বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা

জেনে নিন বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে। আসুন এ বিষয়ে আজকে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

সাইবার নিরাপত্তা হলো সিস্টেম, নেটওয়ার্ক, প্রোগ্রাম, ডিভাইস এবং ডেটাকে সাইবার হামলা থেকে রক্ষা করার জন্য প্রযুক্তি, প্রক্রিয়া এবং নিয়ন্ত্রণের প্রয়োগ।

এর লক্ষ্য সাইবার হামলার ঝুঁকি কমানো এবং সিস্টেম, নেটওয়ার্ক এবং প্রযুক্তির অননুমোদিত শোষণ থেকে রক্ষা করা।

সাইবার নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সনের ০৮ অক্টোবর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করেন। যাহা ২০১৮ সনের ৪৬ নং আইন নামে পরিচিত। ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন, বিচার ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়নকল্পে সরকার এই আইন প্রনয়ন করেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫ (১) এর বলা আছে যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে :-

(ক) ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যাহা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক অথবা মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করিবার অভিপ্রায়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করেন বা

(খ) রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণু করিবার, বা বিভ্রান্তি ছড়াইবার, বা তদুদ্দেশ্যে, অপপ্রচার বা মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোনো তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ, বা প্রচার করেন বা করিতে সহায়তা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫ (২) এর বলা আছে যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ০৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ৩,০০,০০০ (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫ (৩) এর বলা আছে যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ০৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০,০০,০০০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

আরো : পর্নোগ্রাফি আইন সম্পর্কে আলোচনা ও বিচার
আরো : যৌন মিলন করার পূর্বে কি করবেন

সাইবার নিরাপত্তার অপরাধগুলোঃ

সাইবার সিকিউরিটি বলতে কম্পিউটারের এ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের নিরাপত্তাকে বোঝায়। সাইবার হ্যাকাররা ভিপিএনের মতো সফটওয়্যার দিয়ে তথ্য চুরি করে অন্যের ক্ষতিসাধন করে থাকে।

কম্পিউটার নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাঝে-মাঝে অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো বিপুল টাকার বিনিময়ে অন্যের কাছে বিক্রি করে দেয়।

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ, ব্যাংক একাউন্ট হ্যাকিং, সাইবার বুলিং ও পাচার, পর্ণগ্রাফি, অনলাইনে নকল পণ্য বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়াটাও সাইবার অপরাধের মধ্যে পড়ে।

অন্যের তথ্য গোপন করে মুক্তিপণ আদায় করে এবং ব্ল্যাকমেইলও করে থাকে। এই ক্ষতিকর সাইবার আক্রমণকে ম্যালওয়্যার বলে।

এ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের ভেতরে যে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্তঃ

  • অপারেশনাল নিরাপত্তা।
  • সেবা আক্রমণ অস্বীকার করা।
  • ম্যালওয়্যার।
  • এসকিউএল ইনজেকশন।
  • ম্যান-ইন-দ্য-মিডল অ্যাটাক।
  • ড্রাইভ-বাই ডাউনলোডস।
  • পাসওয়ার্ড আক্রমণ।
  • সিম কার্ড ও বায়োমেট্রিকের তথ্য চুরি।

বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে সাইবার অপরাধ অনেকটাই কমে এসেছে।

সরকারের পাশাপাশি কাজ করছে কিছু বেসরকারি ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ

সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত সজাগ।

Cyber Crime Investigation এর মাধ্যমে Division, CTTC, DMP সাইবার-সন্ত্রাসবাদ ও সাইবার-অপরাধ টহল,

অপরাধীকে শনাক্ত,মামলার তদন্ত এবং সাইবার প্রতিরোধ করছে।

এছাড়াও Police Cyber Support for Women (PCSW); Cyber Police Centre, CID, BD Police,

Cyber Crime Awareness Foundation (CCAF), Cyber 71, Cyber Security and Support (CSS)
কাজ করছে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে।

সাইবার আক্রমনের শিকার হলেঃ

বাংলাদেশে প্রচলিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইন, ২০০৬ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (DSA), ২০১৮ ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন নেই।

বাংলাদেশ সংবিধান, ১৯৭২ এর ধারা ৪৩ (নাগরিকদের চিঠিপত্র এবং যোগাযোগের গোপনীয়তা রক্ষা করার অধিকার দিয়েছে।

আপনি এই আইনে মামলা করতে পারবেন।আইসিটি আইনের আটটি অধ্যায়ে বলা আছে,

“সাইবার অপরাধের বিচারের জন্য সাইবার ট্রাইব্যুনাল এবং সাইবার আপীল ট্রাইব্যুনাল তৈরি করতে হবে”।

আইনে বলা আছে, “Justice delayed is Justice denied”. তাই দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দেশের আটটি বিভাগে আটটি ট্র্যাইবুন্যাল গঠন করা হয়েছে।

আটটি ট্রাইব্যুনালের নাম হলো- সাইবার ট্রাইব্যুনাল, ঢাকা; সাইবার ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রাম, সাইবার ট্রাইব্যুনাল,

রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনাল খুলনা; সাইবার ট্রাইব্যুনাল বরিশাল, সাইবার ট্রাইব্যুনাল সিলেট, সাইবার ট্রাইব্যুনাল রংপুর এবং সাইবার ট্রাইব্যুনাল ময়মনসিংহ।

আরো : গ্রাফিক্স ডিজাইন করে আয় করার ১২ টি জনপ্রিয় উপায়
আরো : মোবাইল ফোনের সেরা ১০ প্রয়োজনীয়তা

সাইবার অপরাধের শাস্তিঃ

সাইবার অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ৭ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।

এনসিএসআই কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্সে সার্ক দেশগুলোর ভেতরে ৫৯.৭৪ নম্বর পেয়ে ২৭ ধাপ এগিয়ে ৭৩ তম অবস্থানে আছে (NCSI Website)। ই-গর্ভনেন্স একাডেমি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ১৬০টি দেশের মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৮তম।

একই সংস্থার তথ্যমতে গ্লোবাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৩ তম।

আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সের তথ্যমতে,বাংলাদেশ সাইবার সিকিউরিটিতে ১৪৭তম অবস্থানে এবং Network Readiness Index এর মতে,বাংলাদেশ বিশ্বে ১১২তম অবস্থানে রয়েছে।

অনুগ্রহ করে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন। আমাদের ফেসবুক পেইজ এ লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন

Leave a Comment