রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (সাধারণত বেগম রোকেয়া নামে অধিক পরিচিত; ৯ ডিসেম্বর ১৮৮০ – ৯ ডিসেম্বর ১৯৩২) হলেন একজন বাঙালি চিন্তাবিদ, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক।
তিনি ছিলেন বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং ১ম বাঙালি নারীবাদী। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে বিবিসি বাংলার ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ জরিপে ষষ্ঠ নির্বাচিত হয়ে ছিলেন বেগম রোকেয়া।
ছোটগল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, বিজ্ঞান কল্পকাহিনী ও শ্লেষাত্মক রচনায় রোকেয়ার স্টাইল ছিলো স্বকীয় বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। উদ্ভাবনা, যুক্তিবাদিতা এবং কৌতুকপ্রিয়তা তার রচনার সহজাত বৈশিষ্ট্য।
তার প্রবন্ধের বিষয় ছিলো ব্যাপক ও বিস্তৃত। বিজ্ঞান সম্পর্কেও তার অনুসন্ধিৎসার পরিচয় পাওয়া যায় বিভিন্ন রচনায়।
মতিচূর (১৯০৪) প্রবন্ধ গ্রন্থে রোকেয়া নারী পুরুষের সমকক্ষতার যুক্তি দিয়ে নারীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন করে সম অধিকার প্রতিষ্ঠায় আহ্বান জানিয়েছেন এবং শিক্ষার অভাবকে নারী পশ্চাৎপদতার কারণ বলেছেন।
তিনি তার সুলতানার স্বপ্ন (১৯০৫) নারীবাদী ইউটোপিয়ান সাহিত্যের ক্লাসিক নিদর্শন বলে বিবেচিত।পদ্মরাগ (১৯২৪) তার রচিত উপন্যাস। অবরোধ বাসিনীতে (১৯৩১) তিনি অবরোধ প্রথাকে বিদ্রূপবাণে জর্জরিত করে ছিলেন।
রোকেয়ার কর্ম ও আদর্শ উদ্যাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার প্রতি বছর ৯ই ডিসেম্বর রোকেয়া দিবস উদ্যাপন করে এবং বিশিষ্ট নারীদের অনন্য অর্জনের জন্য বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করে।
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন:
- জন্ম: রোকেয়া খাতুন ৯ ডিসেম্বর, ১৮৮০ পায়রাবন্দ, মিঠাপুকুর, রংপুর, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা বাংলাদেশ)
- মৃত্যু: ৯ ডিসেম্বর, ১৯৩২ কলকাতা
- জাতীয়তা: ব্রিটিশ-ভারতীয়
- সময়কাল: ১৮৮০-১৯৩২
- দাম্পত্যসঙ্গী: সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন
জীবনী:
রোকেয়া জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার অর্ন্তগত পায়রাবন্দ গ্রামে।
তার পিতা জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের একজন শিক্ষিত জমিদার ছিলেন। তার মাতা ছিলেন রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী।
রোকেয়ার ২বোন করিমুননেসা ও হুমায়রা, আর ৩ ভাই যাদের একজন শৈশবে মারা যায়।
বেগম রোকেয়ার পিতা আবু আলী হায়দার সাবের আরবি, উর্দু, ফারসি, বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হলেও মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে ছিলেন রক্ষণশীল।
