খাগড়াছড়ি জেলা কেন বিখ্যাত?

বাংলাদেশের প্রধান তিনটি পার্বত্য অঞ্চলের মধ্যে একটি হচ্ছে খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়ি জেলা চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। প্রাকৃতিক নির্দশনে ভরপুর এই জেলাটি অসংখ্য পর্যটকের কাছে যেন স্বর্গভূমি। খাগড়াছড়ি জেলা কেন বিখ্যাত? আসুন খুজে বের করি।


►► চট্টগ্রাম জেলা কেন বিখ্যাত?
►► পটুয়াখালী জেলা কেন বিখ্যাত?


খাগড়াছড়ি জেলার বিখ্যাত স্থান

  • গুইমারা
  • মাতাই পুখিরি
  • ভগবানটিলা
  • মতায়ু বটগাছ
  • মহালছড়ি হ্রদ
  • দেবতার পুকুর
  • বিডিআর স্মৃতিসৌধ
  • শান্তিপুর অরণ্য কুটির
  • পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র
  • আলুটিলা গুহা ও আলুটিলা ঝরণা

খাগড়াছড়ি জেলা

বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানা লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এই জেলার অবস্থান দক্ষিণ পূর্ব দিকে। খাগড়াছড়ি জেলার ঠিক পূর্ব দিকেই রয়েছে আরো একটি পার্বত্য অঞ্চল রাঙামাটি। বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি দূরত্ব ১১১ কিলোমিটারের মতো। প্রায় ২৭০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এই পার্বত্য জেলাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৮৩ সালে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে এই অঞ্চলটি ত্রিপুরা রাজ্যের একটি মহকুমা হিসেবে পরিচিত ছিল। তখন এই অঞ্চলের নাম ছিল কার্পাস মহল।

খাগড়াছড়ি নামটির উৎপত্তি হয়েছে মূলত একটি নদীকে কেন্দ্র করে। খাগড়াছড়ি নামক একটি নদীর পাড়ে জনবসতি গড়ে উঠে এবং ধীরে ধীরে সেই অঞ্চলটি খাগড়াছড়ি নামে পরিচিতি লাভ করে।

মোট নয়টি উপজেলা নিয়ে এই জেলাটি গঠিত হয়েছে। উপজেলাগুলো যথাক্রমে দিঘীনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, মানিকছড়ি, মহালছড়ি, লক্ষীছড়ি, রামগড় ও সর্বশেষ খাগড়াছড়ি সদর। পার্বত্য অঞ্চল হলেও প্রায় ৫ লাখের অধিক জনগণের বসবাস এই জেলাটিতে।

খাগড়াছড়ি জেলা কেন বিখ্যাত?

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোনো অভাব নেই খাগড়াছড়ি জেলায়। খাগড়াছড়ি জেলার বেশিভাগ ভূমিই পাহাড়ি গাছপালা ও ঝর্ণায় ঢাকা। এখানে বেশ কয়েকটি সুউচ্চ পর্বতও রয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা কেন বিখ্যাত প্রশ্নটির উত্তর হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পর্বত, উপত্যকা ও ঝর্ণার জন্য।

ঘুরে দেখার মত খাগড়াছড়ি জেলায় বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যার মধ্যে একটি হলো আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র। যদিও এটির পূর্ব নাম ছিল আরবারি পর্বত। এই পর্বতের উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ফুটের কাছাকাছি। মাটিরাঙ্গা উপজেলায় এই পাহাড়টি অবস্থিত। উচ্চতা অনুসারে আলুটিলা পর্বতটি খাগড়াছড়ি জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ পর্বত। সৌন্দর্যের দিক থেকেও এই পর্বত অতুলনীয়। এই পর্বতের চূড়া থেকে সম্পূর্ণ খাগড়াছড়িকে এক নজরে দেখা যায়। খাগড়াছড়ি শহরের প্রবেশ মুখেই অবস্থিত এই আলুটিলা পর্বতের সৌন্দর্য যেন হাতছানি দিয়ে যেকোনো পর্যটককে আকর্ষণ করে। এই পর্বতের আরেকটি বিখ্যাত বৈশিষ্ট্য হলো পর্বতের মধ্যে অবস্থিত আলুটিলা রহস্যময় গুহা। অনেকে এই গুহাকে দেবতার গুহা বলে। এই গুহার ভেতরের দিকটি বেশ অন্ধকার এবং সবসময় ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করে। খাগড়াছড়ি জেলা কেন বিখ্যাত প্রশ্নটির একটি বিকল্প উত্তর হচ্ছে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় প্রায় ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট একটি প্রাকৃতিক গুহা অবস্থিত। যার নাম তকবাক হাকর। স্থানীয় ত্রিপুরা ভাষা থেকে এই গুহার নামটি নেওয়া হয়েছে যার আভিধানিক অর্থ হল বাদুরের গুহা। উঁচু পাথরের দুটো পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত তকবার হাকরটির গভীরতা প্রায় ৩০ ফুট এর মত। প্রথম দর্শনে এই গুহাটিকে প্রাগৈতিহাসিক কোন স্থাপত্যের চিহ্ন মনে হলেও হতে পারে। দেখে মনে হয় কোন দক্ষ রাজমিস্ত্রি তার নিপুন হাতে গুহাটি নির্মাণ করেছেন। গুহাটির মাথায় রয়েছে পাথর নির্মিত ছাদ। এটির ভেতরের দিকটি প্রায় সময় শুষ্ক থাকে। এই গুহার অভ্যন্তরীণ ছম ছম পরিবেশের জন্য জায়গাটি পর্যটকদের জন্য বেশ উপভোগনীয়।

