রমজানে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় কি?

রমজানে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় কি? তা জেনে নিন (Health protection during Ramadan)। বছর ঘুরে আবার এলো পবিত্র মাহে রমজান।

ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা প্রতিবছর এ মাসটির জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকেন।

পবিত্র রমজান মাসে ছোট-বড় থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষ প্রায় সকল মুমিন মুসলমান রোজা রাখেন।

রমজান মাসে আমাদের দৈনন্দিন রুটিন অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে যায়। খাবারের, ঘুমের ও ব্যায়ামের সময় অনেক পরিবর্তিত হয়।

[ads1]

রমজান মাস ব্যতীত সাধারণত আমরা প্রতিদিন সকাল, দুপুর, রাত এই রুটিন মাফিক তিন বেলা খাবার খাই।

কিন্তু রমজান মাসে শুধু সন্ধ্যা থেকে ভোর এই সময়ের মধ্যেই আমরা খাবার খেয়ে থাকি।

রমজান মাসে খাদ্যাভ্যাসের এই পরিবর্তনের সাথে আমরা অনেকেই খাপ-খাওয়াতে পারিনা অথবা কখন কি খাওয়া উচিত সেই ব্যাপারে উদাসীন থাকি।

আমাদের এই উদাসীনতা পরিহার করা উচিত। যেহেতু আমরা সারাদিন কিছু না খেয়ে রোজা রাখি, তাই রমজান মাসে খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে একটু বেশি সচেতন হতে হবে।

মনে রাখতে হবে, রমজান মাস যে কেবল আমাদের আত্মার পরিশুদ্ধি আনে তা নয়, খাদ্যাভ্যাসে প্রয়োজনীয় সংযমও এই মাসের অন্যতম শিক্ষা।

পবিত্র রমজান মাসে আত্ম-শুদ্ধি ও পাপ-কলঙ্ক থেকে মুক্তির পাশাপাশি রোজা রাখার বেশ কিছু উপকারিতাও রয়েছে।

[ads1]

►► রোজার মাসের ডায়েট চার্ট 
►► ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে যে সব খাবার

এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হজমক্রিয়ায় জনিত সমস্যা দূর হয়, দেহের টক্সিন দূর হয়, কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ভোজন বিলাস কমায়, ফ্যাট বা চ‌র্বি হ্রাস পায়, ডায়াবেটিক প্রতিরোধে সহায়তা করে, এলার্জি এবং চর্মরোগ কমাতে সাহায্য করে, রক্তচাপ কমায়, বহুমূত্র রোগ সারাতে সাহায্য করে, নেশাদ্রব্য হতে মুক্তি পাওয়া যায়।

এছাড়া রােজা রাখলে শরীরের বিপাক ক্রিয়া কমে যায়, শরীরের সঞ্চিত শক্তি ক্ষয় হয়ে চর্বি ভাঙ্গতে থাকে।

একারণে পুরো রমজান মাস জুড়ে সুস্থ- সবল থাকতে শরীরের যত্ন নেয়া আবশ্যক।

[ads1]

পবিত্র রমজানে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় কি? – 

খাদ্য নির্বাচন করা

অনেক রোজাদার আছে যারা ইফতার ও সেহরিতে আহারের সময় অপরিকল্পিতভাবে খাদ্য নির্বাচন করেন।

ফলে তারা অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যার মধ্যে পড়েন।

তাই এসময় দৈনিক চাহিদার প্রতি লক্ষ রেখেই যথাযথ পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য নির্বাচন করা আবশ্যক।

পানি পান করা

রোজার মধ্যে ইফতার ও সেহরিতে বেশি বেশি পানি পান করা খুবই জরুরী।

সারাদিন যেহেতু আমরা পানি পান করা থেকে বিরত থাকি, দে আমাদের জন্রয খুবই গুরুত্বপূর্ণ জরুলি পানিশূন্যতা দূর করতে ইফতার ও সেহরিতে পর্যাপ্ত পানি এবং পানীয় খাদ্যদ্রব্য খাওয়া প্রয়োজন।

খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাবেন, যা আপনার হজমে সহায়ক হবে।

[ads1]

ইফতার ও সেহরিতে আট থেকে দশ গ্লাস পানি পান করুন। এতে গরমে রোজা রাখতে সহজ হয় এবং হজমে সুবিধা হয়।

শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া

ইফতার ও সেহরিতে আঁশযুক্ত খাবার রাখা উচিত। আঁশযুক্ত খাবার হজম হতে দেরি হয়,তাই ক্ষুধা কম লাগে।

ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া রমজানে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করার জন্য আঁশযুক্ত খাবার খুব দরকার।

যেমন: ঢেঁকি ছাটা চাল, সবুজ মটরশুঁটি, ছোলা, সবুজ শাক যেমন ডাঁটাশাক, পালং শাক, খোসাসহ ভক্ষণ উপযোগী ফল যেমন পেয়ারা, আপেল, নাশপাতি এবং শুকনা ফল খোরমা, খেজুর ইত্যাদি।

[ads1]

স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া

শরীর সুস্থ রাখার জন্য সেহরি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মনে রাখতে হবে, সেহরির খাবার মুখরোচক, সহজপাচ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া প্রয়োজন।

আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া

সেহরিতে শাকসবজি এবং অন্যান্য শস্য জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খাবেন।

সেহরি না খেয়ে কখনোই রােজা রাখবেন না। সেহরি সাধারণ সকালের নাস্তার কাজ করে।

[ads1]

সেহরিতে পরিমাণ মত মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া জরুরী। বয়স অনুপাতে দুধ, পনির ও দই জাতীয় খাবার খাবেন।

শর্করা জাতীয় খাবার

সেহরিতে এমন খাবার গুলোকে প্রাধান্য দিন যে খাবারগুলো আপনার সারা দিনের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারে।

সেহরির সময় অতিরিক্ত আহার করবেন না। অতিরিক্ত খাবার শরীরকে ভারী করে এবং পরবর্তীকালে ক্ষুধাও বেশি লাগে। খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত শর্করা জাতীয় খাবার রাখুন।

ভাজা-পােড়া খাবার খাওয়া

আমাদের দেশের খুব প্রচলিত একটি ব্যাপার হচ্ছে ইফতারে প্রচুর ভাজাপোড়া খাওয়া।

সারাদিন রোজা রাখার পর যেটা শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়। ইফতারে অতিরিক্ত ভাজা পােড়া খাবার খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন।

ইফতারের জন্য তৈরি খাবারে যত কম তেল ও মশলা ব্যবহার করা যায় তত ভালো।

[ads1]

এছাড়া প্রচলিত খাবারের বাইরে কিছু মজাদার কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

►► গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির উপায়
►► নারীদের প্রজনন ক্ষমতা বাড়ানো ১৫ যোগ আসন

দই-চিড়া খাওয়া

ইফতারে দই-চিড়া খেতে পারেন। দই-চিড়া পেট ঠাণ্ডা রাখে এবং দ্রুত হজমে সাহায্য করে।

চিড়ায় রয়েছে এসিডিটি কমানোর ক্ষমতা আর দই খুব সহজেই পরিপাক হয়।

এছাড়া মাঝে মধ্যে ফিরনি অথবা দুধে ভিজানো চিড়া, সঙ্গে হালকা চিনি ও পাকা আমের টুকরো ইফতারে বৈচিত্র্য আনতে পারে।

[ads1]

কোমল পানীয় পান করা

ইফতারে এনার্জি ড্রিংক, কার্বনেটেড ড্রিংক এবং সোডাজাতীয় পানীয় পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

তাই এসব কোমল পানীয় এর পরিবর্তে প্রচুর পরিমানে শরবত এবং পানি পান করুন।

বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস খাওয়া যেতে পারে।

লেবু, আম, তরমুজ এর শরবত, ডাবের পানি এ ক্ষেত্রে পছন্দের তালিকায় প্রথমে রাখতে পারেন।

অথবা এক গ্লাস দুধ দিয়ে শুরু করতে পারেন আপনার ইফতার।

ইফতারে বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী ফলমূল খেতে পারেন, এতে সারাদিনের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ হবে।

[ads1]

মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া

ইফতারে অতিরিক্ত মিষ্টি বা চর্বি জাতীয় খাবার শরীরের ক্ষতি করতে পারে।

তাই এ ধরনের খাবার বর্জন করা ভালো।

তেহারি- হালিম খাওয়া

ইফতারে তেহারি, হালিম না খাওয়াই ভালো। কারণ, এতে বদহজম হতে পারে।

[ads1]

