নোয়াখালী জেলা কেন বিখ্যাত?

বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত একটি জেলা হচ্ছে নোয়াখালী। কারণে অকারনে নোয়াখালী জেলা সারা দেশে আলোচনার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। এই জেলার মানুষদের অন্য জেলার মানুষেরা আলাদা চোখে দেখে। নোয়াখালী জেলা কেন বিখ্যাত আসুন জেনে নেই।

নোয়াখালী জেলার ১০টি বিখ্যাত বা দর্শনীয় স্থন:

  • নিঝুম দ্বীপ
  • কমলা রাণীর দীঘি
  • কল্যান্দী সার্বজনীন দুর্গা মন্দির
  • মাইজদী কোর্ট বিল্ডিং দীঘি
  • কল্যান্দি জমিদার বাড়ি
  • গান্ধী আশ্রম
  • মহাত্মা গান্ধী জাদুঘর
  • বজরা শাহী জামে মসজিদ
  • স্বর্ণ দ্বীপ
  • গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর, সোনাইমুড়ী

নোয়াখালী জেলা

চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি জেলা হচ্ছে নোয়াখালী। এই জেলার মোট আয়তন ৪,২০০ বর্গ কিলোমিটার। মোট নয়টি উপজেলা নিয়ে এই নোয়াখালী জেলা গঠিত হয়েছে। উপজেলার সংখ্যা অনুসারে এটি একটি “এ ক্যাটাগরি” ভুক্ত জেলা। ১৮২১ সালে নোয়াখালী জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। পূর্বে এই জেলার নাম ছিল ভুলুয়া। পরবর্তীতে ১৮৬৮ সালে এই জেলার নামকরণ নোয়াখালী করা হয়। বর্তমানে নোয়াখালী জেলার মোট জনগণের সংখ্যা প্রায় ৩৩ লাখ।


►► পঞ্চগড় জেলা কেন বিখ্যাত?
►► ফরিদপুর জেলা কেন বিখ্যাত জানেন?


নোয়াখালী জেলা কেন বিখ্যাত?

নোয়াখালী জেলা ভাষা থেকে শুরু করে দর্শনীয় স্থান, সংস্কৃতি, জীবনধারার বৈচিত্র্য সব কিছুর মাধ্যমে এক অনন্য পরিচয়ে বেশ আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশের বুকে বহুবার। নোয়াখালী জেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে এই জেলার ভাষা। নোয়াখালী ভাষার প্রচলন রয়েছে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী অঞ্চলের কিছু মানুষের মধ্যে। এছাড়াও ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্য ত্রিপুরাতে কিছু সংখ্যক নোয়াখালীর উপভাষা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

নোয়াখালী আঞ্চলিক ভাষা এতটাই জনপ্রিয় হচ্ছে যে, বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ভাষাকে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে অনেক নাটক, সিনেমাগুলোতে দেখা যায় অভিনেত্রী, অভিনেতারা নোয়াখালী ভাষাকে বেশ ভালভাবে রপ্ত করে সাবলীলভাবে অভিনয় করে দর্শকদের বিনোদন দিয়ে যাচ্ছে। এই ভাষার সাথে মিশে আছে এই জেলার সংস্কৃতি ও প্রাচীন ইতিহাস তাইতো শিক্ষিত ও অভিজাত শ্রেণীর মানুষ থেকে শুরু করে সাধারণ পর্যায়ে প্রায় সকল মানুষই নিজেদের আপন পরিসরে তাদের আঞ্চলিক ভাষাতে কথা বলতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে ও ভালোবাসে।

বাংলাদেশের প্রায় সকল অঞ্চলের মানুষের কম বেশি অতিথি পরায়ন হয়ে থাকে। কিন্তু নোয়াখালী জেলার অতিথি পরায়ণতার যে নজির দেখতে পাওয়া যায় তা বেশ প্রশংসনীয়। এজেলার মানুষের আজ যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতিতে চেষ্টা করে অতিথিদের পর্যাপ্ত সম্মানের সাথে আপ্যায়ন করতে। অসহায়, গরীব ও দরিদ্র মানুষেরা কখনো তাদের সাহায্যের ছায়া থেকে বঞ্চিত হয় না। অন্যান্য জেলার মানুষেরা বরাবরই এই কথা এক বাক্যে স্বীকার করবে যে, নোয়াখালী জেলার মানুষ বেশ আন্তরিক ও অমায়িক।

পিঠাপুলির দেশ বাংলাদেশ। এরকম মানুষ খুঁজে বের করা কিছুটা কষ্টসাধ্য হবে, যে কিনা পিঠা পছন্দ করে না। আর এই পিঠাই হচ্ছে নোয়াখালী জেলার অন্যতম একটি ঐতিহ্য। যে কোন এলাকার বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠে সেই অঞ্চলের জনগোষ্ঠী জীবনধারার উপর। নোয়াখালী জেলা কেন বিখ্যাত উত্তর হচ্ছে পিঠার জন্য। অতিথিপরায়ণ হিসেবে বিখ্যাত নোয়াখালী জেলা মেহমান আপ্যায়নের সময়ে বিভিন্ন পিঠা পুলির যে বাহারি শিল্প উপস্থাপন করে তার মধ্যেই প্রকাশ পায় সেই জেলার নিজস্ব সংস্কৃতি। সেই সকল পিঠা গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পিঠা হচ্ছে পুলি পিঠা, পাবন পিঠা, ঝুনঝুনি পিঠা, তালের পিঠা,পান্তুয়া পিঠা,ঝাল পিঠা, সানকি পিঠা, সুজির পিঠা, চিতই পিঠা ইত্যাদি।

নোয়াখালী জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত?

