পার্বত্য জেলা হিসেবে পরিচিত রাঙ্গামাটি জেলা অপার সৌন্দর্যের অধিকারী। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য রাঙ্গামাটি জেলা যেন তালিখার প্রথমেই থাকবে। বিশেষ করে সাজেক ভ্যালির কথা বলতেই হয়। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ দূর দূরান্ত থেকে এই জায়গায় অবসর সময় কাটাতে আসে। রাঙ্গামাটি জেলা কেন বিখ্যাত আসুন খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।
রাঙ্গামাটি জেলা
রাঙ্গামাটি জেলা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত একটি জেলা, যার অবস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে দিকে। চট্টগ্রাম বিভাগের সদর দপ্তর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে রাঙ্গামাটি জেলাটি অবস্থিত। রাঙ্গামাটি বাংলাদেশে এমন একটি জেলা যার সাথে প্রতিবেশী দুটি দেশ ভারত ও মায়ানমার আন্তর্জাতিক সীমানা সংযোগ রয়েছে।
আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের মধ্যে রাঙ্গামাটির অবস্থান সর্বপ্রথমে। সর্ববৃহৎ এই জেলার মোট আয়তন প্রায় ৬১১৬ বর্গ কিলোমিটার। ১৮৬০ সালে পার্বত্য এই জেলাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পূর্বে এই জেলার নাম ছিল কার্পাস মহল। বর্তমানে প্রায় মোট ১০ টি উপজেলায় রাঙ্গামাটিকে বিভক্ত করা হয়েছে।
►► পঞ্চগড় জেলা কেন বিখ্যাত?
►► ফরিদপুর জেলা কেন বিখ্যাত জানেন?
রাঙ্গামাটি জেলার ১০টি বিখ্যাত বা দর্শনীয় স্থান:
- রাজবন বিহার
- কাপ্তাই হ্রদ
- সুবলং ঝরনা
- ঝুলন্ত সেতু
- রাইংখ্যং পুকুর
- রাজা জং বসাক খানের দীঘি ও মসজিদ
- বুদ্ধদের প্যাগোডা
- কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান
- পেদা টিং টিং
- চাকমা বাজার রাজবাড়ি
রাঙ্গামাটি জেলা কেন বিখ্যাত?
পাহাড় পর্বত অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য রাঙ্গামাটি জেলার খ্যাতি সারা দেশ জুড়ে। রাঙ্গামাটি জেলা কেন বিখ্যাত প্রশ্নের উত্তরে সবার প্রথমে জেলাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথাই মাথায় আসবে। সাজেক ভ্যালি, কাপ্তাই হৃদ, বিভিন্ন পাহাড়, পর্বত এবং আঁকাবাঁকা উঁচু নিচু রাস্তাগুলো রাঙ্গামাটি জেলার প্রধান আকর্ষণ। বাংলাদেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র হলো কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, যার অবস্থান চট্টগ্রাম বিভাগের এই রাঙ্গামাটি জেলাতেই। সর্বপ্রথম পাকিস্তান আমলে ১৯৫৩ সালে দেশের অন্যতম ও রাঙামাটি জেলার প্রধান নদী কর্ণফুলীর পানির স্রোতকে কাজে লাগিয়ে জল বিদ্যুৎ উৎপাদন করার উদ্দেশ্যে এই কৃত্রিম বাধের প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল।
পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে বাঁধ তৈরির প্রকল্পটি সমাপ্ত হয়। এই কেন্দ্রটি বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২৩০ মেগাওয়াটের কাছাকাছি। এর মধ্যে রয়েছে ১৬ টি জলকপাট ও একটি স্পিনওয়েল। প্রায় ৭৪৫ ফুট দীর্ঘ এই স্প্রিংওয়েল থেকে অবিরাম পানি পড়ার দৃশ্যটি যেকোনো মানুষকে খুব সহজেই বিমোহিত করবে। রাঙামাটি জেলার সবচেয়ে অন্যতম আকর্ষণ হলো সাজেক ভ্যালি। সাজেক ভ্যালির নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার মনোমুগ্ধকর চিত্র, যেখানে আকাশে সাদা মেঘ যেন তুলোর মত ভেসে বেড়াচ্ছে সারি সারি পাহাড়ের গা ঘেঁষে।
প্রাকৃতিক নিসর্গের পরিপূর্ণ এই জায়গাটি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। সাজেকে রয়েছে কংলাক পাহাড়, যা পর্যটকদের জন্য অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। এছাড়াও কমলক ঝর্ণা, সিকাম তৈসা ঝর্ণার মতো রয়েছে সুন্দর সুন্দর সব জায়গা। সাজেকের সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের রঙিন আলোর খেলার যে অসাধারণ দৃশ্য ফুটে উঠে তা যেকোনো মানুষের মনে মুগ্ধতার ছোঁয়া দিয়ে যাবে। সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও ভ্রমণের জন্য খাগড়াছড়ি জেলার পথ দিয়ে যাওয়া অধিক সহজতর। রাঙ্গামাটির জেলা কেন বিখ্যাত প্রশ্নটির সোজাসাপ্টা উত্তর হচ্ছে সাজেক ভ্যালি।
