নিকৃষ্ট বাঙালী সমাজ – মোঃ ইমন খন্দকার হৃদয়

নিকৃষ্ট বাঙালী সমাজ – মোঃ ইমন খন্দকার হৃদয়

ইট পাথর বালু সিমেন্ট ঘেরা ইমারত মসজিদ-মন্দির এলাকা। প্রতিটি জৈবিক হাতে তৈরি শহর। যাদের মাধ্যমে জাগরণ তাদের নিয়ে সমাজ।

নদী বদলায় তার আপন গতিতে আর সমাজ বদলায় মানুষের চেতনায়। কিন্তু মানুষের তাল মাঝে মধ্যে দ্বি-তাল হয়ে যায় তবে নদীর জোয়ার- ভাটা ঠিকই থাকে।

ঈশ্বর সব প্রাকৃতিক ভাবে পরিবর্তনের সুযোগ দিয়েছে কিন্তু সমাজ তো প্রাণের হাতে তৈরি তাই তাহা বেসামাল।

সে একটি সমাজ যেখানে নানা শ্রেণীর নানা, নানা পেশার,নানা ধর্মের, নানা কর্মের মানব বসবাস করে।

যাদের নিয়ে গড়ে ওঠে সমাজ। সেই সমাজে দুই শ্রেণীর মানুষ উল্লেখযোগ্য এর ভিতর আবার শাখা আছে।

প্রথম শ্রেণীর নিম্ন যারা মুখ কথায় ‘গরিব’ তারা সমাজের প্রাণী তবে তাদের প্রাপ্য সম্মান ও সঠিক সহমর্মিতা দেয়া হয় না।

তাদের যুগের পর যুগ অত্যাচার ও শোষণ করে আসছে।

নিকৃষ্ট বাঙালী সমাজ

আসলে নিম্নশ্রেণির মাথায় কাঁঠাল রেখে তারা বিচিসহ কাঁঠাল খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে।

এই উঁচুশ্রেণী তাদের শিক্ষা, সম্পদ, ক্ষমতা, অত্যাচার এর প্রয়োগ। এই চার বিষয় নিয়ে তারা প্রভাবিত।

আসলে তারা শিক্ষিত হলেও ইহা তাদের কু- শিক্ষা। নিম্নশ্রেণির জন্ম থেকে অবহেলিত তবে তারা সহজ ও সরল,ভীতু প্রকৃতির হয়ে থাকে। এরা লড়ান খায় তবু লড়ান দেয় না।

এদের ভিতর থাকেনা শিক্ষা, ধৈর্য, আত্মবিশ্বাস, কর্মক্ষমতার অভাব তাই এরা যুগে যুগে নির্যাতিত।

এরা ভিক্ষা করে খাবে তবুও কর্ম করে খাবে না। সমাজের মূল চালিকাশক্তি কিন্তু তারা। নিচু জাত ও জাত নিয়ে মূলত সমাজ।

উঁচু জাতের কিছু মানুষের শিক্ষা পেয়ে যেমন সঠিক মানুষ হয় ঠিক নিচু জাতেরা শিক্ষা না থাকার ফলে জন্ম থেকেই এই জাতের কিছু মানুষ মূর্খ হয়ে থাকে।

 

আরো পড়ুন: ফেসবুক গ্রুপ থেকে ৫ উপায়ে ইনকাম করুন
আরো পড়ুন: প্রকৃতি ও জলবায়ু নিয়ে মুনেমের লড়াই


নিকৃষ্ট বাঙালী সমাজ

যাদের শিক্ষার বাতাস দিল তারা গ্রহণ করেনি। তাই এই জাত হয়ে ওঠে ঘৃণিত।

অনেক নিচু জাতের লোকেরা তাদের সঠিক শিক্ষা না থাকলেও তারা এমনভাবে কর্মকলাপ করে যাহা শিক্ষিত জাত কে হার মানায়।

অনেকে আবার নিচু জাত থেকে হাজারো কষ্ট করে শিক্ষা ও মান নিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয় তবে তাহা নিতান্তই কম।

সমাজের উঁচু জাতের এমন মানুষ আছে যারা এমন কর্মকালাপ করে যা অমানুষ এর থেকেও ঘৃণিত।

শিক্ষাটাকে বর্তমান সমাজ পেশার জন্য ব্যবহার করে জানার জন্য নয়। যদি তাই হত তবে ঘরে ঘরে আলোকিত মানুষ থাকত।

আমাদের সমাজের দুই জাতের ভিতর ই দুই শ্রেণীর মানুষ আছে যারা সবসময় অন্যের বিষয় নিয়ে পড়ে থাকে।

এদেরকে বলা হয় হিংসুক ও পরনিন্দাকারী। যাদের কাছ থাকে শুধু অন্যের নামে মিথ্যা কু- প্রচারণা ছড়ানো।

তারা এর ওর নামে কু মন্তব্য করা, কার বাসায় কি হলো? সেই বিষয়ে মাথা ঘামানো,সাহায্যের বদলে ক্ষতি করা, ভালোবাসার বদলে অপমান করা,

শান্তির বদল অশান্তি, জাত কে ছোট করে দেখা, রাস্তার বের হলে ইশারা দিয়ে ছোট করা, ভালো একটি কাজ করলে সেটিকে উৎসাহের বদলে নিরুৎসাহিত করা,

