বিল গেটস এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

বিংশ শতাব্দির শেষ ভাগের উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিল গেটস একটি কিংবদন্তী নাম। আশির দশকে শুরু করা সেই ছোট পরিশরে ব্যবসাটি আজ পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের রূপ নিয়েছে। তার উদ্দেশ্য ব্যবসার পাশাপাশি পৃথিবীর মানুষের জীবন-যাত্রার মান ধরন বদলে দিয়েছে ১৯৭৫ সালে জন্ম নেওয়া এই প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি ফোরচুন ম্যাগাজিনের পাঁচ শত সফল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে ৩০ তম স্থান দখল করেছে। ২০২১ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত তার নিট সম্পদের আনুমানিক মূল্য ছিল ১৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা টাকায় রূপান্তর করলে হয় প্রায় ১৫ লক্ষ কোটি টাকা ($1 = ৳92 ধরে)।

কে এই বিল গেটস?

তার পুরো নাম উইলিয়াম হেনরি গেটস তৃতীয়। তিনি ১৯৫৫ সালে ২৮ অক্টোবর ওয়াশিংটনের সিয়েটলে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি বিল গেটস নামে সবার কাছে পরিচিত এবং পৃথিবীর অন্যতম একজন প্রভাবশালী প্রযুক্তিবীদ।

কম্পিউটার জগতের অন্যান্য উদ্ভাবকদের চেয়ে বিল গেটস শিশু বয়সেই একটু বিশেষ সুবিধা পেয়েছেন। তিনি শৈশবে লেকসাইড প্রিপ স্কুল নামে সিয়েটলের একটি নামি-দামি প্রতিষ্ঠানে লেখা-পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। তৎকালীন এই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের কম্পিউটার এর সাথে পরিচিত হবার সুযোগ দেওয়া হতো। বিল গেটস খুব দ্রুত নতুন এই কম্পিউটার এর প্রেমে পরে যান এবং সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাতে সময় দিতে থাকেন। তার এই দৃঢ়তা, পরিশ্রম তাকে একজন সফল প্রোগ্রামার হতে সাহায্য করেছিল।

বিল গেটস এর উদ্যোক্তা হয়ে উঠা

তিনি ১৯৭০ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে পল এলেনের সাথে ব্যবসা শুরু করেন। তারা একসাথে রাস্তার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করেন যা ২০ হাজার ডলারে বিক্রি করেন। তার পরে এলেন ও বিল গেটস একটি প্রতিষ্ঠান করবেন বলে ভাবেন। কিন্তু বিল গেটস এর বাবা-মা এতে রাজি হননি। কারণ তার বাব-মা চেয়েছিল সে একজন আইনজীবী হবে। তাই তাকে হার্ভার্ড কলেজে ভর্তি করেন। কিন্তু তার কাছে পড়া লেখা ভালো লাগছিল না ফলে তিনি উচ্চ শিক্ষা থেকে ধিরে ধিরে আগ্রহ হারিয়ে ফেললেন। এর পরে তিনি এলেন এর সাথে MITS এল্টের কম্পিউটার এর জন্য অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার তৈরি করেন।


►► এ আর রহমান এর জীবনী
►► সৈয়দ আলী আহসান এর জীবনি


মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা

১৯৭৫ সালে এলেন এবং গেটস যৌথভাবে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন। “মাইক্রো কম্পিউটার” থেকে মাইক্রো এবং “সফটওয়্যার” থেকে সফট শব্দের সমন্বয়ে “মাইক্রোসফট” নামটি সৃষ্টি করা হয়। প্রতিষ্ঠার কিছু দিন পরে থেকে মাইক্রোসফট সবার কাছে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হতে উঠে। তবে মাইক্রোসফট শুরুর দিকের যাত্রা অতো মসৃণ ছিল না। মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠিত হতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে

এর একটি উদাহরণ হচ্ছে মাইক্রোসফটের “আলটায়ার বেসিক কম্পিউটার” সিস্টেমটি বেশ জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু এটি বাজার জাত করার পূর্বেই তার একটি কপি ফাঁস হয়েগিয়েছিল। আর ঠিক এই কারণেই গ্রাহকেরা টাকা দিয়ে এই সেবাটি কিনতে আগ্রহী হচ্ছিল না কেননা তারা ফ্রিতেই এটি পাচ্ছিল। বিল এই বিষয়টিতে মোটেও খুশি ছিলেন না। তাই তিনি ১৯৭৬ সালে সকল কম্পিউটার ব্যবহার কারিদের কাছে একটি করে চিঠি পাঠায় তাতে লেখা থাকে

“ফ্রী-তে সফটওয়্যার বিতরন ভালো ভালো নতুন সফটওয়্যার বানাতে অনাগ্রহী করেতুলে। কারণ এর ফলে সফটওয়্যার নির্মাতাদের সময় এবং পরিশ্রম নষ্ট হয়।” কিন্তু তার এই চিঠিতে কেউ সারা দেয়নি। এই সিস্টেম ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৯০% লোক টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। কেননা তারা পাবলিশের আগেই সফটওয়্যার টি পেয়ে গিয়েছিল। মাত্র ১০% মানুষ টাকা দিয়ে তাদের এই সেবাটি কিনতে আগ্রহী ছিল।

এর পরেও তিনি অটল থেকেছেন তিনি ভিন্নভাবে এটি করতে চাইলেন। পরে তিনি লাইসেন্স পলিছি নিয়ে আসেন। এবং ১৯৭৬ সালে “মাইক্রোসফট” ট্রেড নামটি নিউ মেক্সিকো রাজ্যের সেক্রেটারির কাছে রেজিস্ট্রার করেন।

মাইক্রোসফটের স্বতন্ত্র ও স্বাধীন ব্যবসা পরিচালনা

MITS এর প্রেসিডেন্ট রবার্টের সাথে বিল এর মনোমালিন্য সম্পর্ক ছিল এর কারন ছিল সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ব্যবসা পরিচালনা করা। ১৯৭৬ সালে মাইক্রোসফট MITS থেকে মুক্তি পায় এবং একটি স্বতন্ত্র কম্পানিতে পরিণত হয়। ১৯৭৯ সালে গেটস তার কোম্পানিকে ওয়াসিংটনের বেলভ্যুতে স্থানান্তর করে মন দিয়ে কাজ শুরু করেন এবং আপারেশন, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, বিজনেস ও মার্কেট সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই ২০ জন করে তরুন কে নিয়ে কাজ শুরু করেন।

মাইক্রোসফটের সফলতা

অ্যাপল আই বি এম ইন্টেল এর মত কোম্পানি যখন উন্নতির দিকে যাচ্ছিল মাইক্রোসফট তখন তার সকল সমস্যার সমাধান করছে। এ কাজে তিনি তার মা কেউ মাঝে মাঝে সাথে নিতেন তার মায়ের সাথে বিভিন্ন কোম্পানির ভালো সম্পর্ক ছিলো।

এই কারনের জন্যই তিনি আই বি এম এর CEO সাক্ষাৎ পান এবং ১৯৮০ সালে আই বি এম তার ব্যাক্তিগত কোম্পানির জন্য সফটওয়্যার খোঁজ করছিলেন। মাইক্রোসফট এই সময় সুযোগ পেয়ে যায় এবং আই বি এম এর সাথে মিল রেখে একটি সফটওয়্যার কিনে নেয়। তার এই নতুন কেনা সফটওয়্যারে সাথে আই বি এমের খাপ খাওয়াতে চায়। তিনি এই কাজটা করেন ৫০ হাজার ডলারের বিনিময়ে। অপর দিকে তার তৈরি সফটওয়্যারে জন্য সমান অর্থ পেয়ে থাকেন।

আই বি এম সফটওয়্যার সোর্স কোড নিতে চায় এবং গেসট এটির জন্য আলাদা আলাদা লাইসেন্স পায়। তার সফটওয়্যারে নাম দেয় MS-DOS ১৯৭৯-১৯৮১ এর ভিতরে মাইক্রোসফট বিপুল প্রচার লাভ করে। এভাবে ধারাবাহিক সাফল্যের ফলে তিনি ১৭ বার বিশ্বের সেরা ধনী হয়েছিলেন।