বিশেষ করে নারিকেলের পিঠা নোয়াখালী জেলায় প্রচলিত, কেননা এই জেলার আবহাওয়া ও জলবায়ু নারিকেল উৎপাদনের জন্য অনুকূল। তাই যখনই কোন অতিথির সমাগম হয় নোয়াখালীর মা-বোনেরা নারিকেলের পিঠা, চিড়া দিয়ে অতিথিদের গ্রহণ করতে সর্বদা ব্যস্ত থাকেন। নোয়াখালী জেলাতে রয়েছে ঘোরার মত বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান। যেমন: নিঝুম দ্বীপ, মুছাপুর ক্লোজার, বজরা শাহী মসজিদ, আলেকজান্ডার মেঘনাপাড়,  নোয়াখালী ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্ক ইত্যাদি।

পূর্বে নোয়াখালী জেলা আরও বেশি অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী থাকলেও ঊনবিংশ শতাব্দীতে জনপদের ভাঙ্গনের কারণে অনেকাংশেই এই রূপ কিছুটা বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে। তারপরেও কিছু জনপদের চিহ্ন এখনো কোনোরকম টিকে আছে সেই সমৃদ্ধশালী প্রাচীন অতীতের কিছু নিদর্শন হিসেবে। যেমন: হরিনারায়নপুর জমিদার বাড়ি, মাইজদী বড় দীঘি,  কমলা রানীর দীঘি, সোনাপুরে লুর্দের রানীর গীর্জা ইত্যাদি।

বঙ্গোপসাগর ও মেঘনা নদীকে ঘিরে নোয়াখালীতে জেগে উঠা ছোট্ট একটি চড়ের নাম হচ্ছে নিঝুম দ্বীপ। পূর্বে এই দ্বীপ ওসমান চড় নামে পরিচিত ছিল। অনেকেই নিঝুম দ্বীপকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যানগ্রোভ বন বলে থাকেন। চেউয়া মাছ, ইলিশ মাছ, অনেক রকমের শুটকি ও হাজার রকমের পাখির সমারোহে সজ্জিত এই দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় ভ্রমণ স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। নোয়াখালী জেলার মানুষের কাছে দ্বিতীয় দর্শনীয় স্থান হচ্ছে মুছাপুর ক্লোজার। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বঙ্গোপসাগর তীরে অবস্থিত এই পর্যটন স্থানে অনেকেই ঘুরতে আসেন সমুদ্র সৈকতের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে। গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট নোয়াখালী জেলার ঐতিহাসিক তাৎপর্য বহন করে।

১৯৪৬ সালে ‘অহিংস’ সমাজ প্রতিষ্ঠায় মহাত্মা গান্ধীর কর্মময় অবদানের পরিচয় সবার সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে ২০০০ সালের ২ অক্টোবর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ গ্রামে এই গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট চালু করা হয়। এছাড়াও নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেছেন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন, বিখ্যাত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, অভিনেত্রী তারিন, শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী এর মতো উজ্জ্বল সব নক্ষত্র যাদের জন্য নোয়াখালী আজও গর্বিত ও সম্মানিত। নোয়াখালী জেলা কেন বিখ্যাত আশা করছি প্রশ্নটির উত্তর এতোক্ষনে পেয়ে গেছেন।


►► বগুড়া কিসের জন্য বিখ্যাত জেলা?
►► সিলেট কিসের জন্য বিখ্যাত?


নোয়াখালী জেলা নিয়ে প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন: নোয়াখালী জেলা কেন বিখ্যাত?

উত্তর: পিঠার জন্য

প্রশ্ন: নিঝুম দ্বীপ কোন জেলায় অবস্থিত?

উত্তর: নোয়াখালী জেলায়

প্রশ্ন: ভাসানচর দ্বীপ কোন জেলায় অবস্থিত?

উত্তর: নোয়াখালী জেলায়

প্রশ্ন: মহাত্মা গান্ধী স্মৃতি বিজারিত জেলা কোনটি?

উত্তর: নোয়াখালী

প্রশ্ন: সমতট জনপদটি কোথায় গড়ে উঠেছিল?

উত্তর: নোয়াখালীতে

অনুগ্রহ করে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন। আমাদের ফেসবুক পেইজ এ লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন

Leave a Comment