বাংলাদেশে নানা কারণে আলোচিত। আসুন এবার নীলফামারী জেলা কেন বিখ্যাত প্রশ্নটির উত্তর জানার চেষ্টা করি।
নীলফামারী জেলার ১০টি বিখ্যাত বা দর্শনীয় স্থান:
- কুন্দুপুকুর মাজার
- ময়নামতি দুর্গ
- নীলফামারী জাদুঘর
- ধর্মপালের রাজবাড়ী
- হরিশচন্দ্র পাঠ
- নীলসাগর
- বাসার গেট
- চীনা মসজিদ
- স্মৃতি আম্লান
- ভীমের মায়ের চুলা
►► বগুড়া কিসের জন্য বিখ্যাত জেলা?
►► সিলেট কিসের জন্য বিখ্যাত?
নীলফামারী জেলা
রংপুর বিভাগের ৮ টি জেলার মধ্যে নীলফামারী জেলা একটি। নীলফামারী জেলার উপজেলার সংখ্যা ৬ টি এবং সংসদীয় আসন সংখ্যা ৪ টি। নীলফামারী জেলার আয়তন ১,৬৪৩ বর্গ কিলোমিটার এবং প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ এই জেলায় বাস করে আসছে। পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছিল যে নীলফামারী জেলা একসময় বৃহত্তর রংপুর জেলার অংশ ছিল। কিন্তু ১৯৮৪ সালে অন্যান্য বৃহত্তর জেলাগুলো ভেঙে অনেকগুলো ছোট ছোট জেলা গঠিত হয়। একই সালে রংপুর থেকে আলাদা করে নীলফামারী জেলা গঠন করা হয়।
অবস্থানগত দিক দিয়ে নীলফামারী জেলা উত্তরবঙ্গের একটি সীমান্ত জেলা। নীলফামারী জেলার উত্তর সীমান্তে ভারতের সীমান্ত রয়েছে এবং পূর্ব দিকে লালমনিরহাট জেলা, দক্ষিণ দিকে রংপুর জেলা ও দিনাজপুর জেলা এবং পশ্চিম দিকে পঞ্চগড় জেলা অবস্থিত। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে নীলফামারী জেলার দূরত্ব প্রায় ৪০০ কিলোমিটার।
নীলফামারী জেলা কেন বিখ্যাত?
নীলফামারী জেলা মূলত সন্দেশের জন্য দেশ জুড়ে বিখ্যাত। নীলফামারী জেলার একটি উপজেলা হচ্ছে ডোমার। এই শহরটি সন্দেশ তৈরিতে সারাদেশে সুনাম অর্জন করেছে। বহু বছর ধরেই ডোমারের সন্দেশ বাংলার মানুষের কাছে একটি পরিচিত মিষ্টান্ন হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। ডোমারের সন্দেশের সারা বাংলাদেশে চাহিদা রয়েছে এবং অনলাইনের মাধ্যমে দেশের যে কোন স্থানে বিক্রয় করা হচ্ছে। নীলফামারী জেলা কেন বিখ্যাত প্রশ্নের সোজা সাপ্টা উত্তর হচ্ছে ডোমারের সন্দেশ। তবে শুধু তোমারই সন্দেশে জন্যই যে জেলাটি বিখ্যাত, তা কিন্তু নয়। নীলফামারী জেলার অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে নীলফামারী এখন একটি পরিচিত স্থানের নাম হয়ে উঠেছে। আসুন একে একে আরো অনেকগুলো কারণ জেনে নেই।
এই বিখ্যাত নীলফামারী জেলার ছয়টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তম উপজেলা হচ্ছে সৈয়দপুর উপজেলা। সৈয়দপুরের খ্যাতি সারা বাংলাদেশ জুড়ে শোনা যায়। সৈয়দপুরের নাম আপনি কখনো না কখনো শুনেছেন অথবা এই উপজেলায় কোনো না কোনো কাজ হয়তো এসেছেন। মজার বিষয় হচ্ছে যে, সৈয়দপুর উপজেলা আসলে একটি বৃহৎ শহর। এমন কি নীলফামারী জেলা শহরের চেয়েও সৈয়দপুর শহর বৃহত্তম। শুধু তাই নয় রংপুর বিভাগের রংপুর ও দিনাজপুর শহরের পরেই বৃহত্তম শহর হিসেবে সৈয়দপুর শহরের নাম আসে। অর্থাৎ এই বিভাগের অন্য ছয়টি জেলা শহরের চেয়েও সৈয়দপুর বৃহত্তম।