খাগড়াছড়ি জেলার বিখ্যাত স্থান

খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলায় অবস্থিত মং রাজবাড়ী। মূলত মহামূনি নামক একটি স্থানে এই ঐতিহাসিক রাজবাড়ীর অবস্থান। যা একটা সময়ে মং নামক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর রাজবংশ ছিল। অনেকে মানিকছড়ির রাজবাড়ী হিসেবে সম্বোধন করে থাকে। বর্তমানে সেখানে রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরীর বংশ স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। যদিও বর্তমানে এই রাজবাড়ীর ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ইতিহাস অনেকটাই বিলীন হওয়ার পথে।

এ জেলায় বেশ কয়েকটি ঝর্ণা হয়েছে যার মধ্যে একটি হলো তৈদুছড়া ঝর্ণা। প্রায় ৩০০ ফুট উচ্চতায় বিশিষ্ট এই বৈচিত্রময় ঝর্ণার পানি যখন পাহাড়ের অসংখ্য ধাপ দিয়ে গড়িয়ে যায় তা দেখতে প্রকৃত অর্থেই বেশ চমকপ্রদক। এটির পাশেই রয়েছে তাংঝাং নামের আরেকটি ঝর্ণা। এই ঝর্ণার থেকে সৃষ্ট পানি থেকেই তৈদুছড়া ঝর্ণা সৃষ্টি হয়েছিল।

মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাপমারা গ্রামে খাগড়াছড়ির আরো একটি উল্লেখযোগ্য ঝর্ণা রয়েছে। যার নাম রিছাং ঝর্ণা। সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে গেলেই এই ঝর্ণার খোঁজ পাওয়া যাবে। রিছাং ঝর্ণার মোট উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুটের কাছাকাছি। তেরাং তৈকালাই নামেও অনেকের কাছে ঝর্ণা এই ঝর্ণাটি পরিচিত। এই ঝর্ণার পথে মোট ২৩৫ টি ধাপ কেটে সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। এইখানে স্থানীয়রা তাদের জীবিকার জন্য জুম চাষ করে থাকে। জুম চাষের ফলে সবুজে আবৃত এই ঝর্ণাটি খুব সহজেই সবার নজর বন্দী হয়।


►► পঞ্চগড় জেলা কেন বিখ্যাত?
►► রাঙ্গামাটি জেলা কেন বিখ্যাত?


খাগড়াছড়ি জেলা নিয়ে প্রশ্ন উত্তর

১. প্রশ্ন: খাগড়াছড়ি জেলা কেন বিখ্যাত?

উত্তর: পাহাড়-পর্বত ও প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য

২. প্রশ্ন: আলুটিলা গুহা কোন জেলায় অবস্থিত?

উত্তর: খাগড়াছড়ি জেলাতে

৩. প্রশ্ন: কোন কোন জেলায় জুম চাষ করা হয়?

উত্তর: রাঙামাটি খাগড়াছড়ি বান্দরবান

৪. প্রশ্ন: খাগড়াছড়ি জেলার পূর্ব নাম কী?

উত্তর: কার্পাস মহল

৫. প্রশ্ন: তেরাং তৈকালাই নামক ঝর্ণাটি কোন জেলায় অবস্থিত?

উত্তর: খাগড়াছড়ি জেলায় অবস্থিত

অনুগ্রহ করে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন। আমাদের ফেসবুক পেইজ এ লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন

Leave a Comment