ব্যাক্তি জীবনে বিল গেটস

সংসার জীবনে বিলগেটসের তিন সন্তান ছিল। বাবা হিসেবে তিনি ছিলেন আদর্শ এর একটি উল্লেখ্য যোগ্য চিত্র হচ্ছে তার সন্তানদের ১৪ বছরের আগে তিনি কোনো ধরনের মোবাইল ফোন দেননি। এমনকি প্রযুক্তি বিশ্বের এত বড় একজন ব্যক্তি হয়েও তিনি এবং তার পরিবারের লোকেরা কতক্ষণ প্রযুক্তি পন্য ব্যবহার করবেন সে সময়ও নির্ধারিত ছিল।

এছাড়াও তিনি স্বামী হিসেবেও অনেক রোমান্টিক ছিলন। এবং পরিবারের কর্তা হিসেবে তিনি ছিলেন যথেষ্ট আদর্শবান। শুধু তাই নয় বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন সহ বিশ্বের বিভিন্ন কল্যাণ জনক খাতে তিনি অর্থ বিনিয়োগ করে থাকেন। তিনি কয়েকটি বইও লিখেছেন। তার মধ্যে একটি হলো দ্যা রোড আহেড। যেটি ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। এখানে তার প্রাযুক্তিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আর লেখা আরেকটি বই ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। যার বিষয়বস্তু তথ্য নেটওয়ার্ক এবং ডিজিটাল অবকাঠামো।


►► সুভাষ মুখোপাধ্যায় এর জীবনী
►► কবি সৈয়দ আলী আহসান এর জীবনী


বিল গেটস এর বিখ্যাত উক্তি গুলো

বিলগেটসের মোটিভেশান উক্তি, যা আপনার লক্ষ অর্জনে আপনাকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। উক্তি গুলোঃ-

১। তিনি বলেন “আমি কোনো কঠিন কাজ করার জন্য অলস ব্যাক্তিদেরকে খুঁজবো, কেননা তারা ওই কাজটি করার জন্য একটি সহজ উপায় বের করবে।”

২। নিজেকে কখনোই অন্য কারোর সাথে তুলনা করবে না, যদি করো তাহলে তুমি নিজেকে অপমান করলে।

৩। তোমার কাছে যখন অনেক অনেক টাকা থাকবে তখন তুমি ভুলে যাবে তুমি কে, আর যখন তোমার কাছে টাকা থাকবে না তখন সমস্ত পৃথিবী ভুলে যাবে তুমি কে।

৪। এক পরীক্ষায় আমি কিছু বিষয়ে ফেল করেছিলাম কিন্তু আমার বন্ধু পাস করে যায়, আজ ও মাইক্রোসফটের একজন ইঞ্জিনিয়ার আর আমি মালিক।

৫। আপনি গরিব হয়ে জন্ম নিয়েছেন সেটা আপনার দোষ না, কিন্তু গরিব থেকেই মারা যান সেটা আপনারই দোষ।

৬। সফল ব্যাক্তিরা কখনো বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে না, তারা একই কাজ ভিবিন্ন ভাবে করে থাকে।

উপসংহারে কিছু কথা, বিখ্যাত ব্যক্তিদেরকে আমাদের অনুসরণ করা উচিত অনুকরণ নয়। তারা কোন বিষয়ে সফল হয়েছে সেটা দেখার বিষয় নয়, কীভাবে সফল হয়েছে সেটাই মুখ্য বিষয়। আরেকটি কথা সব বিষয়ে একটু একটু জানার চাইতে একটি বিষয়ে এক্সপার্ট হওয়াটাই উত্তম। হাল ছাড়বেন না লেগে থাকুন। সততা এবং দৃঢ়তার সাথে কাজ করুন। সফলতা আস্তে বাধ্য।

অনুগ্রহ করে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন। আমাদের ফেসবুক পেইজ এ লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন

2 thoughts on “বিল গেটস এর সংক্ষিপ্ত জীবনী”

Leave a Comment