রুচি পরিবর্তনের জন্য অল্প পরিমাণে রাসায়নিক মুক্ত জিলাপি খেতে পারেন।

সুষম খাদ্য খাওয়া

রাতের খাবারের ক্ষেত্রে সুষম খাদ্য তালিকা অনুসরণ করুন।

অতিরিক্ত খাবার বর্জন করুন এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

[ads1]

রুটিন করে খাওয়া

রমজান মাসে সারাদিন কি করবেন তার একটি আলাদা রুটিন করতে পারেন।

ইফতার শেষে মাগরিবের নামাজ পড়ে হালকা ব্যায়াম যেমন: ১৫-২০ মিনিট হাটার অভ্যাস করতে পারেন।

পর্যাপ্ত ঘুমানোর জন্য আপনার ঘুমের একটা নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে পারেন।

[ads1]

দুর্বলতা অনুভব করা

রোজা রেখে আকষ্মিক কোন অসুস্থতা যেমন: অতিমাত্রায় দুর্বলতা, মাথা ঘোরা ইত্যাদি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন অথবা ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করুন।

অসুস্থতা অনুভাব করা

যারা অ্যাজমা, ডায়াবেটিক, পেপটিক আলসার ও উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন অসুখ ভুগছেন তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন বিধি পুন:নির্ধারন করুন।

গুরুতর অসুস্থতায় রোজা ভঙ্গের প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন অথবা শরীয়তের বিধান অনুসরণ করুন।

[ads1]

ঔষধ ব্যবহার করা

রোজাদাররা অসুস্থ অবস্থায় চোখ, নাক ও কানের ড্রপ, ক্রিম, অয়েনমেন্ট, মেডিকেটেড প্লাস্টার যা চামড়ার উপরে লাগানো হয়।

সব ধরনের ইনজেকশন যা দেয়া হয় চামড়ায়, মাংসে, শিরায় (খাবারের উদ্দেশ্য ছাড়া)।

বুকে ব্যথার জন্য জিহবার নীচে নাইট্রোগ্লিসারিন ট্যাবলেট। মাউথওয়াশ, গার্গল, মুখে স্প্রে, ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন।

[ads1]

ইসলামিক শরীয়ত মোতাবেক এসব ঔষধ ব্যবহার করা জায়েজ, এতে রোজা নষ্ট হয় না।

রক্তদান করা

রোজাবস্থায় কেউ রক্ত নিলে বা নিজ শরীর থেকে কাউকে রক্তদান করলে রোজা নষ্ট হয় না।

কারণ রক্ত দেয়ার কারণে কোনো বস্তু দেহের ভেতর ঢুকে না আর রক্ত শরীরের উল্লেখযোগ্য চার নালি দিয়েও প্রবেশ করে না, বরং শরীরের অন্যান্য ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে প্রবেশ করে।

তাই রোজাবস্থায় কারও শরীরে রক্ত দান করলে বা নিজে রক্ত গ্রহণ করলে রোজা নষ্ট হবে না।

[ads1]

তবে খুব বেশি পরিমাণে রক্ত দেয়া যাবে না, এতে শরীরে দুর্বলতা আসে, যা ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক মাকরূহ।

►► এলাচের অবিশ্বাস্য উপকারিতা
►► নিয়মিত বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

বদ অভ্যাস

যাঁদের চা, কফি, সিগারেট, মদ প্রভৃতির বদ অভ্যাস আছে, তারা এগুলো কমিয়ে আনতে চেষ্টা করুন। ধূমপান ত্যাগ করুন।

[ads1]

শেষ কথা

মুসলমানদের জন্য এই রমজান মাসে একটা বরকতময় মাস। এই মাসে সব মুসলমানেরাই রোজা ধারণ করেন, শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকতে পারে।

সমস্যাগুলো উপেক্ষা করেও সবাই রোজা ধারণ করে থাকেন। আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে রমজানে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় কি? এবং কোন খাবারগুলো খাবেন সে বিষয়গুলো সম্পর্কে।

আপনি যদি নিজের শরীর ফিট রাখতে চান রমজান মাসের নিজের শরীরকে হারাতে না চান, তাহলে এই খাবারগুলো আপনার জন্য পরিপূর্ণ হতে পারে।

[ads1]

অনুগ্রহ করে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন।  আমাদের ফেসবুক পেইজ এ লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন

Leave a Comment