সময়মাফিক ঝগড়া-বিবাদ করা, আর একজন ব্যক্তির কাছে ওই ব্যক্তির নামে গীবত ছড়ানো, সহ ইত্যাদি কাজ আমাদের সমাজে চলমান।

আমরা জানি ছোট ছোট ইট দিয়ে বিরাট ভবন তৈরি হয় ঠিকই এই রকমের ছোট ছোট চরিত্রগত অভ্যাস দিয়ে বিরাট পাপে জন্ম হয় যা সমাজ পতনের মূল।

নিকৃষ্ট বাঙালী সমাজ

এই কাজগুলো হত্যার থেকেও জগন্য। একজন মানুষের নামে সব সময় ভালো বলতে হবে, তার ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে হবে, তাকে যথাসম্ভব সাহায্য করতে হবে,

তার যেকোনো কাজে পাশে দাঁড়াতে হবে, উৎসাহ প্রদান করতে হবে, বিপদে পড়লে এগিয়ে আসতে হবে ইত্যাদি এই সমস্ত কাজ বা এই অভ্যাস যদি যদি গড়া যেত তাহলে সমাজটি হত মাইলফলক।

কিন্তু বাঙালি সমাজ সৃষ্টির শুরু থেকে উল্টো পথ অবলম্বন করে, যাহার জন্য সামাজিক নিয়মগুলো উল্টো।

আমার ভাবতে অবাক লাগে সমাজের কোনো মানুষের বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য বদলে আরো বিপদ বাড়িয়ে দেয় আমাদের সমাজের মানুষ।

তারা সার্কাস এর মতো আনন্দ উপভোগ করে সেই বিপদ দর্শন করে।

আমাদের সমাজ এতটাই নিকৃষ্ট যে যেখানে বিশ্ব তার আপন গতিতে চলে সেখানে আমাদের সমাজ এখনও হিন্দু – মুসলমানের জাতভেদ নিয়ে পড়ে রয়েছে।

যেখানে উঁচুশ্রেণীর, নিচু শ্রেণীর বৈষম্য তো রয়েছেই তার ভিতরে আবার ধর্মভেদ।

এই জাতভেদের কারণে আমাদের সমাজের অগ্রগতি হচ্ছে না।

যেখানে একজন মুসলিম প্রথম পরিচয় দিবে, “আমি মানুষ” আবার হিন্দু বলবে, “আমি মানুষ “সেখানে তারা তাদের ধর্মকে আগে প্রাধান্য দেয়।

আমাদের সমাজ যদি মানুষকে মানুষের চোখে দেখত তবে এই বিরোধ থাকতোনা।

আধুনিক এই বাঙালী সমাজে এখনও হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ নিয়ে পড়ে রয়েছে।

যেখানে সমাজ সভ্যতা কে অগ্রগতির জন্য কাজ করবে তা রেখে ধনী-গরিব, হিন্দু-মুসলমান সেটি নিয়ে আমরা পড়ে রয়েছি।

অথচ আমরা আধুনিক প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এর মত সমাজের স্বপ্ন দেখি।

নিকৃষ্ট বাঙালী সমাজ


আরো পড়ুন: সাধারণ জ্ঞান: বিজ্ঞানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
আরো পড়ুন: এক বৃষ্টিময় প্রভাত – নুর আতিকুন নেছা


আমাদের এই বাঙালি সমাজ নিয়ে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,

কাজী নজরুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া, সৈয়দ অলিউল্লাহ, সহ বহু মানুষ যার যার স্থান থেকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন এর চেষ্টা করেছেন।

কিন্তু তাদের ফল বৃথা এখনো পরিবর্তন হতে পারেনি কবে পারবে? তা জানা নেই।

তবুও অসহায় মানুষগুলোর জন্য, এই সমাজের জন্য আবার পুনরায় বিপ্লবের ডাক দিতে হবে।

এই সমাজের মানুষগুলো যদি তারা আগের মানুষ হিসেবে পরিচয় যদি না দেয় তবে কখনোই এই সমাজের অগ্রগতি সম্ভব নয়।

যেদিন আমাদের প্রতিটি খারাপ কাজ ও অভ্যাস সমাজের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আমরা গ্রহণ ও ত্যাগ করতে পারব তবে সেদিন হবে বাঙালী সমাজ বিপ্লব।

আমাদের সঠিক সৎ জ্ঞান ও সৎ সাহস,সেবা, মানবতা, সহমর্মিতা, সাহায্য, ভালোবাসা পারে সেই বিপ্লব অর্জন করতে।

তার পাশাপাশি আমাদের জাতভেদ, অহংকার, হিংসা এই তিনটি বর্জন করতে হবে।

সবাইকে মানুষ এর চোখে দেখতে হবে তাহলেই শান্তিময় আদর্শ বাঙালি সমাজ জাগ্রত হবে, ধেয়ে আসবে বাঙালী সমাজ বিপ্লব।

 

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।


নিকৃষ্ট বাঙালী সমাজ – মোঃ ইমন খন্দকার হৃদয় এর মত এমন সব লেখা চাইলে আপনিও পাঠাতে পারেন।


Leave a Comment