রাঙ্গামাটির দর্শনীয় স্থানগুলো
পর্যটকদের জন্য রয়েছে সেখানে বিভিন্ন রিসোর্ট হোটেল ও পর্যাপ্ত থাকার ব্যবস্থা এবং সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা। সাজেকের একটি বিখ্যাত যানবাহন হলো চান্দের গাড়ি। এই চান্দের গাড়ির সাহায্য সেখানকার স্থানীয় এলাকা যাতায়াত করা যায়। রাঙ্গামাটি জেলায় কোনো রিকশার ব্যবস্থা নেই। সবকিছু মিলিয়ে সাজেক যেন সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলা নিকেতন। পার্বত্য জেলায় রাঙ্গামাটিতে রয়েছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। এদের মধ্যে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, লুসাই, মণিপুরী অন্যতম। তাদের বিচিত্র জীবনধারা রাঙ্গামাটি জেলার সাংস্কৃতিকে দিয়েছে ভিন্ন ধাঁচের রূপ। বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক হচ্ছে প্রধান তিন উপজাতি চাকমা, মারমা, ত্রিপুরার ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব।
চৈত্র মাসের শেষ দুই দিন ও বৈশাখ মাসের প্রথম তিন দিন পর্যন্ত এই উৎসবের আমেজ বিরাজ করতে থাকে সেই সকল উপজাতি মানুষগুলোর মাঝে। রাঙ্গামাটি জেলার বিখ্যাত খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাম্বো চিকেন, বাঁশ কোরল, মুরগির গুতাইরা, হাঙ্গর, শুটকি ইত্যাদি সব মুখরোচক খাবার। রাঙ্গামাটি জেলাটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ার কারণে এই জেলার জনগণ শিক্ষার আলো থেকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে ছিল। উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য রাঙ্গামাটি জনগোষ্ঠীর সন্তানদের অনেকটাই কষ্ট করতে হতো অন্যান্য জেলার শিক্ষার্থীদের তুলনায়। এই সমস্যা দূরীকরণের উদ্দেশ্য বর্তমান সরকার রাঙ্গামাটিতে প্রতিষ্ঠা করেছে বিভিন্ন স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়।
রাঙ্গামাটি জেলায় প্রতিষ্ঠিত রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, যা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহন ব্যবস্থায় একটি অভাবনীয় পরিবর্তন ও অতুলনীয় সুযোগ। এছাড়াও রয়েছে রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ, রাঙামাটি সরকারি কলেজের মত বিদ্যাপীঠ।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ কাগজ কলের নাম কর্ণফুলী কাগজ কল, যা রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত। রাঙ্গামাটি জেলার সমতাঘাটের কাছে গড়ে উঠেছে সেই স্থানের বিখ্যাত বাজার বনরূপা। এই বাজারের অধিকাংশ ক্রেতা বিক্রেতা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর হয়ে থাকে। নিত্যদিন নৌকা ভর্তি হরেক রকম পণ্য নিয়ে কাপ্তাই হ্রদের সাহায্যে এইখানে ব্যবসা করতে আসে উপজাতিরা। বাজারের প্রধান পণ্য হলো পাহাড়ি সব শাকসবজি।
►► সিলেট কিসের জন্য বিখ্যাত?
►► রাজশাহী কিসের জন্য বিখ্যাত?
রাঙ্গামাটি জেলা নিয়ে প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন: আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের বৃহত্তম জেলা কোনটি?
উত্তর: রাঙ্গামাটি জেলা
প্রশ্ন: বাংলাদেশের কোন জেলাটির সাথে ভারত মায়ানমার দুটি দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে?
উত্তর: রাঙ্গামাটি জেলা
প্রশ্ন: সাজেক ভ্যালি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: রাঙ্গামাটি জেলা
প্রশ্ন: কোন জেলাটিতে জুম চাষ করা হয়?
উত্তর: রাঙ্গামাটি জেলায়জুম চাষ করা হয়
প্রশ্ন: রাঙ্গামাটি জেলায় কয়টি সংসদীয় আসন রয়েছে?
উত্তর: একটি সংসদীয় আসন রয়েছে
প্রশ্ন: রাঙ্গামাটি জেলায় কয়টি উপজাতি গোষ্ঠী বসবাস করে?
উত্তর: ১১ টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বসবাস করে
প্রশ্ন: রাঙ্গামাটি জেলা কেন বিখ্যাত?
উত্তর: সাজেক ভ্যালি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক নিদর্শনের জন্য