সৈয়দপুরের মত একটি উপজেলা এত উন্নতি এবং সমৃদ্ধ কিভাবে হলো? এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। যাদের মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ের সবচেয়ে বৃহত্তম কারখানাটি এই উপজেলায় অবস্থিত। আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে কারখানাটি হচ্ছে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। শুধু তাই নয়, এই কারখানা থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ট্রেনের যন্ত্রাংশ ঠিক করা হচ্ছে এবং বগি মেরামত করা হচ্ছে। যার কারণে সৈয়দপুর উপজেলায় সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য কর্মস্থল। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাটি ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তখন থেকে এই অঞ্চলের লোকালয়ে সৃষ্টি হয়েছে।
নীলফামারী জেলার দর্শনীয় স্থান
রেলওয়ে কারখানা ছাড়াও রংপুর বিভাগের একমাত্র বিমানবন্দরটি সৈয়দপুর শহরের পাশে অবস্থিত। সৈয়দপুর বিমানবন্দরটির উপর একই সাথে রংপুর বিভাগের ৮ টি জেলার মানুষ নির্ভর করে আসছে। এখন আঞ্চলিক বিমানবন্দর হলেও বাংলাদেশ সরকার এটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে রূপান্তর করতে চলেছে। খুব শীঘ্রই বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের পর উত্তরবঙ্গে উন্নয়নের এক অভিনব মাত্রা যোগ হবে।
নীলফামারী জেলার একটি আকর্ষণীয় ভ্রমণ স্থান হচ্ছে নীলসাগর। যদিও এটির নামের সাথে সাগর শব্দটি রয়েছে, কন্তু এটি মূলত একটি দিঘি। নীলফামারী জেলা কেন বিখ্যাত প্রশ্নটি একটা বিকল্প উত্তর নীলসাগর নামক স্থানটি হতে পারে। নীলসাগর নামের পূর্বে এটি বিন্না দিঘি নামে প্রসিদ্ধ ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এই দিঘিটির নাম নীলফামারী জেলার নামের সাথে মিলিয়ে নীলসাগর করা হয়। সেই সাথে জেলা প্রশাসন এটিকে আরো আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলে। বর্তমান এটি একটি দারুণ নিদর্শন স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রতিবছর এখানেই হাজার হাজার মানুষ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আসে এবং বিশাল দিঘীটির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করে। এই নীলসাগর থেকেই নীলফামারী জেলা দিয়ে চলাচলরত একটি ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেনের নাম নীলসাগর এক্সপ্রেস করা হয়েছে।
নীলফামারী একটি সীমান্ত জেলা। নীলফামারীর সাথে ভারতের একটি লম্বা সীমান্ত রয়েছে। ভারতের সীমান্তের কাছাকাছি বাংলাদেশের একটি শহর হচ্ছে চিলাহাটি। এটি ডোমার উপজেলার একটি বৃহত্তম শহর এবং পৌরসভা। চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশন হতে ভারতের হলদিবাড়ি রেলওয়ে স্টেশনের সরাসরি রেল সংযোগ রয়েছে। এই রেল পথ দিয়ে আগে থেকে ভারতের সাথে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করা হতো। বর্তমানে এই রুট দিয়ে একটি আন্তর্জাতিক ট্রেন চলাচল করছে, যার নাম মিতালি এক্সপ্রেস।
►► পঞ্চগড় জেলা কেন বিখ্যাত?
►► ফরিদপুর জেলা কেন বিখ্যাত জানেন?
নীলফামারী জেলা নিয়ে প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন: নীলফামারী জেলা কেন বিখ্যাত?
উত্তর: সন্দেশের জন্য
প্রশ্ন: বাংলাদেশ রেলওয়ে সর্ববৃহৎ রেলওয়ে কারখানাটি কোন জেলায় অবস্থিত?
উত্তর: নীলফামারী জেলায়
প্রশ্ন: বাংলাদেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কোনটি হতে চলেছে?
উত্তর: সৈয়দপুর বিমানবন্দর
প্রশ্ন: নীলসাগর নামক দিঘিটি কোন জেলায় অবস্থিত?
উত্তর: নীলফামারী জেলায়
প্রশ্ন: চিলাহাটি নামক সীমান্ত শহরটি কোন জেলায় অবস্থিত?
উত্তর: নীলফামারী জেলায় অবস্থিত