রোকেয়ার বড় দু’ভাই মোহাম্মদ ইব্রাহীম আবুল আসাদ সাবের ও খলিলুর রহমান আবু যায়গাম সাবের ছিলো বিদ্যানুরাগী।
কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে অধ্যয়ন করে তারা আধুনিকমনস্ক হয়ে ওঠেন।
রোকেয়ার বড় বোন করিমুন্নেসাও ছিলো বিদ্যোৎসাহী ও সাহিত্যানুরাগী।
বেগম রোকেয়ার শিক্ষালাভ, সাহিত্যচর্চা এবং সামগ্রিক মূল্যবোধ গঠনে বড় ২ভাই ও বোন করিমুন্নেসার যথেষ্ট অবদান ছিলো।
তৎকালীন সমাজ-ব্যবস্থায় মেয়েদের গৃহের অর্গলমুক্ত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের কোন সুযোগ ছিলো না।
৫ বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে কলকাতায় বসবাস করার সময় একজন মেম শিক্ষয়িত্রীর নিকট তিনি কিছুদিন লেখা-পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।
কিন্তু সমাজ ও আত্মীয়-স্বজনদের ভ্রুকুটির জন্য তাও বন্ধ করে দিতে হয়। তবু রোকেয়া দমে যাননি।
বড় ভাই-বোনদের সমর্থন ও সহায়তায় তিনি বাংলা, ইংরেজি, ফার্সি, উর্দু, এবং আরবি আয়ত্ত করে ছিলেন।
আড়ো পড়ুন: বেগম সুফিয়া কামাল জীবন কাহিনী
আড়ো পড়ুন: পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের আত্নজীবনী
যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সম্পর্কে বঙ্গের মহিলা কবি গ্রন্থে লিখেছেন, বঙ্গের মহিলা কবিদের মধ্যে মিসেস আর,এস, হোসায়েনের নাম স্মরণীয়।
বাংলাদেশের মুসলমান নারী-প্রগতির ইতিহাস লেখক এই নামটিকে কখনো ভুলিতে পারিবেন না।
রোকেয়ার জ্ঞানপিপাসা ছিলো অসীম। গভীর রাত্রিতে সকলে ঘুমাইলে চুপি চুপি বিছানা ছাড়িয়া বালিকা মোমবাতির আলোকে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার কাছে ইংরাজী ও বাংলায় পাঠ গ্রহণ করিতেন।
পদে পদে গঞ্জনা সহিয়াও এভাবে দিনের পর দিন তাঁহার শিক্ষার দ্রুত উন্নতি হইতে লাগলো।
কতখানি আগ্রহ ও একাগ্রতা থাকিলে মানুষ শিক্ষার জন্য এরূপ কঠোর সাধনা করিতে পারে তাহা ভাবিবার বিষয়।
সাহিত্যচর্চার সূচনা:
সাহিত্যিক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯০২ সালে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘নভপ্রভা’ পত্রিকায় ছাপা হয় “পিপাসা”।
বিভিন্ন সময়ে তার রচনা নানা পত্রিকায় ছাপা হতে থাকে। ১৯৫০ সালে প্রথম ইংরেজি রচনা “সুলতানাজ কড্রিম” মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় ছাপা হয়।
সবাই তার রচনা পছন্দ করে।তিনি সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াৎ হোসেনের সাথে রোকেয়া (১৮৯৮):
১৮৯৮ সালে রোকেয়ার বিয়ে হয়, বিহারের ভাগলপুর নিবাসী উর্দুভাষী সৈয়দ সাখাওয়াৎ হোসেনের সাথে।
তিনি ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, তদুপরি সমাজসচেতন, কুসংস্কারমুক্ত এবং প্রগতিশীল দৃষ্টি-ভঙ্গিসম্পন্ন।
উদার ও মুক্তমনের অধিকারী স্বামীর উৎসাহ ও সহযোগিতায় রোকেয়া দেশি-বিদেশি লেখকদের রচনার সঙ্গে নিবিড় ভাবে পরিচিত হবার সুযোগ পান এবং ক্রমশ ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন।
তার সাহিত্যচর্চার সূত্রপাতও ঘটে স্বামীর অনুপ্রেরণায়। তবে রোকেয়ার বিবাহিত জীবন বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
১৯০৯ সালের ৩মে সাখাওয়াৎ হোসেন মারা যান। ইতোপূর্বে তাঁদের ২টি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে অকালেই মারা যায়।
১৯০২ সালে পিপাসা নামে একটি বাংলা গল্প লিখে সাহিত্য জগতে তিনি অবদান রাখা শুরু করেন।
এরপর একে একে লিখে ফেলেন মতিচূর-এর প্রবন্ধ গুলো এবং সুলতানার স্বপ্ন-এর মতো নারীবাদী বিজ্ঞান কল্পকাহিনী।
সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড:
স্বামীর মৃত্যুর পর নিঃসঙ্গ রোকেয়া নারী-শিক্ষা বিস্তার ও সমাজসেবায় আত্ম-নিয়োগ করেন।
১৯০৯ সালের ১ অক্টোবর স্বামীর প্রদত্ত অর্থে ৫টি ছাত্রী নিয়ে তিনি ভাগলপুরে ‘সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল গার্লস’ স্কুল স্থাপন করেন।
কিন্তু পারিবারিক কারণে রোকেয়া ভাগলপুর ছেড়ে কলকাতায় এসে বসবাস শুরু করেন।
১৯১১ সালের ১৬ মার্চ কলকাতার ১৩ নং ওয়ালিউল্লাহ লেনের একটি বাড়িতে মাত্র ৮জন ছাত্রী নিয়ে তিনি নব-পর্যায়ে ‘সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯১৬ সালের মধ্যে ছাত্রীসংখ্যা একশত পেরিয়ে যায়।[১৫] স্কুল পরিচালনা ও সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রোকেয়া নিজেকে সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত রাখেন।
১৯১৬ সালে তিনি মুসলিম বাঙালি নারীদের সংগঠন আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলার নারী শিক্ষা বিষয়ক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।
১৯৩০ সালে বঙ্গীয় মুসলিম সম্মেলনে রোকেয়া বাংলা ভাষার পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন, যা সে যুগের পরিপ্রেক্ষিতে ছিল দুঃসাহসিক কাজ।
কোনো ভগ্নী মস্তক উত্তোলন করিয়াছেন,
( অমনি ধর্মের দোহাই বা শাস্ত্রের বচন-রূপ অস্ত্রাঘাতে তাঁহার মস্তক চূর্ণ হইয়াছে।… আমাদিগকে অন্ধকারে রাখিবার জন্যে পুরুষগণ এই ধর্মগ্রন্থগুলি ইশ্বরের আদেশ বলিয়া প্রচার করিয়াছেন।
এই ধর্মগ্রন্থগুলি পুরুষরচিত বিধিব্যবস্থা ভিন্ন কিছুই নহে। মুনিদের বিধানে যে কথা শুনিতে পান, কোনো স্ত্রী-মুনির বিধানে হয়ত তাঁহার বিপরীত নিয়ম দেখিতে পাইতেন।
ধর্ম আমাদের দাসত্বের বন্ধন দৃঢ় হইতে দৃঢ়তর করিয়াছে; ধর্মের দোহাই দিয়া পুরুষ এখন রমণীর উপর প্রভুত্ব করিতেছেন ) বেগম রোকেয়া, ১৯০৪
রচনা:
রোকেয়া তার নারীবাদী চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন মতিচূর প্রবন্ধ-সংগ্রহের প্রথম (১৯০৪) ও দ্বিতীয় খণ্ডে (১৯২২)।
সুলতানার স্বপ্ন (১৯০৫), পদ্মরাগ (১৯২৪), অবরোধ-বাসিনী (১৯৩১) ইত্যাদি তার সৃজনশীল রচনা।
তার সুলতানার স্বপ্নকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইল ফলক ধরা নেযা হয়।
গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবার পূর্বে তার লেখা গুলো নবনূর, সওগাত, মোহাম্মদী ইত্যাদি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে ছিলো।
তার প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তিনি নারী-শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আর লিঙ্গ-সমতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন।
হাস্যরস আর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সাহায্যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসম অবস্থান ফুটিয়ে তুলেন।
তার রচনা দিহয়ে তিনি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন, ধর্মের নামে নারীর প্রতি অবিচার রোধ করতে চেয়েছেন, শিক্ষা আর পছন্দানুযায়ী পেশা নির্বাচনের সুযোগ ছাড় যে নারী মুক্তি আসবে না –তা বলেছেন।
রোকেয়া অলঙ্কারকে দাসত্বের প্রতীক বিবেচনা করেছেন এবং নারীদের অলঙ্কার ত্যাগ করে আত্মসম্মানবোধে উজ্জীবিত হয়ে আর্থরাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে সচেষ্ট হতে আহ্বান জানিয়েছেন।
আমরা বহুকাল হইতে দাসীপনা করিতে করিতে দাসীত্বে অভ্যস্ত হইয়া পড়িয়াছি। ক্রমে পুরুষরা আমাদের মনকে পর্য্যন্ত দাস করিয়া ফেলিয়াছে।
তাহারা ভূস্বামী গৃহস্বামী প্রভৃতি হইতে হইতে আমাদের “স্বামী” হইয়া উঠিয়াছেন।… আর এই যে আমাদের অলঙ্কারগুলি– এগুলি দাসত্বের নিদর্শন।
কারাগারে বন্দিগণ লৌহনির্ম্মিত বেড়ী পরে, আমরা স্বর্ণ রৌপ্যের বেড়ী পরিয়া বলি “মল পরিয়াছি।
উহাদের হাতকড়ী লৌহনির্ম্মিত, আমাদের হাতকড়ী স্বর্ণ বা রৌপ্যনির্ম্মিত “চুড়ী!”
অশ্ব হস্তী প্রভৃতি পশু লৌহশৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকে, সেইরূপ আমরা স্বর্ণশৃঙ্খলে কণ্ঠ শোভিত করিয়া বলি “হার পরিয়াছি!”
গো-স্বামী বলদের নাসিকা বিদ্ধ করিয়া “নাকা দড়ী” পরায়, আমাদের স্বামী আমাদের নাকে “নোলক” পরাইয়াছেন।
রচনা:
অতএব দেখিলে ভগিনি, আমাদের ঐ বহুমূল্য অলঙ্কারগুলি দাসত্বের নিদর্শন ব্যতীত আর কিছুই নহে!
অভ্যাসের কি অপার মহিমা! দাসত্বে অভ্যাস হইয়াছে বলিয়া দাসত্বসূচক গহনাও ভালো লাগে।
অহিফেন তিক্ত হইলেও আফিংচির অতি প্রিয় সামগ্রী। মাদক দ্রব্যে যতই সর্বনাশ হউক না কেন, মাতাল তাহা ছাড়িতে চাহে না।
সেইরূপ আমরা অঙ্গে দাসত্বের নিদর্শন ধারণ করিয়াও আপনাকে গৌরবান্বিতা মনে করি।
হিন্দুমতে সধবা স্ত্রীলোকের কেশকর্ত্তন নিষিদ্ধ কেন? সধবানারীর স্বামী ক্রুদ্ধ হইলে স্ত্রীর সুদীর্ঘ কুম্ভলদাম হস্তে জড়াইয়া ধরিয়া উত্তম মধ্যম দিতে পারিবে।
ধিক আমাদিগকে!আমরা আশৈশব এই চুলের কত যত্ন করি! কি চমৎকার সৌন্দর্য্যজ্ঞান!
“পুরুষের সমকক্ষতা লাভের জন্য আমাদিগকে যাহা করিতে হয়, তাহাই করিব।
যদি এখন স্বাধীন ভাবে জীবিকা অর্জ্জন করিলে স্বাধীনতা লাভ হয়, তবে তাহাই করিব। আবশ্যক হইলে আমরা লেডীকেরাণী হইতে আরম্ভ করিয়া লেডীমাজিস্ট্রেট, লেডীব্যারিস্টার, লেডীজজ — সবই হইব!
উপার্জ্জন করিব না কেন?… যে পরিশ্রম আমরা “স্বামী”র গৃহকার্য্যে ব্যয় করি, সেই পরিশ্রম দ্বারা কি স্বাধীন ব্যবসায় করিতে পারিব না?
আমরা বুদ্ধিবৃত্তির অনুশীলন করি না বলিয়া তাহা হীনতেজ হইয়াছে। এখন অনুশীলন দ্বারা বুদ্ধিবৃত্তিকে সতেজ করিব।
যে বাহুলতা পরিশ্রম না করায় হীনবল হইয়াছে, তাহাকে খাটাইয়া সবল করিলে হয় না?” —(বেগম রোকেয়া, ১৯০৪)
মৃত্যু:
বেগম রোকেয়ার সমাধি, পাণিহাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, সোদপুর, কলকাতা।
১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। সেসময় তিনি ‘নারীর অধিকার’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখছিলেন।
তার কবর উত্তর কলকাতার সোদপুরে অবস্থিত যা পরবর্তীকালে যাদবপুর বিশ্ব-বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক অমলেন্দু দে আবিষ্কার করেন।
স্বীকৃতি:
বেগম রোকেয়া উদ্যান, কলকাতা
মূল নিবন্ধ: বেগম রোকেয়া বিশ্ব-বিদ্যালয়
বাংলাদেশের ৭ম বিভাগ হিসেবে রংপুর বিভাগের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ব-বিদ্যালয় হিসেবে ‘রংপুর বিশ্ব-বিদ্যালয়’ ৮অক্টোবর ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
অতঃপর ২০০৯ সালে ‘নারী-জাগরণের অগ্রদূত’ হিসেবে তার নামকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব-বিদ্যালয়টির বেগম রোকেয়া বিশ্ব-বিদ্যালয় নামকরণ করেন।
উল্লেখ্য, নারীর নামে বাংলাদেশে প্রথম কোন পাবলিক বিশ্ব-বিদ্যালয় এটি।
বেগম রোকেয়ার নামে সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ব-বিদ্যালয়ে ১৯৬০-এর দশকে ছাত্রীনিবাস ‘রোকেয়া হল’ খোলা হয় যার নাম আগে ছিলো ‘উইমেন্স হল’ তবে ব্রিটিশ আমলে ১৯৩৮ সালে ‘চামেলি হাউজ’ নামে প্রথমে হলটি চালু হয়েছিলো।
মহীয়সী বাঙালি নারী হিসেবে বেগম রোকেয়ার অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ব-বিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ব-বিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ব-বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আবাসনের জন্য আবাসিক হল “রোকেয়া হল” নামকরণ করা হয়।
প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর তার জন্মদিনে বেগম রোকেয়া দিবস পালন করা হয় এবং নারী উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য বিশিষ্ট নারীদেরকে বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করা হয়।
১৯৮০ সালে বেগম রোকেয়ার জন্ম-শতবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ২টি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।
তার ১৩৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গুগল তাদের হোমপেজে বেগম রোকেয়ার গুগোল ডুডল প্রদর্শন করে তার জন্মদিন উদ্যাপন করে।
গুগোল ডুডলটিতে দেখা যায় সাদা পোশাকে চশমা পরা বেগম রোকেয়া বই হাতে হেঁটে যাচ্ছেন।
মূল নিবন্ধ: বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র
বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র, পায়রাবন্দ, মিঠাপুকুর, রংপুর রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন স্মরণে বাংলাদেশ সরকার একটি গণ-উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন।
বাংলাদেশের রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে পৈতৃক ভিটায় ৩ দশমিক ১৫ একর ভূমির উপর নির্মিত হয়েছে বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র।
এতে অফিস ভবন, সর্বাধুনিক গেস্ট হাউজ, ৪ তলা ডরমেটরি ভবন, গবেষণা কক্ষ, লাইব্রেরি ইত্যাদি রয়েছে।
স্মৃতিকেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।